রাজধানীর বাড্ডায় নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামি বাবা কামাল হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার এই রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আসামি কামালকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আসামির উপস্থিতিতে বিচারক রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণা শেষে আদালত আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি আদালত রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। এদিন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা (অরেঞ্জ) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এ সময় আসামি কামাল হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে আসামির পক্ষে খন্দকার মহিবুল হাসান আপেল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এসময় আসামি কামাল হোসেনের খালাস প্রার্থনা করেন।
এদিকে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. তৌহিদা বেগম আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
এ মামলায় মোট ৮জন সাক্ষীর মধ্যে ৬জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এরপর একইদিন ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামি কামাল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।
সূত্রে জানা যায়, ৮/৯ বছর আগে ভিকটিমের বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর ভিকটিম তার দাদীর কাছে থাকতো। ডিভোর্সের পর আসামি লিপি বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করে।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ভিকটিমকে তার বাবা রূপনগর আবাসিক এলাকার বস্তিতে নিয়ে যায়। এ নিয়ে তার সৎ মায়ের সঙ্গে বাবার ঝগড়া হয়। পরে একই বছরের গত ২ মে ভিকটিমকে নিয়ে তার বাবা বাড্ডার আব্দুল্লাহবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। তারপর গত ওই বছরের ৪ মে এবং ৫ মে আসামি কামাল হোসেন ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় মামলা করেন। এদিকে, মামলা দায়েরের পর কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ মে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৯ মে আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবিন্দ দেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলায় তদন্ত করে বাড্ডা থানার এসআই আল-ইমরান আহম্মেদ কামাল হোসেনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ১২ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের আদেশ দেন আদালত।