সুজন চৌধুরী, বান্দরবানঃ
করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের মত আলীকদমেও পরিবহনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরলেও অরাজকতার শেষ নেই। না আছে নিয়মের লেশ না আছে স্বাস্থ্যবিধির বালাই। যানবাহনে যাত্রী চাপের সঙ্গে বেড়েছে অনিয়মের অভিযোগও। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০ শতাংশ আসন খালি রাখার যে নিয়ম চালু করা হয়েছিল সেটি বর্তমানে মূলত মানা হচ্ছে না। অতিরিক্ত যাত্রীর সঙ্গে করোনায় বেঁধে দেওয়া ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া ঠিকই আদায় করছে পরিবহনগুলো। এ নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়ছে,বাড়ছে বিভেদ। বর্ধিত ভাড়া নিয়ে আলীকদম চকরিয়া সড়কে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে ঘটছে হাতাহাতির ঘটনাও। যাত্রীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তারা অনেকটা পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের কাছে জিম্মি।
পুলিশ, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে যাত্রী ও গণপরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।
গতকাল বুধবার আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যে ১১টি শর্তে করোনাকালীন গণপরিবহন ও অভ্যন্তরিণ পরিবহন (টমটম, রিক্সা,সিএনজি,মাহেন্দ্রা)পরিচালনা শুরু করা হয় সেসবের কিছুই মানা হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত ৫০ শতাংশ আসনের পরিবর্তে পরিবহনের সবকটি আসনে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এমনকি দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সরকারিভাবে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও অনেকে আদায় করছে দ্বিগুণ। এ নিয়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে তুমুল বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষোভে যাত্রী ও শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।ভাড়া ও যাত্রী পরিবহন নিয়ে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের দাবি, যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারঘোষিত কিছুই মানা হচ্ছে না, তাই আগের ভাড়া কার্যকর করা উচিত।
আলীকদম সদরের বাসিন্দা জাকের হোসেন,অংথুইচিং মারমা,নুর কবির বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে আলীকদম বাজার থেকে নয়াপাড়া রাস্তার মাথা,চৌমুহনী,পান বাজার,বাসটার্মিনাল ভাড়া ছিল ৫ টাকা। কিন্তু এখন নেওয়া হচ্ছে ১০/১৫ টাকা।আলীকদম থেকে রেপার পাড়া পূর্বে ২০/২৫ টাকা হলেও এখন নেওয়া হয় ৪০/৪৫ টাকা।আলীকদম লামা পূর্বের ভাড়া ছিল ৪০ টাকা বর্তমানে ৮০ টাকা।আলীকদম চকরিয়া পূর্বে বাস ভাড়া ছিল ৬০ টাকা ও জীপ ভাড়া ছিল ৭০ টাকা।কিন্তু এখন বাস ১শত টাকা ও জীপ ১ শত ২০ টাকা নেয়।বাসগুলো সব সিটে যাত্রী তোলার পর লোক দাঁড় করিয়েও রাখা হচ্ছে এবং জীপ ও মাহিন্দ্রা সব সিটে যাত্রী নেওয়া হলেও টাকা নেওয়া হয় দ্বীগুণ।বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়, প্রতিবাদ করলে শারীরিক হেনস্তাও জুটছে।
তারা আরও বলেন,পরিবহনে যা হচ্ছে সেটা রীতিমতো জুলুম। করোনায় মধ্য-নিম্নবিত্ত মানুষের এমনিতে অবস্থা খারাপ। মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে। এতটা জুলুম করা উচিত নয় পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অধিকাংশ বাসে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী তোলা হলেও গাড়ী চালকরা বলেন,যাত্রীরাই জোর করে বাসে ওঠে। সে কারণে চাইলেও যাত্রী না নিয়ে পারা যায় না।অধিক যাত্রী নিলে আগের মত প্রশাসন বা চেকপোষ্টগুলোতে বাধা না দেওয়ায়। অতি লোভী অনেক চালক অধিক যাত্রী তুলেন কিন্তু সব চালক এক নয় বলে জানান জীপ চালক গিয়াজ উদ্দিন।
বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ নুরুল হোসেন বলেন,সরকারের নির্ধারিত যাত্রীর চেয়ে অধিক যাত্রী নেওয়ার কোন তথ্য বা অভিযোগ পাইনি আজ পর্যন্ত।এমন অভিযোগ পেলে চালকের বিরূদ্ধে মালিক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হত বলে জানান।
যে ১১টি শর্তে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার তার কোনটি মানছে না চালকরা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,আমি অসুস্থ থাকায় এবিষয়টি জানা ছিল না।এখনই বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সরকারি নির্দেশনা মেনে যানবাহন চলাচল হচ্ছে না সেহেতু পূর্বে ভাড়া যানবাহন চলাচল শুরু হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান,সরকারি নির্দেশনা দিলে অবস্থাই পূর্বের ভাড়ায় আলীকদম চকরিয়া সড়কের বাস চলবে বলে জানান।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সায়েদ ইকবাল জানান,বাস,জীপ গুলোকে ৫০%আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।এরই মধ্যে কয়েক বার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু উনারাও ৫০% আসন খালি থাকে বলে জানিয়েছে।যদি পরিবহন (বাস,জীপ,অটো রিক্সা,মাহেন্দ্রা,সিএনজি) নির্ধারিত যাত্রীর চেয়ে বেশী যাত্রী নেয়,তাহলে জরিমানাসহ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।
কাউন্টার থেকে ৫০% আসন খালী রেখে যানবাহন গুলো যাওয়া আসার সময় মাঝপথে অধিক যাত্রী নেওয়া হয় এবিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান,বিষয়টি আমার জানা নেই।পরিবহন মালিক সমিতিকে নির্দেশ দেওয়া হবে অধিক যাত্রী পরিবহন ও অধিক ভাড়া যাতে না নেওয়া হয় ।তারপরও যদি পরিবহন চালকরা তা না মানে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
পূর্বের ভাড়ায় পরিবহন চলাচলের কোন নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এমন কোন নির্দেশনা এখন পর্যন্ত নেই।