লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বেসরকারিভাবে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সোমবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আসনের ১৩৬ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলে।
এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১ লাখ ২২ হাজার ৫৪৭ ভোট ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী শেখ ফায়েজ উল্যাহ শিপন (লাঙ্গল) পেয়েছে ১ হাজার ৮৮৬ ভোট। নয়ন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শিপন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য।
উপনির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শেষ হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতির ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা হয়েছে। নির্বাচন অনুযায়ী জাতীয় পার্টি প্রার্থী শিপন জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচনে গৃহীত ভোটের আট ভাগের একভাগ ভোট না পেলে প্রার্থী জামানত হারান বলে গণ্য হন। সেই হিসেবে জাপা প্রার্থী শিপন ১ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি থাকায় ভোটকেন্দ্রগুলোতে আশানুরুপ ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি।
নির্বাচনী এলাকার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান করেছে। তারা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে ভোটারদের উৎসাহিত করে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।
এ ছাড়া প্রতিটি এলাকায় সম্ভাব্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট থাকলেও রায়পুরের রাখালিয়া ও বাসাবাড়িসহ ১৫-২০টি ছাড়া কোথাও লাঙ্গলের এজেন্টকে দেখা যায়নি।
ফায়িজ উল্যাহ শিপন বলেন, ভোটের নামে তামাশা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণকে ভোটারধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি। সরকারি বিভিন্ন ভাতা থেকে নাম কেটে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করা হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, জনগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করেছেন। সরকারের উন্নয়ন ও সুফলভোগের কারণেই জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের বিপুল রায় দিয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এ আসন থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এমপি নির্বাচিত হন। এরপর দুবারই তিনি এ আসনের এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৯৬ সালে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের উপনির্বাচনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া এমপি নির্বাচিত হন। এরপর এ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপি নির্বাচিত হয়।
২০১৪ সালে জোটগত কারণে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির নোমান ফের জোটগতভাবে মনোনয়ন পান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় এমপি নির্বাচিত হন। সেই পাপুল গেল বছরের ৬ জুন কুয়েতে ঘুষ কেলেঙ্কারি ও মানবপাচার মামলায় গ্রেপ্তার হন।
পরে কুয়েতের আদালত তাকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেয়। এতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচন দেওয়া হয়।