প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ইতালি যাচ্ছেন, হতে পারে সামরিক চুক্তি।
ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ইতালি যাচ্ছেন। সরকার ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে জোর দিচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক সংবাদকে জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র ইতালিতে বছরের প্রথম
দ্বিপক্ষীয় সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক বার্তা দেবেন বলে তাঁদের মত। প্রায় দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রী এই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ইতালি যাচ্ছেন। ওই সফরে ব্যবসা, বিনিয়োগের পাশাপাশি ইতালিতে দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। আর ইতালি বাংলাদেশের সঙ্গে প্র’তিরক্ষা চুক্তি সই ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসেবে ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশের নেতাদের এ বছর বাংলাদেশ সফরেরও কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকেরা। তাঁরা বলেছেন, এরই মধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে।
ইতালি সফরের অগ্রাধিকার
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতালিতে যাওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইতালিতে মূলত তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইতালিতে দেড় শ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। আর একই সময়ে ইতালি থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ৭২ কোটি ডলার।
ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ গ্যাস ও তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইএনআই সম্প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফর করে এ নিয়ে আলোচনা করেছে।
ব্যবসা–বিনিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। ইতালির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে এখন ১ লাখ ৪০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মতে, যুক্তরাজ্যের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছে। তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি ইতালিতে গেছে অ’বৈধ পথে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইতালিতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা আছে। ইউরোপ থেকে অ’বৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ ইইউর সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী ফিরে আসা লোকজনের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণে সহায়তা দিচ্ছে ইতালি। বাংলাদেশ বৈধ পথে ইতালিতে কর্মী পাঠাতে চায়।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
ইইউর অন্য দেশগুলোর মতো ইতালিও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্র’তিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে তুলতে মনোযোগ দিচ্ছে। দেশটি সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করতে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরে প্রতিরক্ষা চুক্তির সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর রোম সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এ সফরেই প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা কম।