রাজধানীর সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশে চালু হতে চাওয়া বহুল আকাঙিক্ষত মেট্রোরেল। কেমন হবে এই রেল, বগিগুলো কেমন হবে, পুরোনো ট্রেনগুলোর মতো দেখতে হবে না একেবারে নতুন ধরনের হবে, কী রঙের হবে কিংবা নিদেনপক্ষে কত আসনের হবে-তা নিয়ে যেন আগ্রহের কমতি নেই।
এবার সেই আগ্রহ মেটাতেই যেন দেশে এসেছে মেট্রোরেলের প্রথম কোচ। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে কনটেইনার থেকে বের করে খোলা হয়েছে নতুন কোচটির মোড়ক।
যদিও কোচটি সরাসরি মেট্রোরেলে সংযুক্ত করা হবে না। অর্থাৎ এটি যাত্রী পরিবহন করবে না। এটি মূলত প্রদর্শন করা হবে। সেইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে মেট্রোরেলে চড়তেও শেখানো হবে এই কোচটির মাধ্যমে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, জাপানের মিৎসুবিশি ও কাওয়াসাকি থেকে তৈরি করে আনা হয়েছে কোচটি। তবে এটি যাত্রী টানবে না। স্রেফ প্রদর্শন করা হবে। মূলকোচগুলোর আদলেই এটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ মূলকোচগুলো যে উপাদান দিয়ে যেভাবে তৈরি করা হবে এটিও সেভাবেই তৈরি হয়েছে। উত্তরায় মেট্রোরেলের যে তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে এটি সাধারণ মানুষের দেখার ও শেখার জন্য রাখা হবে।
আগামী মাস থেকেই কোচটি প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যাত্রীবাহী মেট্রোরেলের মূল কোচগুলো আগামী ১৫ জুন বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে। গত এক বছর ধরে জাপানে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। দেশে আসার পর এগুলো অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার (ওসিসি) এর সঙ্গে মিলে চলতে পারছে কিনা তার জন্য ট্রায়াল রান দেওয়া হবে। এভাবে একটা একটা করে ট্রেন আসবে। প্রতি সেট ট্রেন আসার পর এভাবে ট্রায়াল রান দেওয়া হবে।
এম এ এন ছিদ্দিক আরও জানান, উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোর পাশে ভিজিটর সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শন কেন্দ্রের ভেতরেই রাখা হবে নমুনা ট্রেনটি। সেখানেই দর্শনার্থীদের টিকেট কাটা, ট্রেনে চড়া, দাঁড়ান, ট্রেন থেকে নামা- এসব বিষয়ে ধারণা দেওয়া হবে।
২০২১ সালে বিজয়ের মাসে প্রথম মানুষ মেট্রোরেলে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডিএমটিসিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশে আসা মেট্রোরেল ট্রেন সেট জাতীয় পতাকার রঙে সাজানো থাকবে। অর্থাৎ মেট্রো কোচে লাল সবুজের প্রলেপ থাকবে। পুরো ট্রেন সেট বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগি করতে স্টেনলেস স্টিলের করা হয়েছে। কোচের গ্লাসের অংশ বুলেটপ্রুফ রাখা হয়েছে।’
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, একেকটি কোচে ১ হাজার ৭৩৮ জন যাত্রী একবারে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে বেশিরভাগ যাত্রীকে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দাঁড়ানোর জন্য সুব্যবস্থা থাকবে ট্রেনের ভেতর। প্রতিটি কোচের দুদিকে চারটি দরজা থাকবে। ট্রেনে সিটের ধরন হবে লম্বালম্বি এবং প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইলচেয়ারের পাশাপাশি রাখার ব্যবস্থা। প্রতিটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে একটি কোচ শুধুমাত্র নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি সবগুলোতে নারী-পুরুষ একসঙ্গে যেতে পারবেন।