মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে পারস্পারিক আলোচনায় দিন পার করছে রোহিঙ্গারা।
সেদেশে সরকার পরিস্থিতি পরিবর্তন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে চলছে দিনভর কানাঘোষা। হঠাৎ করে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা নিয়ে নানা সংশয় দেখা গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে প্রত্যাবাসন নিয়ে যে আলোচনা চলছিল তা নতুন করে জট তৈরি করতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন অনেক রোহিঙ্গা। তবে অং সান সুচির ক্ষমতাচ্যুত হওয়া কিংবা সেনাবাহিনীর রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গারা দলে দলে ভাগ হয়ে বড় গাছের ছায়ায়, চায়ের দোকানে এবং রাস্তার ধারে বসে মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়ে আলাপ আলোচনায় মেতে আছেন।
তারা সেনা অভ্যুত্থানের কারণে নিজেদের ভাগ্যে পরিবর্তন বা প্রত্যাবাসন নিয়ে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা সন্দিহান। তবে কেউ কেউ বলছেন সেনাবাহিনী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতেও পারে।
টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ আলম জানান, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে আমাদের ভাগ্যে কি পরিবর্তন আসবে জানি না। তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের যে তৎপরতা সেটা অব্যাহত থাকুক আমরা সেটি প্রত্যাশা করছি।
কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকেই ভাবছেন, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা হতে পারে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সহজে রোহিঙ্গাদের দেশে ঢুকার সুযোগ দেবে না, কারণ রোহিঙ্গাদের দেশ ত্যাগে এ সেনাবাহিনীই নিপীড়নযজ্ঞের মুল কারিগর ছিল।
তারা (সেনাবাহিনী) আবার রোহিঙ্গাদের দেশে ঢোকার সুযোগ দেবে সেটা সহজে বলা যাচ্ছে না।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবীণ রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ শাকের হোসেন বলেন, আমরা আশা করছিলাম বাংলাদেশ সরকার এবং মিয়ানমার সরকারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে যে ফলপ্রসু আলোচনা হচ্ছিল তাতে দ্রুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার পথ সুগম হবে।
কিন্তু হঠাৎ করে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে এখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কোথায় গিয়ে ঠেকে জানি না। সামরিক বাহিনী ইচ্ছা করলে সেটি অভ্যাহত রাখতে পারে, তবে সেটি তাদের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে।
এ ছাড়া প্রত্যাবাসন বিষয়ে সেনা সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখা দরকার।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গৃহবধূ রোহিঙ্গা নারী আনজুমান আরা বলেন, এই সেনাবাহিনী মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গা মা বোনদের ধর্ষণ করে হত্যা করার পর ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। তারা আরাকানের ভূমিকে রোহিঙ্গাশূন্য করতে চেয়েছিল। তারা আবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ঢুকার সুযোগ তৈরি করবে এমনটি আশা করছি না।
শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যুবক শেফায়েত উল্লাহর মতে, মিয়ানমারে ফেরার ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের কিছু শর্ত রয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নাগিরকত্ব প্রদান ও ভিটেমাটি ফেরত এ দুটি শর্ত সেনাবাহিনী মেনে নেবে না। আর শর্ত না মান মানেই রোহিঙ্গাদের ফেরার পথ বন্ধ করে দেয়া।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশে ফেরা নিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশের মধ্যে নানা সংশয় ও সন্দিহান বিরাজ করলেও এখনো প্রত্যাবাসন নিয়ে আশার আলো দেখছেন ক্যাম্পে আশ্রিত অনেক রোহিঙ্গা।
তারা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় কিংবা চাপমুক্ত থাকার কৌশল হিসেবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু সহজে ঘোলাটে করতে চাইবেনা।
এ ছাড়া তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবেও এ ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরিতা তৈরি করতে চেষ্টা করবে না। এ কারণে হয়তো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন আলোচনা অব্যাহত রেখে প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ দেশে ফেরত নিতে পারে সেনাবাহিনী।
তবে যে যাই ভাবুক, শেষ আলোচনায় বেশির ভাগ রোহিঙ্গা সহসা তাদের জন্মভূমিতে ফেরার সুযোগ তৈরি হোক এমনটি প্রত্যাশা করছেন।