২১ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চীনের সামরিক বাহিনীকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শি জিন পিং সরকার বিগত এক দশকে সামিরক বাজেট বৃদ্ধি করেছে আট গুণ। যেখানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়কারী দেশ হিসেবে ২০১৪ সালে সামরিক বাজেট বরাদ্দ ছিল ১২৮ বিলিয়ন ডলার এবং তা ২০১৮ সালের শেষে এসে ২৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌছেছে। আবার ২০১৯ সালে চীনের সার্বিক সামরিক খাতে ব্যয় ২৬০ কিম্বা চলতি ২০২০ সালে তা ৩০০ বিলিয়ন ডলারে পৌছে যে যাবে না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না।
তাছাড়া চীন অত্যন্ত গোপনে সামরিক ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি গবেষণা, উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে ৫০ বিলিয়ন ডলারের অধিক প্রতি বছর ব্যয় করে যাচ্ছে এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা প্রায় ১০% এর নিচে নেমে এসেছে। যদিও চীনের সামরিক ব্যয় এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত নিরপেক্ষ কোন মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রমান করার সুযোগ নেই বললেই চলে। পাশাপাশি বিদেশেও চীনা সেনা এবং নৌ ঘাঁটি বাড়ানো হচ্ছে। তারই ধরাবাহিকতায় এই প্রথম জিবুতিতে মিলিটারি বেস খুলেছে বেইজিং এবং পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়ে বাড়ানো হচ্ছে সামরিক তৎপরতা।
যদিও চীন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, চীনের এই সামরিক উন্নয়ন কাউকে আক্রমণ করার জন্য নয়। কিন্তু শি ডাক দিয়েছেন, ভবিষ্যতে চীনের প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে এবং জয়ী হবে, এমন সেনাবাহিনীই গড়ে তোলা হবে। আর চীনা প্রেসিডেন্টের এই হুঙ্কারে আতঙ্কিত জাপান ও ভারত। প্রসঙ্গত, হিমালয়ের কোলে বেশ কিছু এলাকা নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্তে দীর্ঘ মেয়াদী চাপা উত্তেজনা এবং বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় একাধিক ছোট দেশগুলোতে নিজস্ব প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে চরম মাত্রায় প্রতিযোগিতা এবং মত বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে দেশটি। তাছাড়া জাপানের সঙ্গেও জলপথ নিয়ে সংঘাত রয়েছে বেইজিংয়ের। দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা নিয়ে ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স ও মালয়েশিয়ার সঙ্গেও দেশটির বিবাদ এবং মত বিরোধ পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত।
দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানাকে কেন্দ্র করে চীনের এক গুয়েমী এবং আগ্রাসী আচরণ বিপদজনক পর্যায়ে পৌছে গেছে। আর এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আড়ালে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চলছে এক নিরব ও ভয়াবহ সমর প্রস্তুতি। বিশেষ করে চীনের মোকাবেলায় জাপান কিন্তু নিজেকে আবার উচ্চ মাত্রায় সামরিক প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা অর্জনে ধীরে ধীরে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি আগামী ২০৩০ এর মধ্যেই যুদ্ধবাজ ও কলহ প্রিয় মার্কিন ইন্ধনে জাপানে আবার নতুন করে সামরিক এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। আর তা কিন্তু নিশ্চিতভাবেই চীনের জন্য হয়ে উঠবে অতি মাত্রায় বিপদজনক।
