বিকাশ প্রতারণা চক্রের প্রধানসহ ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে তাদের কৌশল। চক্রের সদস্যরা চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতারণা করে থাকে।
শুরুতে গ্রাহকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে বিভিন্ন দোকানে গ্রাহক সেজে অবস্থান নেয় মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা।
কৌশলে দোকানের বিকাশ লেনদেনের খাতার ছবি তুলে দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে পাঠিয়েই প্রতারণার শুরু করেন।
সেসব নাম্বার ধরে বিকাশের দোকানি সেজে কিংবা কাস্টমার কেয়ার কর্মকর্তা সেজে ফোন দিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হয় গ্রাহকের টাকা।
শুক্রবার রাজধানী ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ প্রতারণা চক্রের প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
আটকরা হলেন— সাইফুল ইসলাম (২২), লিটন হোসেন (২৩), জুবায়ের শেখ (২২), গোলাম কিবরিয়া মন্ডল (১৯), ইমরান মোল্লা (২৩), শাওন হোসাইন মন্ডল (১৮), মিনজারুল ইসলাম মোল্লা (২৫), আশরাফ মোল্লা (২৬) ও সাগর আহম্মেদ (২৫)।
এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি মোবাইল ফোন, ১০টি সিমকার্ড ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন জানান, বিকাশ প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রধানত চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতারণা কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করে থাকে।
প্রথম গ্রুপ মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন বিকাশের দোকানে টাকা বিকাশ করার কথা বলে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে লেনদেনকৃত বিকাশ খাতার ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে এলাকা উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় গ্রুপ সেসব নম্বরে বিকাশ দোকানদার সেজে কল করে জানতে চায়, পাঠানো টাকা তারা পেয়েছেন কিনা এবং ক্যাশ আউট করেছেন কিনা।
প্রতারণার ছলে বলতে থাকেন, আমার দোকান থেকে একই সময়ে কয়েকটি নাম্বারে পাঠানো টাকা নিয়ে অভিযোগ আসায় কয়েকটি নম্বরের সঙ্গে আপনার নম্বরও লক হয়ে গেছে। আপনাকে বিকাশ আফিস থেকে ফোন করে আনলক করে দেবে।
কিছুক্ষণ পরেই তৃতীয় গ্রুপ বিকাশ কাস্টমার কেয়ার অফিসার পরিচয় দেয়। অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে বিকাশ অফিসের নম্বর ক্লোনিং করে ফোন দেওয়ায় গ্রাহক সহজে বিষয়টি বুঝতে পারে না।
ফোনে বিভিন্ন কথার ছলে ওটিপি এবং বিকাশ পিনকোড নিয়ে নেয়। এরপর গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে এবং অ্যাকাউন্ট আনলকের জন্য বিভিন্ন পরিমাণ টাকা দাবি করে।
এভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকা সর্বশেষ অর্থাৎ চতুর্থ গ্রুপের কাছে পাঠানো হয়। যারা বিভিন্ন হাত বদল করে ক্যাশ আউট করে, ফলে প্রতারকদের অবস্থান শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আটকদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান ডিসি ওয়ালিদ হোসেন।