সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও নেপাল চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও দলিল সই করেছে। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সোমবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারীর বৈঠক শেষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা সেগুলো সই করেন।
এগুলোর মধ্যে দুটি এমওইউ পর্যটন ও স্যানিটারি খাতে সহযোগিতা বিষয়ে। এর বাইরে নেপাল-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি সংশোধনে পত্রবিনিময় (লেটার অব এক্সচেঞ্জ অন রোহনপুর-সিংগাবাদ রেলওয়ে রুট) এবং ২০২২-২০২৫ সালে সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি।
দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে নেপালের প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনে তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত নৈশ ভোজে অংশ নেন।
বিকেলে নেপালের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও নেপালের ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধার জন্য একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, সংক্ষেপে পিটিএ) সই করার ওপর জোর দেন।
দুই দেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নেপালের সহযোগিতাও চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে তাঁর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, পিটিএ দুই দেশের জন্যই উপকারী হবে।
প্রধানমন্ত্রী নেপালের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেপালের অস্ত্র ও নৈতিক সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সব সময় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে নেপালের কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে কানেক্টিভিটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি এই চার দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে। জলবিদ্যুত্ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এতে তিন দেশই উপকৃত হতে পারে।
নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এর আগে দুই দিনের সফরে গতকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছান নেপালের প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশে নেপালের প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের এটিই প্রথম সফর।
নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারীকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নেপালের প্রেসিডেন্টকে বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়।
এরপর নেপালের প্রেসিডেন্ট সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিকেলে নেপালের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর হোটেলে সাক্ষাত্ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ শেষে নেপালের প্রেসিডেন্ট জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে তিনি সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে নেপাল-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ শীর্ষক বক্তব্য দেন।
সফরসূচি অনুযায়ী, নেপালের প্রেসিডেন্ট আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। দুপুরে নেপাল দূতাবাস পরিদর্শন শেষে বিকেলে তিনি ঢাকা ছাড়বেন।