উদীয়মান অর্থনৈতিক এবং সামরিক পরাশক্তি হিসেবে এক বিংশ শতাব্দীর শুরুতে চীনের নব্য উত্থান এবং অগ্রযাত্রা মার্কিন ও তার ইউরোপীয় সম্রাজ্যবাদী শক্তির ভীতকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে চীনের গোপন সম্রাজ্যবাদী নীতি এবং আগ্রাসী মনোভাব বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ পেতে খুব একটা সময় লাগেনি। যদিও ডিসেম্বর ২০১৭ অনুযায়ী চীনের বার্ষিক জিডিপি ১২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার এবং যা বিগত ১৯৯৫ সালে ছিল মাত্র ৭৩৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ১৯৯৫ সালে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির আকার ছিল ৭.৬৭ ট্রিলিয়ন ডলার। চীন ২০১৭ সালে একচেটিয়াভাবে বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে সুবিশাল আকারের গড়ে ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমান রপ্তানি বানিজ্য করে গেলেও কিন্তু কৌশলগত বৈশ্বিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, মায়ানমার এবং উত্তর কোরিয়ার মতো কিছু বিতর্কিত দেশের সাথে। এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, একমাত্র রাশিয়া বাদে চীনের কৌশলগত অংশীদারিত্বের অন্যান্য দেশগুলো কার্যত অর্থনৈতিকভাবে এক রকম প্রায় মেরুদন্ডহীন বলা চলে।
এ মুহুর্তে চীনের একাধিক রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ রিজার্ভকারী দেশ হিসেবে ৩.১৮ ট্রিলিয়ন ডলার। যদিও সাম্প্রতিক মার্কিন-চীন বানিজ্য যুদ্ধের জেড়ে দুই মাসের মধ্যেই চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশাঙ্খাজনকভাবে ২২.৫০ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। তাছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান চীন ঠেকাও বৈদেশিক নীতি এবং এক তরফা কর ও শুল্কারোপের কারণে বিশ্বের অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এখানে সবচেয়ে ভয়াবহ রকমের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে চীনের অর্থনীতি। মনে হচ্ছে মিস্টার ট্রাম্প চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থান ঠেকাতে বেশ কোমড় বেধেই লেগেছেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত চীনের প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলারের পন্যের উপর ২৫% হারে কর ও শুল্কারোপ করে বসে। এর পাল্টা জবাব হিসেবে চীনের শি জিং পিং সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের পন্যের উপর সমপরিমাণ শুল্কারোপ করে। যেমন মার্কিন নীতির অন্যতম বিরোধী হুগো শ্যাভেজের দেশ ভেনিজুয়েলার অর্থনীতির আজ ট্রাম্পের কুটকৌশল এবং অর্থনৈতিক অবরোধের কবলে পড়ে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হবার পথে। দেশটিতে আজ মুদ্রাস্ফীতি হার ৮০০০% এবং দেশীয় মুদ্রার মান বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে, আপনি যদি এক কেজি মুরগীর মাংস কিনতে ভেনিজুয়েলার কোন বাজারে যান। তবে আপনাকে নিশ্চিতভাবে ভেনিজুয়েলার মুদ্রায় প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা ব্য়য় করতে হবে।
অক্টোবর ২০১৮ হিসেব অনুযায়ী চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩.১৮ ট্রিলয়ন ডলার, ভারতের ৩৯৯.৬৭ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশের ৩৩.২৯ বিলিয়ন ডলার, শ্রীলংকার ৮.৮ বিলিয়ন ডলার, মায়ানমারের ৫.৮ বিলিয়ন এবং চীনের অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র পাকিস্তানের মাত্র ৭.৭ বিলিয়ন ডলার। দীর্ঘস্থায়ী চরম অর্থনৈতিক সংকট এবং বৈদেশিক দেনায় জর্জরিত ২১ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানের মাথাপিছু ঋনের পরিমাণ প্রায় ১,৩৫,০০০ রুপী। নব গঠিত পাকিস্তানের ইমরান সরকার দেশটির অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কাটিয়ে উঠতে সৌদি আরব ও চীনসহ একাধিক দেশের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেও চীন কিন্তু এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানকে রক্ষায় অর্থ সহায়তার সুস্পষ্ট কোন অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে বলে মনে হয় না। যদিও অবশ্য সৌদি আরব অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় পাকিস্তানকে ৬ বিলিয়ন ডলারের নগদ অর্থ সহায়তা বা ঋন মঞ্জুর করতে যাচ্ছে। অথচ চীন কিন্তু পাকিস্তানের বৈদেশিক বানিজ্যের প্রধান সুবিধাভোগী এবং চীনের সমরাস্ত্র রপ্তানির ৪০% সরাসরি চলে যায় পাকিস্তানে এবং ২৪% যায় মায়ানমারে এবং ১৬% বাংলাদেশে।
