অবশেষে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই নির্মাণ করা হচ্ছে ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক। কেননা এ প্রকল্পের অর্থায়নে বিদেশি কোনো অর্থায়নকারী সংস্থা এখনো আগ্রহ দেখায়নি।
তবে কাজ শুরুর পরও অর্থায়নকারী বিদেশি সংস্থাকে যুক্ত হওয়ার সুযোগ খোলা রাখা হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ আইনের ভিত্তিতে। নতুন করে এ প্রকল্পের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব তৈরি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে এই ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে খসড়া অ্যালাইনমেন্টও তৈরি করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত নকশা পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। খসড়া অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী সড়কটি টঙ্গী খাল থেকে শুরু হয়ে তুরাগ নদের পাশ দিয়ে তেরমুখ ব্রিজ হয়ে বালু নদের পাশ দিয়ে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে অতিক্রম করে বালু নদের পাশ দিয়ে মাদানি এভিনিউর দিকে মিলিত হবে।
পাউবো সূত্র জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশেই কমে যাবে। যানবাহনগুলো ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যেতে পারবে ঢাকার ভিতরে না ঢুকেই। এতে একদিকে রাজধানী ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে আসবে, অন্যদিকে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার সময়ের দূরত্ব কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানান, নতুন ডিপিপিতে এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকাই ব্যয় হবে প্রকল্প এলাকার জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন খাতে। অথচ ১৯৯৯ সালে যখন এ প্রকল্পের প্রথম পরিকল্পনা করা হয়, তখন সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল (জিওবি) থেকে ১ হাজার ৯৩ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা জোগানের পরিকল্পনা করা হয় সে সময়। প্রথম দিকে বিশ্বব্যাংক এতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখালেও পরে সংস্থাটি এ থেকে সরে দাঁড়ায়।
পরবর্তী সময়ে জাইকা এতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখায়। জাইকা প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও করেছে। সংস্থাটি এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা, উপকারিতা, উপযোগিতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি প্রেজেন্টেশনও দেয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিকতা আর অর্থায়নের শর্ত জটিলতার কারণে সে আলোচনাও ভেস্তে যায়।
ফলে অর্থায়নকারী সংস্থা চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রায় ২০ বছর পার হলেও এখনো প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যায়নি। জানা যায়, ২০১৬ সালের শুরুতে জাইকার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রকল্পটি সম্পর্কে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন।
এরপর আর কোনো কাজ এগোয়নি। ২০১৮ সালের শেষ দিকে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান সরকার এ প্রকল্পটি নিয়ে আবারও কাজ শুরু করে। গত এক বছরে প্রধানমন্ত্রীর সামনে নতুন করে প্রেজেন্টেশন দেয় পাউবো। অর্থায়নকারী বৈদেশিক সংস্থা আগ্রহ না দেখানোয় সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এজন্যই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন করে ডিপিপিও তৈরি করেছে পাউবো।
জানা যায়, প্রকল্পটি ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদনের পর কেটে গেছে প্রায় ২০ বছর। প্রকল্পটির রুট নির্দিষ্ট করা হলেও নকশা এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিগগিরই এর নকশা চূড়ান্ত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, এ প্রকল্পটি নিয়ে মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছিল প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এতে জাইকা তাদের বিশদ পরিকল্পনাও তুলে ধরে। আশা করা হচ্ছে প্রকল্পটির কাজ দ্রুত করা যাবে। ইতিমধ্যে এর রুট মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে। এখন নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানান, ঢাকা মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ঢাকার অভ্যন্তরে যানবাহনের চাপ কমাতে ঢাকার উত্তর দিকে টঙ্গী খাল, দক্ষিণে ঢাকা-ডেমরা রোড, পূর্বে বালু নদ এবং পশ্চিমে প্রগতি সরণি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ইস্টার্ন বাইপাস রোড নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পের ধারণাপত্র (পিসিপি) অনুমোদিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্য সূত্র জানান, ‘ঢাকা সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক বহুমুখী প্রকল্পের’ জন্য যৌথভাবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০০০ সালে কিছু কাজ করে। এ দুই প্রকল্পের জন্য সংস্থাটি এ সময় ৭০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে।
এর অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক টঙ্গী থেকে শাহ আলী মাজার পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পাকা করা হয়। পাশাপাশি তুরাগ নদের তীর ঘেঁষে কয়েক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে ২০০৩ সালে কাজ স্থগিত হয়ে যায়।
পাউবোর তথ্যমতে, ইস্টার্ন বাইপাস সড়কটি উত্তর দিকে টঙ্গী খাল, দক্ষিণে ঢাকা-ডেমরা রোড, পূর্বে বালু নদ এবং পশ্চিমে প্রগতি সরণি দিয়ে পরিবেষ্টিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার ভিতরে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। কেননা এ বাইপাস ব্যবহার করে গাড়িগুলো ঢাকার ভিতরে প্রবেশ না করেও রাজধানীর এক পাশ থেকে অন্য পাশে চলাচল করতে পারবে।