দীর্ঘ সাত বছর পর মোটর সাইকেল চালককে কুপিয়ে হত্যা মোটরসাইকেল ডাকাতি করার অন্যতম আসামী মফিল ওরফে মফেলকে গ্রেফতার করলো পিবিআই, পাবনা। মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত আসামী মোঃ মফিল ওরফে মফেল (৫০), পিতা- মৃত মোসলেম মাল, সাং- আরীফপুর, থানা- বাঘা, জেলা- রাজশাহীকে গত ৩০/০৮/২০২১ খ্রিঃ, রাত অনুমান ২১.৩০ ঘটিকায় রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন বাজিতপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ০১/০৯/২০১৪ খ্রিঃ দিবাগত রাত অনুঃ ১১.৪০ ঘটিকায় মামলার ভিকটিম রফিকুল ইসলাম লাভলু ও তার খালাতো ভাই মোস্তকিন মনোয়ার ইশতিয়াক পাকশী চায়না কর্টেজ হতে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে পাকশী টোলপ্লাজা গোলচত্বরের কাছাকাছি ফাঁকা রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন ছিনতাইকারী রাস্তায় রশি দিয়ে তাদের গতিরোধ করে মারপিট, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় হাত, পা, মুখ বেঁধে রেল লাইনের পাশে ফেলে তাদের মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন ইত্যাদি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ধারালো অস্ত্রের জখমে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় ভিকটিম লাভলু পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ছিনতাইকারীরা উক্ত দুজনকে ছাড়াও একই স্থান হতে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের দুই জন কর্মচারী আব্দুর রশিদ ও হাসানুর রেজাকে একই কায়দায় গতি রোধ করে মারপিট করে হাত,পা,মুখ বেঁধে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে তাদের মোটরসাইকেল,মোবাইল ফোন ইত্যাদি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিকটিম লাভলুর ভাই মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বাবলু বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় মামলা নং-০১, তাং-০২/০৯/২০১৪ খ্রিঃ, ধারা-৩৯৪/৩০২ পেনাল কোড দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ তদন্ত করে।
পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার সিআইডি গ্রহণ করে তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সিআইডি অভিযোগপত্র দাখিল করলে মামলার বাদী উক্ত অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে না-রাজি দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত মামলার তদন্তভার পিবিআই,পাবনার উপর অর্পন করে। ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্তাবধান ও দিক নিদের্শনায় পিবিআই পাবনা ইউনিট ইনর্চাজ পুলিশ সুপার জনাব মোঃ ফজলে এলাহী এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জনাব মোঃ আসাদউজজামান মামলাটি তদন্ত করেন।
উক্ত মামলার তদন্তভার গ্রহন করে কিছুদিনের মধ্যেই তথ্য-প্রযুক্তি সহায়তায় উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিকে সনাক্ত করে পিবিআই পাবনা। পিবিআই, পাবনার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ ফজলে এলাহীর এর সার্বিক তত্তাবধানে মূল আসামীদেরকে গ্রেফতারের জন্য টিম গঠন করা হয়। মামলার মূল আসামীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তারই অংশ হিসেবে অনেক কৌশল অবলম্বন করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে আসামী পলাশ কে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে আসামী পলাশকে ০২ (দুই) দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
অতঃপর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামী পলাশ মামলার ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে এবং অন্যান্য সহযোগী আসামীদের নাম প্রকাশ করে বিস্তারিত তথ্যাদি প্রকাশ করে। রিমান্ড শেষে আসামী পলাশকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে বিজ্ঞ আদালতেও মামলার ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ও অন্যান্য সহযোগী আসামীদের নাম প্রকাশ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। আসামী পলাশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আসাদউজজামান এর নেতৃত্বে পিবিআই, পাবনা জেলার একটি চৌকস টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত ৩০/০৮/২০২১ খ্রিঃ সময় অনুমান রাত ২১.৩০ ঘটিকায় রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন বাজিতপুর এলাকা হতে আসামী মোঃ মফিল ওরফে মফেল (৫০) কে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার কৃত আসামী মোঃ মফিল ওরফে মফেলকে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উক্ত আসামী জানায় যে প্রায় ০৭ (সাত) বছর আগে সে ও তার অপরাপর সহযোগী আসামীরা মিলে রাত্রিবেলায় রূপপুর গোল চত্বরের উত্তর পাশের রেল লাইনের ধারে রাস্তায় রশি ধরে মোটরসাইকেল আরোহীদের গতিরোধ করত মারপিঠ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ০২ (দুই) টি মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। গ্রেফতারকৃত আসামী ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে অপরাপর সহযোগী আসামীদের নামসহ বিস্তারিত তথ্যাদি প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে পাবনা জেলার পিবিআই এর এসপি জনাব মোঃ ফজলে এলাহী বলেন উক্ত আসামীকে গত ৩১/০৮/২০২১ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী মোঃ মফিল ওরফে মফেল (৫০), পিতা- মৃত মোসলেম মাল, সাং- আরীফপুর, থানা- বাঘা, জেলা- রাজশাহী নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর আসামীর নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চলমান রয়েছে।