ইভ্যালি, আলেশা মার্টসহ ১০টি ই-কমার্স কম্পানির সঙ্গে একে একে লেনদেন স্থগিত করেছে দেশের চারটি বেসরকারি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স।
প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের প্রতি ওই সব ই-কমার্স কম্পানি থেকে পণ্য কিনতে তাদের ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছে। লেনদেন যদি করা হয় তবে তার দায়ভার তারা নেবে না।
এরই মধ্যে লোভনীয় অফার দিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম অর্থ গ্রহণ করে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনের ক্ষেত্রে লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লোভনীয় নানা অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছে পণ্য সরবরাহের আগেই ইভ্যালিসহ অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অর্থ নিচ্ছে এবং তা নিয়ে মানুষের হয়রানির অভিযোগ এসেছে।
সে জন্য কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পণ্য গ্রাহকদের হাতে পৌঁছানোর পরই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অর্থ পাবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিয়ন্ত্রণ করবে।
গত মঙ্গলবার কার্ডহোল্ডারদের কাছে পাঠানো ই-মেইল ও মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ইভ্যালি, আলেশা মার্টসহ ১০টি ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কিনতে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।
গ্রাহকদের কাছ থেকে কার্ডের মাধ্যমে আগাম মূল্য নেওয়ার পরও সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগ থাকা ইভ্যালিসহ কিছু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায় ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ।
নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নোটিশে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১০টি অনলাইন মার্চেন্টের সঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ড লেনদেনে ব্যবহার করা যাবে না।
এসব প্রতিষ্ঠান হলো ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউডটকম, বুমবুম, আদেন মার্ট ও নিডস। এটি ব্যাংকের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।
ব্যাংকটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, গণমাধ্যমে অনলাইন শপগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁরা সতর্কতামূলক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ধরনের অনলাইন মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রাহকদের লেনদেন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি ব্র্যাক ব্যাংকের নিজস্ব পর্যালোচনায়ও উঠে আসে বলে জানান তিনি।
ব্র্যাক ব্যাংকের পর ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংকও ইভ্যালিসহ ১০টি ই-কমার্স সাইটের সঙ্গে কার্ডে লেনদেন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স গ্রাহকদের বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছে, লঙ্কাবাংলার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কোনো লেনদেন করলে তার দায়ভার তারা বহন করবে না।
সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষও নোটিশ দিয়ে জানায়, আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন কেনাকাটা করে কেউ প্রতারণার শিকার হলে তার দায়ভার এ ব্যাংক বহন করবে না।
অনিয়ন্ত্রিত ই-কমার্স সাইটগুলোর মাধ্যমে হওয়া বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে উল্লেখ করা হয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিপরীতে এই অনলাইন শপগুলোর কোনো সম্পদ নেই।
গ্রাহকদের কাছে এবং পণ্য উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীদের কাছে বকেয়া বাড়ছে ইভ্যালির। এটি চলতি দায় ও লোকসানের দুষ্টচক্রে বাধা পড়েছে। ক্রমাগতভাবে এমন দায় তৈরি হয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে না থাকার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রথম বছর কম্পানিটির নিট লোকসান হয় এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা। গত ১৪ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ৩১৬ কোটি টাকায়। আগের দায় পরিশোধ ও লোকসান আড়াল করার জন্য কম্পানিটি ‘সাইক্লোন’, ‘আর্থকোয়েক’ নামের লোভনীয় অফার দিয়ে যাচ্ছে।