একটা কথা চলে আসছে অনেক দিন থেকে। বারমুডা অঞ্চলে নাকি জাহাজ, নৌকা বা আকাশ পথে যাওয়ার সময় উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। খোঁজ-খবর নাকি আর পাওয়া যায় না। এই বারমুডা রহস্যের ব্যাপারটা কী?
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হলো আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমাংশে ত্রিভুজাকৃতির একটি বিশেষ অঞ্চল। এর এক কোণে বারমুডা দ্বীপ আর অন্য দুই প্রান্তে মায়ামি বিচ ও পুয়ের্তে রিকোর সান জুয়ান। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পাঁচটি টিভিএম অ্যাভেঞ্জার উড়োজাহাজ এবং একটি উদ্ধারকারী উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। সেই থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য কথাটার চল। এরপরও বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ সেখানে নিখোঁজ হয়েছে।
তবে নির্ভরযোগ্য উৎসগুলো বলে এর মধ্যে কোনো রহস্য নেই। কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে বটে। ওগুলো নিছক দুর্ঘটনাই। ওই এলাকা দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে প্রচুর জাহাজ চলাচল করে। উড়োজাহাজের যাতায়াতও খুব বেশি। এ রকম এলাকায় মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। সেটা অচিন্তনীয় হলে অনেকে তার মধ্যে রহস্য খোঁজেন। আসলে এর মধ্যে রহস্যের কিছু নেই।
ওই অঞ্চলে কম্পাস কাঁটা চুম্বকীয় উত্তর মেরু নির্দেশ করে যা ভৌগোলিক উত্তর মেরু থেকে প্রায় ১১০০ মাইল দূরে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে এই পার্থক্য কম্পাস কাঁটায় প্রায় ২০ ডিগ্রি। জাহাজ বা অ্যারোপ্লেন চালানর সময় এই পার্থক্য হিসাবে রাখা হয়। যদি কোনো কারণে ভুল হয় তাহলে নানা বিভ্রাট লাগতে পারে। তা ছাড়া ওই এলাকায় উপসাগরীয় স্রোতোধারার প্রবল ঢেউয়ের উপদ্রব বেশি, আছে টর্নেডোর ঝড়ঝাপটা। এ সবের পাল্লায় পড়লে আকস্মিক দুর্ঘটনার প্রকোপ একটু বেশি মনে হতেই পারে। তাই মনে হয় ওই এলাকাটাই রহস্যজনক বিপদের একটি আখড়া। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওসব কথার ভিত্তি নেই। যদি তাই হতো, তাহলে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী জাহাজ-উড়োজাহাজের বিমার হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি হতো। অথচ সেখানে বাড়তি বিমা তো আরোপ করা হয় না! বিমা কোম্পানিগুলো যা হিসেবি, তাতে ওরা রহস্যের সন্ধান পেলে বিমার হার অবশ্যই বাড়িয়ে ধরত।
আসল কথা হলো পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য গণমাধ্যম স্বভাবতই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বেশি আগ্রহী। একটু গন্ধ পেলেই তা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলে। গাদা গাদা রহস্যোপন্যাসও বেরিয়েছে। কিন্তু এসবের পেছনে সত্যতা নেই। রহস্যের কিছু নেই।