হেফাজত ইস্যুতে কোনো প্রকৃত আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি উল্লেখ করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ফৌজদারি অপরাধে আলেম নামধারী ক্ষমতালিপ্সুদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারা রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িত।
জাতীয় সংসদে হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনা বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর বিএনপির সংসদ সদস্যদের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে বিলটি যাচাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা সাম্প্রতিক সময়ে আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। তাদের মুক্তির দাবিও করেন তাঁরা।
বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশে ইসলামের জন্য যা করেছেন, তা সবাই জানেন। কোনো পর্যায়ে কোনো বুজুর্গ ব্যক্তি ও প্রকৃত আলেম গ্রেপ্তার বা মামলার আওতায় আসেননি।
কেবলমাত্র আলেম নামধারী কিছু অর্থ ও ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি যারা বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধে জড়িত; যারা ধর্মের নামে রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িত, তারাই আইনের আওতায় এসেছে।
যদি অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে, প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক। এবং এর মধ্যে বহু আলেমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা দোষী ব্যক্তি, তাদের বিরুদ্ধেই এই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইন সবার জন্য সমানভাবে চলছে। শেখ হাসিনার সরকার সকল বুজুর্গ আলেমসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে বলেই হেফাজতের ঘটনা থেকে দেশ অনেকটা স্বচ্ছতায় এসেছে। নিয়মের মধ্যে এসেছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলার জন্য যেটা প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেছেন।
এর আগে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশিদ বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে আজকে আমরা কী দেখছি? ধর্মীয় স্কলার- যাদের আমরা আলেম বলি, তারা সাংঘাতিক নিপীড়নের মধ্যে রয়েছে। তারা রিমান্ড ও গ্রেপ্তারের সম্মুখীন। তাদের দয়া হয়ে মুক্তি দিন। না হলে দেশে ভারসাম্য নষ্ট হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের শীর্ষ ৫৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে দুদক নোটিশ দিয়েছে। এর আগে আমি মনে করি, আলেমদের আগে আমাদের সাড়ে ৩ শ এমপিদের বিরুদ্ধে দুদক নোটিশ দিলে তা সমাদৃত হতো।
এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, কোথায় মামলা করব? কার কাছে মামলা করব? কার কাছে অভিযোগ করব? কেউতো জিডি নিতে রাজি হচ্ছেন না- কথাটি বলছিলেন ত্ব-হার (আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান) স্ত্রী।
গত বৃহস্পতিবার থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন এবং তার সঙ্গে আরো তিন ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। একই সময়ে একই ধরনের অভিযোগ করতে দেখেছি চিত্রনায়িকা পরীমণিকে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি ভাগ্যবতী।
কারণ তার মামলা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি ত্ব-হার পরিবারের। সেই সৌভাগ্য হয়নি বাংলাদেশের ৬০৪টি পরিবারের।
যারা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। তাদের ব্যাপারে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু বলছে, না লোকাল পুলিশ স্টেশন কিছু বলতে পারছে।
সরকার যখন বলছে, তারা পরকীয়া করতে চলে গেছে, ঋণের বোঝা আছে, পারিবারিক কলহের জেরে চলে গেছে। তদন্তের ভিত্তিতে তারা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে সেটা বের করা সরকারের দায়িত্ব। বারবার বলা হয়, বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে।
বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে এই অর্থে যে, যখন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কোনো ব্যক্তিকে গুম করা হয়, তার পরিবার পায় না। বাবা-মা বলেন তাদের ছেলে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তার মানে সরকারি দল না করলে সরকারি মতের সঙ্গে না মিললে সে হাওয়া হয়ে যেতে পারে, নাই হয়ে যেতে পারে, এটাই বিরাজনীতিকরণ।
হারুন ও রুমিনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, হজ ও ওমরা থেকে আমরা পরীমনি আর গুমে চলে গেছি। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে গুম খুন আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো বিশ্বাস করি না।
ইসলামী স্কলারদের সম্মান করি। কিন্তু ওয়াজের নামে কিছু কিছু আলেম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। করোনা নিয়ে, ভ্যাকসিন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলো। মুসলমানদের করোনা হলে নাকি ইসলাম মিথ্যা হয়ে যাবে। এসব আলেমদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
সীমিত আকারে সব কিছু জায়েজ বলা যাবে না। সীমিত আকারে বিয়ে, সীমিত আকারে প্রেম, সীমিত আকারে ডেটিং- এগুলো করা যাবে না।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিভিন্ন ওয়াজ ফেসবুকে শুনি, একটির সাথে আরেকটির কোনো মিল নেই। উনারা একজন আরেক জনকে বলেন, প্রকৃত মুসলমান না। উনাদের বক্তব্য অনুযায়ী কেউই আসল মুসলমান নয়। এই সমস্ত বক্তব্য শুনলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়।