চীন বিগত দুই তিন থেকে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে অবিশ্বাস্যভাবে ওঠে-পড়ে লেগেছে। চীনের শি জিং পিং সরকার কার্যত দীর্ঘ মেয়াদী এ লক্ষ্য অর্জনে আধুনিক সমরাস্ত্র উৎপাদন এবং উন্নয়নে নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়ে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার স্পর্শকাতর সামরিক প্রযুক্তি হাতিয়ে নিয়ে কিম্বা ক্লোন কপি করে হলেও তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনে শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পর আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশে হিসেবে নিজেকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গোপনে ব্যাপক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বেইজিং এবং তাদের সামরিক বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ রাখা হয় উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে। খুব সম্ভবত চীন তাদের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় প্রতি বছর প্রায় ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি সমমুল্যের অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারে রপ্তানির লক্ষমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। যদিও অবশ্য চীনা সরকার তাদের প্রকৃত সামরিক প্রযুক্তিগত গবেষণা এবং উন্নয়নে বিশ্বের সামনে কৌশলগত কারণে তেমন কোন তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করে না।
চীন অবশ্য বিগত তিন দশক ধরে তাদের নিজস্ব সামরিক প্রযুক্তিগত গবেষণা এবং উন্নয়নে বিপুল বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করার পাশাপাশি নিজস্ব প্রযুক্তি ও ক্লোন কপি প্রযুক্তির সমন্বয়ে মাঝারি ও উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র উৎপাদন এবং আনুমানিক ত্রিশটি দেশে স্বল্প পরিসরে হলেও সামরিক সাজ সরঞ্জাম এবং যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানি করে যাচ্ছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানি ১০% এর নিচে নেমে আসলেও এখনো পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। চীন কার্যত এখনো পর্যন্ত জেট ইঞ্জিন উৎপাদন এবং আধুনিকায়নে রাশিয়ার উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। তাছাড়া চীন প্রধানত রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র অমদানি করে যার আনুমানিক বাজার মূল্য আনুমানিক ১৩.০০ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি। কিন্তু আন্তজার্তিক অস্ত্র রপ্তানি বানিজ্যে চীনের বৈপ্লবিক সাফল্য অর্জন ও সক্ষমতা বিশ্বের প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলো এবং রাশিয়ার ভবিষ্যত অস্ত্র রপ্তানির বানিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক চ্যালেঞ্জিং বা হুমকীর মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করা হয়।
চীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি ব্যাপকভাবে উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন বৃহৎ আকারের যুদ্ধ বিমান, ফ্রিগেট, কমব্যাট এন্ড ইন্টালিজেন্স ড্রোন, সাবমেরিন, এন্টিশীপ এ্যন্ড সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, লং এন্ড মিডিয়াম রেঞ্জের ক্রুজ ও ব্যালেস্টিক মিসাইল ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। তাছাড়া বৈশ্বিক অস্ত্র বানিজ্যে তুলনামুলক স্বল্প মূল্যে সহজ শর্তে আধুনিক সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানির এবং সরবরাহের মাধম্যে চীন আগামী এক দশকে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজার দখল করে নিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যে চরম অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে আমেরিকা, ইউরোপীয় দেশগুলো এবং রাশিয়ার পক্ষে তাদের নিজস্ব প্রভাব ও প্রাধান্য ধরে রাখা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।
