উখিয়ার বালুখালি ৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনর ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক খবরে ক্যাম্পটির ৯ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পরিবারের বস্তি ঘর পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বহু লোক হতাহত হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
তবে অসমর্থিত সূত্রে ৬ জন নারী-শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী শতাধিক স্থানীয় গ্রামবাসীর বসতবাড়িও পুড়ে গেছে।
সেই সঙ্গে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়েও। রোহিঙ্গারাই আগুন লাগিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ক্যাম্পে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা এবং সাধারণ রোহিঙ্গার মধ্যে সংঘাত চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এ কারণে সন্দেহজনক ১২ জন রোহিঙ্গাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে প্রাথমিক হিসাব মতে ৯ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পরিবারের ঘর পুড়ে গেছে।
তিনি জানান, ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী গ্রামেরও শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের লোকজন বালুখালী কাসেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাজার হাজার লোক আশ্রয়স্থল হারিয়ে এক কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে। আশ্রয়হারা লোকজন হারিয়েছে তাদের ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘরের সব মালামাল।
আবার অনেকেই হারিয়েছে তাদের সন্তান-সন্ততিও। শফিকা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে তার ৫ সন্তানকে নিয়ে মহাসড়কে আশ্রয় নিতে ছুটোছুটি করতে গিয়ে ৭ বছরের এক শিশু সন্তানকে হারিয়েছে।
রোহিঙ্গা নারী শফিকা অঝোর নয়নে কাঁদছে তার হারানো শিশু সন্তানের জন্য। শফিকার মতো এরকম রোহিঙ্গা নারীর আহাজারি চলছে মহাসড়কের বালুখালী এলাকার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে। বালুখালী ক্যাম্পের আবদুস শুকুর নামের অপর একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, ক্যাম্পটির ৮ নম্বর ব্লক থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
একটি ছনের ছাউনির ঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আগুন দেখে আবদুস শুকুর তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নিয়ে দৌঁড়ে কোনো রকমে আশ্রয় নেয় কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে।
সোমবার বিকাল ২টার দিকে লাগা আগুনে অসংখ্য রোহিঙ্গা ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গেছে। বিশাল আকারের ক্যাম্পটির ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক আগুনে সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে।
সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন পাঠানোর সময়েও ক্যাম্পের কিছু কিছু স্থানে আগুন জ্বলছে। তবে আগুন বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে উখিয়া থানার পুলিশ।
আগুনের খবর পেয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলে গেছেন।
আগুনে বালুখালী ক্যাম্পের বেশ কিছু এনজিও অফিস ও এপিবিএন-র একটি ব্যারাক পুড়ে গেছে।
ক্যাম্পে আগুন লাগার পর প্রাথমিক অবস্থায় স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আগুনের খবর পেয়ে বিকাল সোয়া ৫টা নাগাদ ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার জেলা শহর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থেকে দমকল বাহিনীর ৭টি টিম পৌঁছে আগুন নেভাতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। স্থানীয়দের মুখে নানা রকম তথ্য রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়েও এক রোহিঙ্গা আরেক রোহিঙ্গাকে দোষ দিচ্ছে। এ বিষয়ে গতরাতে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনো তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও নানা তথ্য দিয়ে আসছে। এমনকি রোহিঙ্গারাই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে আসছে। তিনি বলেন, তদন্তে বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনার তথ্য।
এদিকে বালুখালী এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পটিতে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়েছে একসঙ্গে কয়েকটি স্থানে। এ সময় কিছু রোহিঙ্গা দাহ্য পদার্থ নিয়ে আগুন লাগানোরও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির আইন-শৃংখলার দায়িত্বে থাকা ১৬ নম্বর আর্মড ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) সদস্যরা ঘটনার সময় ৬/৭ জন রোহিঙ্গাকে আটকও করেছে বলে খবর এসেছে। এসব গ্রেপ্তার হওয়া রোহিঙ্গাদের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে এপিবিএন’র কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য মিলেনি। তবে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জানিয়েছেন, এমন নানাসব গুজবের কথা এলাকায় ছড়িয়েছে।
বালুখালী ৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ তানজীম জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উখিয়া স্টেশন, রামু স্টেশন ও কক্সবাজার স্টেশনের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
আবদুল হাফেজ নামের একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, জোহরের নামাজের পর পরই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা জানান, উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এখনো পর্যন্ত কি পরিমাণ রোহিঙ্গাদের বসতি ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি।