সাম্প্রতিক শিরোনাম

উত্তাল ১৫ মার্চঃ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়েছে বাঙালির- মোহাম্মদ হাসান

উত্তাল ১৫ মার্চ ১৯৭১ঃ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়েছে বাঙালির। ওদিকে গণহত্যার মাধ্যমে বাঙালিকে স্তব্ধ করে দেয়ার ছক কাটছে ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা।
ষড়যন্ত্রের কৌশল হিসেবে ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তাকে বাঙালিদের পক্ষ থেকে কোনো স্বাগত জানানো হয়নি। বিমানবন্দরের সব পথ সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। চারদিকে সৈন্যরা পাহারায় ছিল। প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল ১৮ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের এক কোম্পানি সৈন্য। মেশিনগানে সজ্জিত ছিল গাড়ি।
ঢাকা সফর সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন- “প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বাংলাদেশের অতিথি হিসেবে স্বাগত জানানো হবে।” ইয়াহিয়ার বিমান শ্রীলংকা ঘুরে ঢাকায় পৌঁছে বিকাল ৩টায়।
এ সময় পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি কতটা নাজুক ছিল তা পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালিকের গ্রন্থে (উইটনেস টু সারেন্ডার) জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তিনি লিখেছেন, আমি অনেক প্রেসিডেন্ট আর দেশের প্রধানদের আগমন দেখেছি, কিন্তু ১৫ মার্চ ঢাকায় যে পরিবেশের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এসে অবতরণ করলেন, তা আমি কখনই ভুলব না। বিমানবন্দরে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
টার্মিনাল ভবনের ছাদের ওপর স্টিলের হেলমেট পরা প্রহরীদের দাঁড় করান হয়। বিমানবন্দর ভবনের প্রতিটি সদস্যকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। পিচঢালা পথে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা পিএএফ গেটে সেনাবাহিনীর ভারি অস্ত্রে সজ্জিত একটা দলকে বসানো হয়।
পদাতিক সৈন্যের (১৮ পাঞ্জাব) ট্রাকভর্তি একটি কোম্পানি (প্রায় ১০০ জনের) ফটকের বাইরে মেশিনগান নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে করে শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সতর্কতার সঙ্গে বাছাই করা অল্প কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিমানবন্দরের ভেতরে থাকার অনুমতি দেয়া হয়। তাদের বিশেষ নিরাপত্তা পাস দেয়া হয়।
কোনো ফুলের তোড়া ছিল না, ছিল না কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা, শহরের অভিজাতদের কেউ নেই, নেই সাংবাদিকদের ধাক্কাধাক্কি বা ক্যামেরার ক্লিক। এমন কি সরকারি ফটোগ্রাফারকেও অনুমতি দেয়া হয়নি। এ ছিল এক অদ্ভুত ভীতিকর পরিবেশ, যেখানে জড়িয়ে ছিল মৃত্যুর স্তব্ধতা।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর তথ্য মতে,অহিংস আন্দোলনের চতুর্থ দিনে সারা বাংলায় অফিস আদালতে পূর্ণ কর্মবিরতি চলে। রাজধানী ঢাকায় দিনব্যাপী সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভবনের শীর্ষে এবং যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ে।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কড়া নিরাপত্তার মধ্যে করাচী থেকে ঢাকায় আসেন। বিমানবন্দরে সামরিক গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান তাঁকে স্বাগত জানান। কোন সাংবাদিক ও বাঙালিকে এ-সময় বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি।
কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডে মহিলাদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেতার ও টিভি শিল্পীবৃন্দ দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে গণসঙ্গীত, পথনাটক পরিবেশন করেন।
নতুন সামরিক বিধি জারির প্রতিবাদে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ছাত্র সভার আয়োজন করে। সভায় ছাত্র নেতৃবৃন্দর অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য প্রেসিডেন্টে প্রতি আহ্বান জানান।
খুলনার হাদিস পার্কের জনসভায় বাংলা জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান বলেন, বাংলার প্রতিটি মানুষ আজ বঙ্গবন্ধুর পেছনে একতাবদ্ধ। তিনি বলেন রেডিও,টিভি, ইপিআর, পুলিশবাহিনী, সেক্রেটারিয়েট প্রভৃতি আজ আওয়ামী লীগ প্রধানের আজ্ঞাবাহী।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন দাবি উথ্থাপন করে বলেন, কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে।
করাচীতে এক জনসভায় কয়েকজন প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা বলেন, জনাব ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন তার পিপলস পার্টি এই অঞ্চলে শতকরা আটত্রিশ ভাগ ভোটও পান নি। তাঁরা বলেন ক্ষমতা লাভ করার জন্য আওয়ামী লীগই একমাত্র দল।
রাতে ঢাকায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ বিবৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাখ্যা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই আহ্বানে জনগণের নিরঙ্কুশ সাড়া পাওয়া গেছে।তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। এর মাঝে একটি এজেন্সিও দিয়েছেন নাম...

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া...

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...