চাপা পড়ে যায় নাদিয়ার কাঠমিস্ত্রী হবার স্বপ্ন

ছোটবেলায় আমারে কেউ ‘বড় হয়ে কী হতে চাও মামনি?’ জিগাইলে আমি কইতাম, আমি দারোয়ান হইতে চাই।

আমার ধারণা ছিলো সকল দারোয়ানদের একটা কইরা মই থাকে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মইয়ের ব্যাপারে আমার অসীম আগ্রহ ছিলো ঐকালে।

এর চাইতে আরেকটু বড় হইলে লোকজন একই প্রশ্ন জিগাইলে আমি কইতাম, আমি কাঠমিস্ত্রী হইতে চাই। ততদিনে আমি টের পাইছি, আমার বাপমায়ের পয়সা থাকা স্বত্ত্বেও আমারে মই কিনা দেয়ার কোনো ইহলৌকিক বাসনা উনাদের নাই। আমি ততদিনে জানি, মইয়ের অভাব পূরণ করতে তাই কাঠমিস্ত্রী হওয়া ছাড়া আমার আর গতি নাই!

কিন্তু এইদিকে বড় হইতে হইতে আর বেহুদা পড়ালেখা করতে করতে আর এক দেশ থিকা আরেক দেশে দৌড়াইতে দৌড়াইতে শেষ পর্যন্ত গবেষক হওয়ার পথে আমার কাঠমিস্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ক্যামনে ক্যামনে জানি চাপা পইড়া গেল!

হয়তো সব স্বপ্নেই পাঠকের মৃত্যু হয়, হয়তো সব স্বপ্নই চান বই শেষ হওয়ার আগেই ট্রেন আসুক, হয়তো সব স্বপ্ন সেল্ফ স্যাবোটেজিং, হয়তো সব স্বপ্নই মানুষের সাথে বৃদ্ধ হন!

তবে মাঝেমধ্যেই ঝড়ের রাতে সিনেমা দেখতে দেখতে আর এক দেশ থিকা আরেক দেশে দৌড়ানোর মাঝে আমার পেটের মধ্যের সেই বয়স বাড়া কাঠমিস্ত্রীর স্বপ্ন নামক ভূত আমার শরীরের ফুটাফাটি দিয়া বাইর হইয়া আসেন!

এই ডায়নিং টেবিল এবং তিনখানি স্টুল আমার এবং সেই বৃদ্ধ ভূতের বানানো। আমি এবং ভূতসাহেব কাঠ কাইটা, স্যান্ডিং কইরা, প্রাইমার, স্টেইন, ল্যাকার, পলিক্রিলিক নিয়া গলদঘর্ম হইয়া, পুরানা গেঞ্জি কাইটা, পুরানা ম্যাগাজিন ছিঁড়া এই জিনিস দাঁড়া করাইছি।

এবং আমরা দুইজন এখন পর্যন্ত আমাদের সৃষ্টিকর্মের দিকে প্রেমপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাইকাই দিনানিপাত করতেছি। আগামীকাল দুপুরে টেবিলে বইসা ভাত খাইতে যাওয়ার পরে আমাদের আর খোঁজ না পাইলে বুঝবেন, টেবিল ভাইংগা আমরা ইন্তেকাল ফরমাইয়া পরকালে মইয়ের দোকানে গেছি!

আফটার অল, টেবিল তো আর মই না!