কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বিশ্বটাকে নিয়ন্ত্রন করছে মুলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে নিয়ন্ত্রনও হয় বিভিন্ন কলা কৌশলে।
এমন কি দেশটি নোবেল কমিটিকেও নিয়ন্ত্রন করে থাকে। নোবেল বিজয়ী নির্দ্ধারনও দেশটির স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা প্রধান্য দিয়েই সাধারনত হয়ে থাকে। যে কারনে নোবেল পুরস্কারের যে গৌরব বা মর্যাদা ছিল তা ধীরে ধীরে অনেকটা ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছে।
আবার এ কারনে বিশ্বের কোন দেশের নাগরিকই দেশটিকে শুভ শক্তি মনে করে না। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের ডঃ মোঃ ইউনুছ সাহেব এবং গ্রামীন ব্যংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। একটি ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাক্তিটির আজীবনের গবেষনার বিষয় অর্থনীতি। কোন সন্দেহ নাই তাঁর গবেষনা লব্ধ ক্ষুদ্র ঋন এবং সামাজিক ব্যবসা প্রকল্প বিশ্বব্যাপি সমাদৃত হয়েছে।
সেই হিসাবে তিনি অর্থনীতিতে নোবেল অর্জন করলে কারও মনেই নোবেল কমিটি নিয়ে বিরুপ ধারনা আসত না। যদিও সে সময়ে বিশ্বব্যাপি পক্ষে বিপক্ষে অনেক লেখালেখি হয়েছিল।
গত বছর অর্থ্যৎ ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে তিন জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার মধ্যে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নামের একজন বাঙালী এবং তাঁর ফরাসী স্ত্রী ছিলেন। একজন বাঙালী নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন শুনে অন্য অনেক বাঙালীর মত খুশীতে আত্মহারা হয়ে আমি ফেসবুকে অভিনন্দন জানিয়ে ছিলাম।
পরবর্তীতে পত্র পত্রিকায় তাঁর সাক্ষাৎকার পড়ে তাঁর দুইটা মন্তব্য আমাকে আহত করেছিল বলে আমি আমার অভিনন্দন টাইম লাইন থেকে মুছে দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন উন্নয়ন কর্মকান্ডে ঘুষ দুর্নীতি কোন সমস্যা নয় এবং তা উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্থ করতে পারেনা। অন্যটি হচ্ছে বিশ্বে ধনী এবং গরীব উভয়েই আদর পাচ্ছেন। এতে আমার মনে হয়েছিল তিনি অর্থ লুটেরাদের প্রতিনিধি হিসাবে ঘুষ দুর্নীতিকে জায়েজ এবং ধনী ও গরিবী ব্যবস্থাটাকে বহাল রাখার পক্ষে উকালতি করছেন।
এ ধরনের মন্তব্য বিশ্ব ব্যাপি ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। অন্য দিকে তিনি যে স্ত্রীর সংগে নিয়ে পুরস্কার অর্জন করেছিলেন মুলত ফরাসি মেয়েটি তাঁর ছাত্রী ছিলেন। ভারতে গবেষনা করতে এসে বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের অনৈতিক সম্পর্কের জেরে মেয়েটি গর্ভবতী হন এবং তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য হন।
এ কারনে তাঁর প্রথমা স্ত্রী বাঙালী মেয়ে এবং একজন প্রথিতযশা অধ্যাপিকা তাঁকে ছেড়ে সন্তান সহ ইংল্যান্ডে চলে যান। এতে আমার মনে হয়েছে লুটেরা ধনিক শ্রেনীর প্রতিভুদের স্বার্থ রক্ষার স্বার্থেই নীতিহীন এবং চরিত্রহীন এই ব্যাক্তিটিকে নোবেল কমিটি নীতি নৈতিকতা এবং যাচাই বাছাইয়ের নিয়ম শৃংখলা উপেক্ষা করেই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিলেন।
নোবেল কমিটির এ ধরনের ত্রুটিপুর্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক অলোচনা করা যাবে। অনেকেরই ধারনা ঈশ্বরদীতেও এই রকম একটি বোদ্ধা সংগঠন আছে যারা কোন সংজ্ঞা কিংবা যাচাই বাছাইয়ের নিয়ম নীতি অনুসরন না করেই গুনীজন, রত্নগর্ভা মা, সমাজ সেবক এবং কৃতি সন্তান নির্দ্ধারন করে পুরস্কার এবং সম্বর্ধনা দিয়ে থাকেন।
আবার অনেককে ফেসবুকে অথবা পত্রিকায় লেখালেখি করে সমাজে মহান ব্যাক্তি হিসাবে উপস্থাপনের চেষ্টাও করে থাকেন। অবশ্য প্রতিবারেই এ সব বিষয়ে লেখালেখি করেছি। সে সময় একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাক্তি আমাকে বলেছিলেন, ভাই এ সব লেখালেখি করে লাভ নাই। কারন ঈশ্বরদীতে একটা সিন্ডিকেট আছে যারা ব্যবসায়িক দৃষ্টিভংগী নিয়ে কাজটি করে থাকেন।
ঈশ্বরদীর মৌলিক সমস্যা বা উন্নয়ন নিয়ে কোন পরিকল্পনা তাদের মাথায় আসে না। সম্ভাব্য কোন ব্যাক্তি এ ধরনের প্রচার পেতে চাইলে অনুষ্ঠানের নামে ঐ সিন্ডিকেটকে কিছু অর্থ ধরিয়ে দেয়। তারা কিয়দংশ দিয়ে অনুষ্ঠান করে বাকীটা নিজেদের জীবন জীবিকায় ব্যবহার করেন।
সুতরাং তাদের কে যতই জ্ঞান দেন তারা তা নিবে না কারন তাতে তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। পরে আমিও ব্যাপারটা বুঝে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। আজকে একটি পত্রিকার কলাম পড়ে অনুমান করলাম আসলেও ঐ সিন্ডিকেটের শিকড় অনেক গভীরে।
লেখক : শমিত জামান, সাংবাদিক কলামিস্ট