১৯ ইপিআরের দেহাবশেষ মিলল ৫০ বছরে। ১৯৭১ সালের পয়লা মে মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রংপুর নগরীর অদূরে সাহেবগঞ্জে হত্যা করে ১৯ জন বাঙালি ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) সৈনিককে। এদের মধ্যে কয়েকজন অফিসার ছিলেন। পেছনে হাত বাঁধা এবং একই রশি দিয়ে পেঁচিয়ে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। সবার পরনেই ছিল সৈনিকের পোশাক। হানাদার বাহিনীর ভয়ে ওই দিন গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিল এলাকাবাসী।
পরে তকেয়ারপাড় এলাকার কিছু মানুষ এসে নিহত ১৯ জন বীর বাঙালি সৈনিককে সেখানেই কবর দেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সাহেবগঞ্জ বধ্যভূমি সংস্কার করতে গিয়ে মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসে সেই দিনের নিহত সৈনিকদের হাড়-হাড্ডি, মাথার খুলি ও দাঁতের অংশ বিশেষ ও জামা-কাপড়। মঙ্গলবার বিকালে ওই বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের জন্য শ্রমিকরা মাটি খুঁড়লে এসব হাড়গোড় বেরিয়ে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সেই দিনের ঘটনার সাক্ষী আবদুর রহমান স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, পাকিস্তানি হানাদাররা ইপিআর সৈনিকদের গুলি করে হত্যার পর সেখানেই লাশগুলো রেখে যায়।
আমরা কয়েকজন গ্রামবাসী লাশগুলোকে একত্রিত করে মাটি দেই। সেইদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই ভয়ে ভয়ে আমরা লাশগুলো মাটি দেই। ৫০ বছর পরেও ওইসব লাশের হাড়গোড় পাওয়ার খবর পেয়ে তা দেখতে গিয়েছিলাম। মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু জানান, ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী ২২ জন ইপিআর সদস্যকে ধরে আনলে ভাগ্যক্রমে তিনজন পালিয়ে গেলেও ১৯ জনকে নৃশংসভাবে মেরে ফেলে এখানে রেখে যায়। সেদিন চাইলেও দেহগুলো কবর বা সৎকার করতে পারেনি গ্রামবাসী।
অঝোর ধারার বৃষ্টিতে ধোয়া লাশগুলো একখানে মাটিচাপা দেন এলাকার তরুণ-যুবকরা। সেখান থেকেই উঠে আসছে এই হাড়গুলো। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবুল বলেন, বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার হওয়া শহীদদের দেহাবশেষ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সাহেবগঞ্জে ওইদিন ১৯ ইপিআর সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন অফিসার ছিলেন। এর আগে গত ডিসেম্বরে নগরীর টাউন হলের বধ্যভূমি সংস্কারের কাজ করতে গিয়েও পাওয়া যায় মানুষের দেহাবশেষ।
গণহত্যা ও গণ-ধর্ষণকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের প্রতি একরাশ ঘৃণা।
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি অব্যাহত রাখতে হবে।