সাম্প্রতিক শিরোনাম

রাশিয়ান ট্যাকটিক্যাল ইস্কেন্দার সর্ট রেঞ্জ ব্যালেস্টিক মিসাইল!

রাশিয়ার তৈরি ইস্কেন্দার-এম ট্যাকটিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (এসআরবিএম) হচ্ছে কার্যত স্বল্প দূরত্বে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড হীট করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। তবে এর এক্সপোর্ট ভার্সন ইস্কেন্দার-ই সিরিজের ব্যালেস্টিক মিসাইলটিকে কিন্তু কনভেনশনাল বা প্রচলিত এক্সপ্লুসিভ ওয়ারহেড সংযুক্ত করে সিরিয়া ও আর্মেনিয়ার কাছে বিক্রয় বা সরবরাহ করা হয়েছে।

কোল্ড ওয়ারের পরবর্তী সময়ে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর স্ট্যাটিজিক্যাল মিসাইল ব্রিগেড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো জোটকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলা করতে দীর্ঘ পাল্লার ইন্টার কন্টিন্যানটাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) সার্ভিসে আনার পাশাপাশি ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ৯কে৭২০ ইস্কেন্দার-এম (ন্যাটো কোড নেম এসএস-২৬ স্টোন) স্বল্প পাল্লার অত্যন্ত শক্তিশালী ব্যালেস্টিক মিসাইল সার্ভিসে আনে। যদিও রাশিয়া ১৯৯৬ সালে তাদের প্রথম ইস্কেন্দার-এম সিরিজের ব্যালেস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করে। তবে প্রথম বারের মতো ২০০৬ সালে রাশিয়ার গ্রাউন্ড ফোর্সের কাছে সরবরাহ শুরু করা হয়। বর্তমানে ২০১৯ পর্যন্ত রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ১২২টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং অতি মাত্রায় ধ্বংসাত্বক ইস্কেন্দার-এম সিরিজের মোবাইল মিসাইল সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে।

এটি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর স্বল্প দুরুত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। যা নিশ্চিতভাবেই ইউরোপের ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো এবং সর্বোপরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গভীর দুশ্চিন্তা ও ভয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই অজানা সংখ্যক এই জাতীয় মিসাইল সিস্টেম ন্যাটো জোটের যে কোন সামরিক আগ্রাসনের দ্রুত ও শক্ত জবাব দিতে ইউরোপ সংলগ্ন বাল্টিক সাগর উপকূলবর্তী দেশগুলোর সীমান্তের একাধিক গোপন ঘাঁটিতে নিজস্ব ছক মাফিক মোতায়েন সম্পন্ন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাশিয়ার মেশিন বিল্ডিং ডিজাইন ব্যুরোর তৈরি ৪০ টন ওজনের ইস্কেন্দার-এম একটি শর্ট রেঞ্জ মোবাইল মিসাইল লাউঞ্জিং সিস্টেম। যাতে দুটি ৯কে৭২০ মডেলের শক্তিশালী এবং এডভান্স মিসাইল সংযুক্ত করা থাকে এবং প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র সিঙ্গেল স্টেজ সলিড প্রপোলেন্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ৭.৩ মিটার এবং ডায়ামিটার ০.৯৩ মিটার। রাশিয়া ৪,৩০০ কেজি ওজনের রাশিয়া ইস্কেন্দার সর্ট রেঞ্জ ট্যাকটিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের দুটি ভার্সন উৎপাদন করে। একটি হচ্ছে ইস্কেন্দার-এম যা রাশিয়ার নিজস্ব সেনাবাহিনীর কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যার রেঞ্জ ৫০০ কিলোমিটার এবং এটি সর্বোচ্চ ৪৮০-৭০০ কেজি পর্যন্ত পারমাণবিক ও প্রচলিত উভয় ধরনের ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। আবার ইস্কেন্দার-ই হচ্ছে ইস্কেন্দার মিসাইল সিস্টেমের এক্সপোর্ট ভার্সন। যার সর্বোচ্চ রেঞ্জ ২৮০ কিলোমিটার। এটি খুব সম্ভবত শুধুমাত্র ৪৮০ কেজি পর্যন্ত কনভেনশনাল বা প্রচলিত ওয়ারহেড বহন করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। তবে উভয় ভার্সনের মিসাইলের গতি কিন্তু হাইপারসনিক। অর্থ্যাৎ এটি সর্বোচ্চ ৫.৯ থেকে ৬.৭ ম্যাক গতিতে নিদিষ্ট দূরত্বে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভূলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।

রাশিয়া অবশ্য এ পর্যন্ত আন্তজার্তিক বাজারে সিরিয়ার আসাদ বাহিনীর কাছে ২৬টি ইস্কেন্দার-ই এক্সপোর্ট ভার্সন মিসাইল সিস্টেম সরবরাহ করেছে বলে জানা যায়। আবার এ মুহুর্তে রাশিয়া তাদের কমপক্ষে একটি বা দুটি ইস্কেন্দার-এম মোবাইল লাউঞ্চার সিস্টেম নিজেই সিরিয়ায় মোতায়েন করে রেখেছে। তাছাড়া রাশিয়া ২০১৬ সালের দিকে কিছু সংখ্যক ইস্কেন্দার-ই সিস্টেম আর্মেনিয়ায় প্রেরণ করে। এদিকে রাশিয়ার প্রযুক্তি নিয়ে চীন ও দক্ষিন কোরিয়া ইস্কেন্দার মিসাইল সিস্টেমের ক্লোন-কপি উতপাদন শুরু করেছে বলে জানা যায়।

আসলে রাশিয়ার তৈরি এই ব্যালেস্টিক মিসাইল মোবাইল সিস্টেমটি পরিচালনা করতে ৩ জন ক্রু প্রয়োজন। এই সামরিক যানটিতে একটি এডভান্স ৫০০ হর্স ক্ষমতাসম্পন্ন এডভান্স ওয়াইএএমজেট-৮৪৬ ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। যা মোবাইল যানটিকে ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলার সক্ষমতা প্রদান করে। এটির অপারেশন রেঞ্জ সর্বোচ্চ ১,০০০ কিলোমিটার। এই মোবাইল ভ্যাসেল সিস্টেমটি চলন্ত অবস্থায় মাত্র ১৬ মিনিটের মধ্যে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ফায়ার করতে সক্ষম। আবার সম্পুর্ন তৈরি অবস্থায় ইস্কেন্দার-এম মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরবর্তী এক মিনিটের মধ্যে অপর ক্ষেপণাস্ত্র নিখুঁত ভাবে ফায়ার করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া রাশিয়ার তৈরি এএন-১২৪ সামরিক পরিবহণ বিমানে করে একে যে কোন প্রতিকূল অবস্থায় এবং স্থানে মোতায়েন করা সম্ভব।


সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ফান্ড আওয়ামী ঘরানার দুই ইয়েলো...

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড" বা অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি...

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...