সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, আয়ারল্যান্ড থেকেঃ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ছিলো আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত বাঙ্গালিদের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের সাবেক সভাপতি জনাব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে প্রথম বারের মতো এ দিনে আয়ারল্যান্ডস্থ ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটির স্টোকস বিল্ডিং এ ( DCU STOKES BUILDING) অমর একুশে গ্রন্থ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলাকে কেন্দ্র করে দেশটির সব ক’টি কাউন্টি (জেলা) থেকে শুধুমাত্র সংস্কৃতিমনা ও বইপ্রেমী নয়, সকল শ্রেণীর লোকের সমাগম ঘটে এবং স্টোকস বিল্ডিংটি বাঙ্গালির এক মহা মিলন মেলায় পরিণত হয়। বিল্ডিংএর প্রধান ফটকে ২১শে বইমেলার উপর অংকিত রংবেরঙের আলপনা আগন্তুকদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটিয়ে দেয়। তাদের কাছে মনে হয় এ যেনো আয়ারল্যান্ড নয়, এক খন্ড বাংলাদেশ। বিচরণ করছে যেনো ঢাকারই বইমেলার ভেতর।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিলো বইয়ের স্টল। হরেক রকমের প্রচ্ছদে আবৃত নামীদামি লেখকদের বইয়ে ভরপুর ছিলো স্টল গুলো। একুশ ও দেশের গান এবং চোখ জুড়ানো এসব স্টল মেলাকে যেনো প্রাণবন্ত উৎসবে পরিনত করে।
মেলাটি দুটো পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক লুবনা হোসেনের উপস্থাপনায় কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন এমেরিটাস প্রফেসর এম এস জে হাসমী। তিনি তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এ মেলাকে আরও সমৃদ্ধ ও ব্যপক পরিসরে গড়ে তুলতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন এবং মেলার আয়োজক বৃন্দ ও আগত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
আয়োজক প্রধান জনাব মোস্তাফিজুর রহমান প্রথমেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। যাদের আন্তরিক সহযোগিতা, প্রচেষ্টা ও কায়িক পরিশ্রম ছাড়া এ মেলার আয়োজন আদৌ সম্ভব হতোনা তিনি তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনেক দূর দূরান্ত থেকে এসে যারা এ মেলার শ্রী বৃদ্ধি করেছেন তাদের প্রতিও তিনি জানান অশেষ কৃতজ্ঞতা। মেলার প্রতি মানুষের এতো আগ্রহ ও সাড়া তাকে অভিভূত করে তোলে। তাই ভবিষ্যতে এ মেলাকে আরো সুন্দর ও নান্দনিক করে তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন কর্মপাগল সমাজ দরদী এ মানুষটি।
একুশে বই মেলার উপর কবি ও লেখক সাজেদুল চৌধুরী রুবেলের স্বরচিত প্রবন্ধ পাঠের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের।
তরুণ বইপ্রেমী রন্টি চৌধুরী এবং আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য ও সমাজ কর্মী কাজী কবিরের যৌথ উপস্থাপনায় শুরু হয় অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা ও ছড়া পাঠ এবং দেশার্থ বোধক গানের আসর। পাশাপাশি সারাদিন চলে ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক আড্ডা। শিশুদেরকে দেশীয় ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করে দেয়ার লক্ষ্যেই মূলত এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন।
১৯৯২ সালে লিখা স্বরচিত প্রেমের কবিতা পাঠ করেন অন্যতম সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্যপ্রেমী জনাব জামাল বাছির। অন্যদের মধ্যে ছিলেন কবিতা প্রেমিক জনাব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান,কামরুন্নাহার রুনু, রুনা জলিল, দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আয়ারল্যান্ড বসবাসরত কবি সাহিত্যিক ছাড়াও যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম সর্ব জনাব ড সালেহীন, ড রুবেল, সামছুল হক, জহিরুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, জামাল বাছির, ফিরোজ হোসেন, ফখরুজ্জামান মিল্লাদ, শাহীন রেজা, রাজ আমিন, অলক সরকার, আনোয়ারুল হক, মোঃ তাউজ, মেহেদী হাসান, নিপা, রুনু প্রমুখ।
সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাবলিন বাংলা বার্তার সম্পাদক মনিরুজ্জামান মানিক, আইরিশ বাংলা টাইমসের সম্পাদক আব্দুর রহিম ভূঞা, এন টিভির আয়ারল্যান্ড প্রতিনিধি জাহেদ মমিন চৌধুরী ও সময় টিভির সৈয়দ জুয়েল।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনায় ছিলেন তারা হলেন সর্ব জনাব আকতার হোসেন ও তার পরিবার, মোহাম্মদ মোস্তাফা, শাহাদাত হোসেন, মেহেদী হাসান, মাসুদ শিকদার, সাইফুল ইসলাম, কাজী কবির, আবদুল জলিল, শাহরিয়ার হোসেন, আসিফ হোসাইন হিরন, আশিকুর রহমান, সাগর আহমেদ শামীম শান্ত প্রমুখ।
মেলায় কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে ছিলো দুপুরের খাবার ও সারাদিন চা কফি পরিবেশনের ব্যবস্থাপনা।