বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় তৎকালীন বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানের গুরু চীন, সৌদি আরব সহ প্রায় সকল ইসলামিক দেশগুলো মেনে নিতে পারে নি! কারণ দ্বিজাতিতত্ত্বের মত অসার ও তীব্র সাম্প্রদায়িক তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়৷ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য হিসেবে ‘৪৭ এ শেখ মুজিব নিজেও পাকিস্তান আন্দোলনে ছাত্রনেতা হিসেবে যোগ দিলেও তাঁর স্বপ্ন ছিল কোলকাতা, আসাম ও পূর্ববঙ্গ নিয়ে বাংলা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ৪৭ এর ১৪ই অগাস্ট পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই প. পাকিস্তান ষড়যন্ত্রের এক আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়। ৭১ এর পর বাংলাদেশ ও মুজিবকে ঘিরে তাদের সেই ষড়যন্ত্র আবর্তিত হতে থাকে।
১৫ অগাস্ট ঘটানোর জন্য পরিস্থিতিও তৈরি করা হয় বেশ পরিকল্পিতভাবেই। ৭৪ এ দুর্ভিক্ষ ঘটানো, শেখ মুজিবের ছেলেদের নিয়ে গল্পকাহিনী তৈরী করে ছড়িয়ে দেয়াসহ যাবতীয় কাজ সুচারুভাবে করা হয়৷ এতে যোগ হয় রক্ষীবাহিনীর নানা অপকর্ম ও জাসদের তান্ডব।
৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসকরা তাদের সবচে কার্যকর ফর্মুলা হিসেবে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। বঙ্গবন্ধু ধর্মীয় দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। সামরিক শাসকরা তাদের পুনর্বাসিত করার মধ্য দিয়ে ৭১ এর মূল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতাকেই নস্যাৎ করে। তারই ধারাবাহিকতা আজ এমন করে দেশকে খেয়েছে যে তাঁরই দল তাঁরই মৃত্যু দিবসে শোক পালনে সেই ধর্মকেই ব্যবহার করে। অথচ বঙ্গবন্ধু কতই না উন্নত চিন্তার স্মার্ট মানুষ ছিলেন যে সেই ৪৮ এ আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম কথাটা বাদ দেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্রই হতে পারে অত্যাধুনিক রাষ্ট্র, ধর্মভিত্তিক নয়! কিন্তু আজ মানুষের মগজ কুরে খায় আলখাল্লাধারী পশ্চাদপন্থীরা!
সুতরাং ৭৫ এ ঘাতকেরা কেবল জাতির জনককেই হত্যা করেনি, তারা জাতির মূল মন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেও কবর দিয়ে দেয়। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অনুরাগীরা আজ তাঁর জন্য শোক করার পাশাপাশি ২৩ বছর সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি জাতিকে সাথে নিয়ে যেসকল আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেগুলোকে মৃতপ্রায় অবস্থা হতে পুনর্জাগরণের শপথ নেবেন সেই প্রত্যাশা।
পিতা হত্যার শোক
শক্তিতে পরিণত হোক
লেখক: শমিত জামান, সাংবাদিক কলামিস্ট।