বাংলা সাহিত্যের একমাত্র সার্থক মহাকবি ও বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব মাইকেল মধুসূদন দত্ত ৷
মাইকেল মধুসূদন দত্ত যাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম ‘শ্রী মধুসূদন দত্ত ৷ তিনি বাংলা সাহিত্যের একমাত্র সার্থক মহাকাব্যিক ও মহাকাব্যের জনক, ট্র্যাজিক নাটকের স্রষ্টা, বহুভাষাবিদ, বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাট্যকার, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক ও জনক, কবি, নাট্যকার, প্রহসনকার, অনুবাদক, বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, বাংলা সাহিত্যের রেনেসাঁস, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি এবং বাংলা কাব্যসাহিত্যে আধুনিকতার জনক ৷
প্রথম যৌবনে মধুকবি পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন । জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি । এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন ৷ মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক । তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ নামক মহাকাব্য ৷ বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি নাটক “কৃষ্ণকুমারী” তাঁরই সৃষ্টি ৷
মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন ৷ মধুসূদন দত্ত তাঁর সাহিত্য জীবনে বিশেষ করে ইংরেজ কবি লর্ড বায়রন’র সাহিত্য কর্ম এবং তাঁর জীবন দ্বারা অত্যন্ত বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে ছিলেন । তাঁর মহান সৃষ্টি ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্য প্রকাশ এবং এটি পরিচিত করে তোলা যদিও খুব সহজ ছিল না, তারপরও তিনি নিজেকে মহাকাব্যটির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে এক স্বতন্ত্রভাব প্রকাশ করেছিলেন । তারই অংশ হিসেবে তিনি কাব্যে প্রথম হোমেরিক স্টাইলের লেখার প্রবর্তন করেন । তিনি এক সময় নিজেকে বলেছিলেন: “আমি এক সকালে উঠে নিজেকে সফল হিসেবে পাই নি, এই কাব্যের সফলতা বহু বছরের কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।”
মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে ছিলেন বহু ভাষাবিদ । শিশু কালে গ্রামের টোল থেকে তার ফারসি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে ভাষা শিক্ষার শুরু হয় । তিনি ইংরেজি ছাড়াও ল্যাটিন, গ্রিক, ফারসি, হিব্রু, তেলেগু, তামিল ইত্যাদি ভাষায় অনায়াসে কথা বলতে পারতেন । তিনি এমনকি ফারসি ও ইতালীয় ভাষায় কবিতাও লিখতে পারতেন । মাতৃভাষা ছাড়া তিনি আরো বারোটি ভাষা জানতেন । বাংলা সাহিত্যের এই জ্ঞানবান কবি বাংলা ও ইংরেজি দুই সাহিত্যেই সুপণ্ডিত ছিলেন ৷ এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের রেনেসাঁসের আবির্ভাব ঘটান তাঁর মহাপ্রতিভাশালী পাণ্ডিত্যের প্রভাবে! ইংরেজি সাহিত্য থেকে জ্ঞান আহরণ করে তিনি বাংলা সাহিত্যভাণ্ডে অনেক সাহিত্যসম্পদ উপহার দিয়েছেন ৷
আজ বাংলা সাহিত্যের এই মহাকবির প্রয়াণবার্ষিকীতে জানাই অশেষ শ্রদ্ধা ও সশ্রদ্ধ সম্মান ৷