চীনের অত্যাধুনিক অস্ত্রের বাজার মূল্য ইউরোপ কিম্বা যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার তুলনায় যথেষ্ট কম বা সস্তা হওয়ায় এবং প্রযুক্তিগত কম জটিল সম্পন্ন এবং পাশাপাশি পরিচালনা অধিকতর সহজতর হওয়ার কারণে বিশ্বের অস্ত্র বাজারে বেইজিং’এর ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মান, স্পেন এবং ফ্রান্সের মতো দেশের উৎপাদিত অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম প্রযুক্তিগত ভাবে খুবিই উচ্চ মানের হলেও এর টার্মস এন্ড কন্ডিশন বেশ জটিল এবং বিক্রয়মূল্য একেবারেই আকাশ ছোয়া। যা কি না উৎপাদন মূল্য অপেক্ষা বিক্রয়মূল্য ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি হতে পারে। আবার, অন্যদিকে রাশিয়ার উৎপাদিত অস্ত্র মোটামুটি মান সম্পন্ন এবং বিক্রয়মূল্য খনিকটা সহনীয় মাত্রায় হলেও অস্ত্র বিক্রয় পরবর্তী সেবার মান খুবিই নিকৃষ্ট মানের।
অর্থ্যাৎ রাশিয়া সামরিক সাজ সরঞ্জাম এবং যুদ্ধাস্ত্র বিক্রয়ে প্রবল কৌশলী ও উৎসাহী থাকলেও অস্ত্র বিক্রয় পরবর্তী রিপিয়ার, মেন্ট্যেনেন্স, ইঞ্জিন ওভারহোলিং এবং খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহে রাশিয়ার ব্যাপক উদাসীনতা এবং অবহেলা এখন অনেকটাই ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে। তার উপর যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ক্রেতা রাষ্ট্রের অবশ্যই কূটনৈতিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক থাকাটা খুবিই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ইরান কিম্বা সিরিয়া মতো দেশগুলো শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও যুক্তরাষ্ট্রে কিম্বা ইউরোপের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয়ের কোন সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স কিম্বা রাশিয়ার অস্ত্রের অপারেটিং, রিপিয়ার, সার্ভিসিং এ্যান্ড ম্যানটেনেন্স খরচ অত্যাধিক বেশি এবং সঙ্গে থাকে কিছু নির্ধারিত জটিল শর্ত বা নিয়ম। আর এক্ষেত্রে চীন কিন্তু তার নিজস্ব প্রযুক্তির অত্যাধুনিক অস্ত্র বানিজ্যিকভাবে রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশ পরিকল্পিতভাবেই সহজ শর্ত, নমনীয়তা এবং অগ্রাধিকারমুলক বানিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্ব অস্ত্র বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, ইরানসহ আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু রাষ্ট্রের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ চীন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ২০৩.০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চীন থেকে আধুনিকায়নকৃত দুটি মিং ক্লাস সাবমেরিন আমদানি করে। ২০১১ সালে চীন মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু দেশের কাছে তার নিজস্ব উচ্চ প্রযুক্তির কমব্যাট এবং ইন্টালিজেন্স ড্রোন সরবরাহ করে। তাছাড়া ২০১২ সালে আলজেরিয়ায় তিনটি নতুন প্রজন্মের ফ্রিগেট বিক্রয় করেছিল । চীন মুলত তার নিজস্ব প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান যেমন জেএফ-১৭, জে-১০, ডাব্লিউজেড-১০, ডাব্লিউজেড-১৯ এট্যাক হেলিকপ্টার, এইচকিউ-১৬/এ, এইচকিউ-৯, এফএন-৯০ সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, এটিজিএম, টাইপ-৬৯ এমবিটি-২০০০/৩০০০ ট্যাংক, হেভী আর্টিলারী সিস্টেম, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, মিসাইল শীপ, রাডার, সাবমেরিনসহ ক্ষুদ্র, হালকা ও মাঝারি বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্ব অস্ত্র বাজারে রপ্তানি বা সরবরাহ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।