মহামারী সত্ত্বেও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্য চমৎকার সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনা দিয়ে আসছে। তাই কাতার বাংলাদেশের দিকে নজর দিতে পারে।
বাংলাদেশ ফোরাম কাতার ও দোহা ব্যাংক-এর যৌথ উদ্যোগে ‘কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও সমন্বয়মূলক সুযোগ’শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বাংলাদেশকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বিবেচনা করে বৈচিত্র্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য দুই দেশেকেই এগিয়ে আশা উচিত।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি, কাতারের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, হালাল ইকোসিস্টেম, পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি, স্টার্ট-আপস, উদ্ভাবনী জ্ঞান ও রিসোর্স শেয়ারের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করবেন।
বাংলাদেশে ১৬০ মিলিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে। সাউথ এশিয়া অ্যাসোসিয়েশন রিজিওনাল কো-অপারেশনের (সার্ক) অধীনে সাউথ এশিয়া ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সাফটা) অনুযায়ী আমাদের ১.৮ বিলিয়ন মার্কেট অ্যাক্সেস ব্যবস্থা রয়েছে।
অস্ত্র ছাড়া (ইবিএ) এর সবকিছুতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এপিটিএ) এর মাধ্যমে বেশ কিছু অতিরিক্ত বাজারেও শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত (ডিএফকিউএফ) অ্যাক্সেস সুবিধা রয়েছে। এছাড়া জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)-এর গবেষণায় বাংলাদেশকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগের শীর্ষ স্থান হিসেবেও দেখানো হয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেছন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা এশিয়ার সবচেয়ে আড়ালে থাকা একটি বিষয়। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ছয়টি চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প, বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ উৎপাদন, অবকাঠামো এবং ডিজিটাল স্পেসের বিষয় তুলে ধরে বলেন, গত ১২ বছরে বাংলাদেশ ৪০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
মহামারী সত্তে¡ও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ, রেমিট্যান্সে ৫.৪ শতাংশ ও চলতি অর্থবছরে ১০ শতাংশ বৈদেশিক মজুদ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানির বৈশ্বিক শীর্ষ পাচঁ অপারেশনের মধ্যে তাদের বাংলাদেশে পরিচালিত কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য।
মুদ্রা বেশ স্থিতিশীল হওয়ায় বাংলাদেশে ভালো সাফল্য পাওয়া যায়। কাতারে পুঁজি বাজারে তারল্যের আধিক্য থাকায় কাতারের ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, দ্বিগুণ টেক্সের এওয়ারনেস ট্রিটি কাতারের বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে সহযোগিতা করবে।
উপস্থিত ছিলেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশুদ আহমেদ। তিনি বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্ক শ্রমের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্য চমৎকার সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনা দিয়ে আসছে। তাই কাতার বাংলাদেশের দিকে নজর দিতে পারে। বাংলাদেশ নিজেই একটি বড় বাজার এবং দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সেতু।
ডা. আর সিথারামান বলেন, বিনিময় ও রিফান্ডের ক্ষেত্রে আমাদের পরিচিতি রয়েছে এবং একইভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগ করতে পারে। আমরা এখন বাংলাদেশে তারল্য বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি।
তিনি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাতারে অবকাঠামো স্থাপন এবং কাতারের শিল্প অঞ্চল ও মুক্ত অঞ্চল থেকে একটি বৈশ্বিক প্রবেশদ্বার তৈরি করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন এবং পুরো অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গলফ এক্সচেঞ্জের ভিপি ও বাংলাদেশ ফোরামের কাতারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাফর আলী আল-সারাফ।