করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কর্মহীন মানুষের সহায়তায় গঠিত ইউএনওর ত্রাণ তহবিলে ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে আলোচনায় আসেন নাজিম উদ্দিন। নিজের ভাঙা ঘর মেরামতের জন্য ভিক্ষা করে দুই বছর ধরে জমিয়েছিলেন টাকাগুলো।
এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহের এ ঘটনাটি নজর কেড়েছিল প্রধানমন্ত্রীর। দরিদ্র হলেও মহান এই দাতা ভিক্ষুককে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরকারি জমিতে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই বাড়িটিই আজ জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব নাজিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করেন।
ভিক্ষা করে জমানো অর্থ দান করে আলোচিত হয়েছিলেন শেরপুরের দাতা ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। তাঁর এমন মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাজিমদ্দিনকে জমিসহ পাকা বাড়ি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এপ্রিলের এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় শেরপুর জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন খাসজমি বন্দোবস্তসহ সেই পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছেন। আজ রবিবার দুপুরে নতুন ঘরের চাবি নাজিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
উপহার পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত নাজিমুদ্দিন ও তাঁর পরিবার। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামন করেছেন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফায়েল আহমেদ, ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম ওয়ারেজ নাইম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিন কক্ষের বিশাল পাকা বাড়ি। ওপরে টিনের চাল। সঙ্গে পাকা রান্নাঘর এবং আলাদা পাকা বাথরুম। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাঁর বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। সব মিলিয়ে একটি পরিপাটি আবাসস্থল প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন নাজিমউদ্দিন।
১৫ শতক খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। বাড়ির পাশেই গান্ধীগাঁও বাজারে পাকা দোকানঘর করে দেওয়া হয়েছে। যাতে নাজিমউদ্দিনকে আর ভিক্ষাবৃত্তি করতে না হয়। সেই দোকানঘরটিও এদিন হস্তান্তর করা হয়। নাজিমউদ্দিনের ঘটনাটি দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে তাঁর জন্য সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক বলেন, নাজিম উদ্দিন সাধারণ ভিক্ষুক হয়েও অসাধারণ কাজ করেছেন। তিনি করোনা তহবিলে নিজের ঘর মেরামতের জমানো অর্থ দান করে যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে আমরা আজ জমিসহ নতুন বাড়ি তাঁর কাছে হস্তান্তর করলাম। তাঁর আয়ের জন্য একটি দোকানও করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান একটি ইজিবাইকও দিয়েছেন। আশা করি তিনি এখন থেকে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে শেরপুরবাসী কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
অসহায় নাজিম উদ্দিনের দানের ঘটনাটি এ যুগে বিরল। যিনি তিল তিল করে কুঁড়ে ঘর মেরামত করার জন্য ১০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। অথচ সেই টাকা দান করলেন করোনা তহবিলে।
প্রায় দুই বছর ধরে ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘর মেরামত করার জন্য তিনি ওই টাকা জমিয়েছিলেন। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর লকডাউন ঘোষণা করা হলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায়। গরিব মানুষকে সাহায্য করার জন্য ভিক্ষুক নাজিম তার বহু কষ্টে জমানো টাকা ঝিনাইগাতীর ইউএনও’র হাতে তুলে দেন।
গ্রামের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সদস্য মিলন কোচ বলেন, নাজিম কাহার (কাকা) দানের প্রতিদানে একজন ভিক্ষুককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে ঘর দান করলেন, সহানুভূতি দেখাইলেন এজন্য আমরা গ্রামের মানুষ খুব খুশি হইছি। আমার বয়সে এইরকম প্রধানমন্ত্রী দেহি নাই। যার মন ভিক্ষুকের জন্যও কাঁন্দে।