সিরাজুর রহমানঃ রাশিয়ার সাথে চলমান সামরিক উত্তেজনার মুখে ইউক্রেন সাম্প্রতিক সময়ে অবসরে পাঠিয়ে দেয়া সভিয়েত আমলের এস-১২৫ মিডিয়াম রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আবারো সার্ভিসে আনতে শুরু করেছে। মুলত রাশিয়ার বড় ধরণের সামরিক আগ্রাসনের আশাঙ্খায় ইউক্রেন পুনরায় তাদের অস্ত্র ভাণ্ডারে সংরক্ষিত থাকা পুরনো আমলের এস-১২৫ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম সার্ভিসে আনতে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা এস-১২৫-২ডি পিচোরা (Pechora) ভেরিয়েন্টের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে এস-১২৫ এর সবচেয়ে আপগ্রেডেড ভার্সন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এর মিসাইলের রেঞ্জ বৃদ্ধি করে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত করা হয়েছে। তাছাড়া এই ভেরিয়েন্টে আধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার এবং কাউন্টারমেজারস সিস্টেম ইনস্টল করা আছে। সলিড ফুয়েল রকেট মোটর চালিত এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের ৫ভি২৪ (ভি-৬০০) মিসাইলের গতি ৩ থেকে ৩.৫ ম্যাক। এর ওয়ারহেডের ওজন ৬০ কেজি এবং এটি ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দুরুত্ব পর্যন্ত আগত যে কোন যুদ্ধবিমান, বোম্বার, ড্রোন, মিসাইল ইন্টারসেপ্ট করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে।
সভিয়েত আমলের এস-১২৫ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ডিজাইন করা হয় ১৯৫০ সালে এবং ১৯৬১ সালে প্রথম বার সভিয়েত এয়ার ডিফেন্স ফোর্সের হাতে তুলে দেয়া হয়। আর সেই থেকে ৬০ বছর ধরে আজো পর্যন্ত বিশ্বের বেশ কিছু দেশের সামরিক বাহিনীতে অত্যন্ত সফলতার সাথেই সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।
২০১৮ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় প্রায় শতাধিক টমাহক ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করলে সিরিয়ার আসাদ বাহিনী তাদের হাতে থাকা পুরনো সভিয়েত আমলের এস-১২৫ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে প্রায় দুই ডজনের কাছাকাছি মার্কিন টমাহক ক্রুজ মিসাইল ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। অথচ ২০১৬ সালে থেকে সিরিয়ায় কোন এক গোপন সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার এস-৪০০ এডভান্স এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও তা কোন এক অজানা কারণে ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে, ১৭ই মার্চ, ২০১৫ সালে সিরিয়ায় সামরিক বাহিনীর হাতে থাকা এস-১২৫ দিয়ে একটি মার্কিন প্রিডিয়েটর এমকিউ-১ শুডডাউন হয়। আর প্রতিনিয়ত সিরিয়ার আসাদ বাহিনী ইসরাইলের মিসাইল ইন্টারসেপ্ট করে যাচ্ছে তাদের হাতে থাকা সভিয়েত আমলের এস-১২৫/২০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে।
তাছাড়া আরব-ইসরাইল যুদ্ধ চলাকালে এই এস-১২৫ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে প্রায় ৯টি ইসরাইলী এফ-৪ই ফ্যান্টম জেট ফাইটার (১৯৭০ সালে ৬টি এবং ১৯৭৩ সালে ৩টি), ৩৫টি মিসাইল এবং ভূলবশত মিশরের একটি জেট ফাইটার শুডডাউন করে। আবার ১৯৮০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে এঙ্গোলার যুদ্ধ চলাকালে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি মিরেজ এফ-১ জেট ফাইটার এস-১২৫ সিস্টেম দিয়ে সুডডাউন করে এঙ্গোলা এয়ার ফোর্স।
১৯৯২-৯৫ সালের দিকে বসনিয়ায় সামরিক আগ্রাসন চলাকালে সার্বিয়ার আকাশে একটি মার্কিন এফ-১১৭ নাইটহক স্টিলথ যুদ্ধবিমান এবং একটি এফ-১৬ জেট ফাইটার এই পুরনো এস-১২৫ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে শুডডাউন করে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। তাছাড়া এই সিস্টেম দিয়ে ১৯৯১ সালে চলা উপসাগরীয় যুদ্ধে বেশ কিছু মার্কিন এফ-১৬ এই মিসাইল সিস্টেমের আঘাতে ধ্বংস হয়। আবার সভিয়েত আমলের এস-১২৫ ডিফেন্স সিস্টেমের কিলিং রেকর্ডের তালিকায় মার্কিন হেভী বি-৫২ বোম্বার পর্যন্ত রয়েছে।