বিল মেটাতে সদ্য জন্ম নেওয়া নাড়ি ছেড়া ধনকে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের দিনমজুর শাহজাহান মিয়ার স্ত্রী আঞ্জুলা বেগম ওরফে আমেনা বেগম।
এনিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান পত্রিকায় শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসে আইনমন্ত্রী আসিনুল হক এমপির। এই সংবাদটি নজরে আসার পর স্থির থাকতে পারেননি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সঙ্গে সঙ্গে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে শিশুটি উদ্ধারের ব্যবস্থা নেন। যে টাকায় শিশুটি বিক্রি করা হয়েছিল সেই টাকা গাইবান্ধায় পাঠান আইনমন্ত্রী। এরপর যার কাছে শিশুটি বিক্রি করা হয়েছিল তাকে টাকা ফেরত দিয়ে শনিবারই শিশুটিকে মায়ের কোলে তুলে দেয় জেলা প্রশাসন।
শুধুই নাড়ি ছেড়া ধনকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি, হতদরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
শুধুই আইনমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নয়, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আঞ্জুলা বেগমকে ২০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, একটি শাড়ী, একটি লুঙ্গি এবং নগদ দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া বারটার দিকে চতুর্থ সন্তান জন্মদানের জন্য আঞ্জুলা বেগম গাইবান্ধার যমুনা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। রাত একটার দিকে সিজারের মাধ্যমে তিনি একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন।
কিন্তু ক্লিনিকের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নবজাতকটি ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন পাশের গ্রামের একজনের কাছে। যিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় একটি উচ্চ পদে চাকরি করেন। ওই কর্মকর্তার ২৭ বছরের সংসার জীবনে কোনো সন্তান জন্ম না নেওয়ায় তিনি আঞ্জুলা বেগমের ছেলেকে কিনে নেন।
এরপর ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করে ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ক্লিনিক থেকে রিলিজ নেন আঞ্জুলা।
রবিবার আইন মন্ত্রনালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একজন মা গাইবান্ধার একটি ক্লিনিকে সন্তান জন্ম দিয়ে মেডিকেল বিল পরিশোধ করার জন্য ১৬ হাজার টাকায় তার সন্তানকে বিক্রি করেছেন।
এ নিয়ে গতকাল শনিবার একটি ইংরেজি দৈনিকে খবর প্রকাশিত হলে তা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপির নজরে আসে। বিষয়টি তাঁর মনে দারুনভাবে পীড়া দেয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে তিনি গাইবান্ধার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং উক্ত টাকা ফেরত দিয়ে নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
আইনমন্ত্রীর অনুরোধে গতকালই (শনিবার) গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলা থেকে নবজাতকে উদ্ধার করে মা আঞ্জুলা বেগমের কোলে ফেরত দেয়। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আঞ্জুলা বেগমকে ২০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, একটি শাড়ী, একটি লুঙ্গি এবং নগদ দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়।
এছাড়া ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করার জন্য যে টাকা গ্রহণ করা হয়েছিল তা ফেরত দেওয়ার জন্য আজ(রবিবার) আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসন বরাবর ১৬ হাজার টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।