সাম্প্রতিক শিরোনাম

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে হারানোর দিন: ‘শোক হোক স্বপ্ন পূরণের শক্তি’

যার ডাকে প্রশিক্ষিত হানাদারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলার মানুষ, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী ‍যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সেই বাঙালিকে হারানোর দিনটি ফিরে এলো শোকের আবহ নিয়ে।


আজ থেকে ৪৫ বছর আগের এই রাতে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী, উচ্ছৃঙ্খল সদস্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকেই শুধু হত্যা করেনি, তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। ইতিহাসের জঘন্যতম সেই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুধু স্বাধীনতার স্থপতিকেই হারায়নি বাঙালি, দীর্ঘকালের শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে জাতীয় জীবনের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল তাও উল্টো পথে যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আবার জেঁকে বসে এদেশের বুকে, যে স্বপ্ন-চেতনায় স্বাধীন হয়ে ছিল দেশ তাও হয় অবদমিত।


দুই দশকের বেশি সময় পর ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত সেই বঙ্গবন্ধুই থেকে যান অগোচরে, উপেক্ষিত থেকে যায় তার নীতি-আদর্শ। বিকৃত করা হয় ইতিহাস।
আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ১৫ অগাস্টকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাকে স্মরণ করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের পাঁচ বছরে আবারও বাতিল করা হয় সেই শোকের দিবস।
তবে তাতে আটকে যায়নি বঙ্গবন্ধুর প্রতি এদেশের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। বরং ঘাতকদের প্রতি প্রকাশ হয়েছে ঘৃণা আর অভিশাপ:
“আমাকে করেছে বাধ্য যারা আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে যেতে।

ভাসতে নদীতে আর বনেবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে, অভিশাপ দিচ্ছি, আমি সেই সব দজ্জালদের। অভিশাপ দিচ্ছি ওরা চিরদিন বিশীর্ণ গলায় নিয়ত বেড়াক বয়ে গলিত নাছোড় মৃতদেহ।” ঘাতকদের প্রতি কবি শামসুর রাহমানের এই অভিশাপ যেমন উচ্চারিত হয়েছে, তেমনি এই দিনে তরুণ কবি স্নিগ্ধা বাউলের মতো কোটি কোটি বাঙালির কাছে এখনও ভেসে ওঠে প্রিয় নেতার মুখ। “প্রিয় মানব- প্রতি আগস্টে এখনো শরত নামে ঝকঝকে আকাশে পতপত উড়ে পতাকার মতো তোমার মুখ।”

সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।বেঁচে থাকলে গত ১৭ মার্চ ১০০ বছর পূর্ণ হত বঙ্গবন্ধুর। আগামী বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উৎযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মাঝের এই একটি বছর বাংলাদেশ পালন করছে মুজিববর্ষ হিসেবে।।জাতির পিতাকে হারানোর এই দিনে সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করে অন্যান্য বছর। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার দিবসটি এসেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখেই ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।


সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে।
একই সময় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হবে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পাশাপাশি তোলা হয় কালো পতাকা।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতাসহ সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, “বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ অগাস্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।… এমন ঘটনা কেবল দেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল।


“ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তার নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতার নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।” বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আসুন, জাতীয় শোক দিবসে আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করি এবং তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আত্মনিয়োগ করি।” বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী চক্রের যে কোনো অপতৎপরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। মুজিববর্ষে জাতির পিতার আত্মত্যাগের মহিমা ও আদর্শ আমাদের কর্মের মাধ্যমে প্রতিফলিত হোক।” বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
“আসুন, আমরা জাতির পিতা হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করি।… সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। জাতীয় শোক দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ফান্ড আওয়ামী ঘরানার দুই ইয়েলো...

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড" বা অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি...

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...