লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের গর্বের ও অহংকারের বিষয়। বর্তমান সরকার প্রতিনিয়ত আমাদের সেই অর্জন, আমাদের গর্বের, অহংকারের গৌরবের স্বাধীনতার চেতনা এবং সংবিধানের পবিত্রতাকে লঙ্ঘন করছে, অপমান করছে।
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ মানুষের চিন্তা-চেতনা, মতপ্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছিল।
কিন্তু সেই মৌলিক অধিকার, চিন্তা-চেতনার অধিকার, মতপ্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতাকে বৈষম্যমূলকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অপমান করা হচ্ছে।আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি- এই আইন কালো আইন। এই আইন সংবিধানবিরোধী এবং এই আইন জনগণের কণ্ঠ রোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই আইন করেছে।
শুক্রবার দুপুরে ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
আপনাদের সামনে বিএনপির পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা হরণের সরকারি নীলনকশার চিত্র তুলে ধরতে চাই।
২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর রয়েছে। আর্টিকল ১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২২ জুন পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১০৮টি। এসব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন।
সাংবাদিক ৪৪ জন আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন। এই হিসাবে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ আসামিই হলেন সাংবাদিক। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ২৪, মে-তে ৩১ এবং জুন মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। আর আর্টিকল ১৯ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি। ২০১৮ সালে ডিএসএ এবং আইসিটি অ্যাক্ট মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৭১টি।
২০১৯ সালে এক বছরে মোট মামলা হয়েছে ৬৩টি। আর সেখানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই মামলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি, ১০৮টি।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। প্রায় সবগুলো মামলার কমন অভিযোগ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের জন্য তথাকথিত সম্মানহানি বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধ।
অভিযোগ বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন, সরকারি দলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে মামলা করা হয়েছে। মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠরুদ্ধ, বিবেকের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত। যা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।
ফখরুল বলেন, অনেক মামলার খবরই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় না। তাই মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তার খোঁজ পায় না। ফলে তাদের সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।
২০১৯ সালে মোট মামলা হয়েছে এক হাজার ১৮৯টি। এর মধ্যে থানায় ৭২১টি এবং আদালতে ৪৬৮টি। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫৫০টির মতো মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বিচারাধীন মামলা আছে এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯৫৫টি। এর মধ্যে থানায় দায়ের করা এক হাজার ৬৬৮টি এবং আদালতে ২৮৭টি। ৫৫টি মামলা হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে।
ডিজিটাল এবং তার আগের আইসিটি আইনের সব মামলার হিসাব আছে সেখানে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে মোট ৩২৭টি। জানুয়ারি মাসে মোট মামলা হয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে থানায় ৪১টি এবং আদালতে ৪৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসের ১১৯টি মামলার মধ্যে থানায় ৯৫টি, আদালতে ৩৪টি। আর মার্চ মাসে মামলা হয়েছে ১২২টি। এর মধ্যে থানায় ৭৫টি ও আদালতে ৩৭টি।
নগ্ন শিকার হয়েছেন অন্যদের মধ্যে ৮৫ বৎসরের বেশি বয়সের সম্পাদক জনাব আসাদউদ্দিন, সাংবাদিক কাজল ফকির, নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল, ব্যবসায়ীসহ অজস্র নিরীহ নাগরিক। আমরা অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।