মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, লেখক মুশতাক আহমেদকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে গ্রেপ্তার করে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম যে, এই হত্যাকান্ড রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যাকান্ড হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। সকাল ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়ে ১১টা ৪০ মিনিটে দিকে সমাবেশ শেষ হলে দ্রুত নেতা-কর্মীরা সমাবেশ স্থল ত্যাগ করে।
মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর তিনি বলেন, আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি।
ফখরুল বলেন, শুধু একটি নয়, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে প্রায় ৭‘শ জন মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আপনারা দেখেছেন, ইতিপূর্বেও শুধু মাত্র সরকারের সমালোচনা বা কার্টুন বা লেখার কারণে ৫ বছরে থেকে শুরু করে, গৃহবধূ থেকে শুরু করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে আমাদের সাংবাদিকরা।
সরকার বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণ একটা অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকার। তাদেরকে জোর করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে এবং টিকে থাকার জন্য এই ধরনের সম্পূর্ণ গণবিরোধী আইন যারা তৈরি করেছে সেই আইনের মাধ্যমে, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে তারা জনগনের যে কথা বলার অধিকার, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা পরিস্কার করে বলে দিতে চাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রেখেছেন তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ যাদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছেন সেই সাজা প্রত্যাহার করতে হবে, মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা গায়েবী মামলা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন দিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারকে সরাতে হবে। তারা নির্বাচিত সরকার নয়, তাদের কোনো বৈধ্যতা নেই। আমরা বিশ্বাস করি জনগনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তাদের পতন হবে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে। আসুন এই লক্ষ্যে আমরা সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হই।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী যুব দলের উদ্যোগে কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও নোয়াখালীর বশিরহাটে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে স্থানীয় সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মোজাক্কির হত্যার বিচারের দাবিতে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদনে গ্যাসে ছুঁড়ে পন্ড করে দেয়ার পর এটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির কোনো অঙ্গসংগঠনের প্রথম কর্মসূচি।
মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে রাস্তায় রাস্তায় আমাদের নেতা-কর্মীদের বাঁধা দেয়া হয়েছে। আমার চোখের সামনে আমি দেখেছি কিভাবে নেতা-কর্মীদেরকে পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে। আমি পুলিশের কাছে গেলাম পরিচয় দিলাম….। আমরা দূঃখ লাগে দেশ থেকে আদব-কায়দা সব উঠে গেছে নাকী।
‘এই সরকার কাউকে সন্মান দিতে জানে না, এই সরকার কোনো সন্মান পেতে পারে না। এই সরকার ভোটের সরকার নয়, এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। সুতরাং এই সরকারকে আমরাও মানি না।
আমরা বলতে চাই, এদেশে স্বৈরশাহী টিকে থাকতে পারিনি, এই অনির্বাচিত অবৈধ সরকারও টিকে থাকতে পারবে না। জনগনের আন্দোলনের স্রোতে এই সরকার খড়কুটোর মধ্যে ভেসে যাবে। যত শক্তিশালী আপনারা দেখান না কেনো, ইনশাল্লাহ আমরা জনগনের আন্দোলনে আপনাদের পতন ঘটবে।
যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসানের পরিচালনায় সমাবে্শে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সহসভাপতি আবদুল খালেক হাওলাদার, মোনা্যেম মুন্না, কেন্দ্রীয় নেতা এসএম জাহাঙ্গীর, রফিকুল আলম মজনু, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মাওলা শাহিন প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।সকাল থেকে সমাবেশ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যাপক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।