প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স অর্জনকারী শীর্ষ দশ দেশের একটি বাংলাদেশ। যদিও এ খাত থেকে বাংলাদেশীদের আয় আশঙ্কাজনক হারে কমছে। চলতি বছরের জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রæয়ারিতে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমেছে ১৯ কোটি ডলার।
চলতি মাসেও রেমিটেন্সের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। বিশ্বে করোনার ব্যপক বিস্তৃতির কারন প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এর ফলেই এ অর্থ বছরে রেমিটেন্সে বিরাট ধ্বসের আশঙ্কা তৈরী হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আর বাংলাদেশে যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে, সেসব দেশে করোনা আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয়ে বড় ধাক্কা লাগবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা যেখানে টালমাটাল। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের রেমিটেন্সে করোনার প্রভাব পড়াটা খুবেই স্বাভাবিক। বিশেষ করে যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশীরা টাকা পাঠায়, সে দেশগুলোই তো বেশি সংকটে। আমাদের তো প্রবাসীরা বেশির ভাগই শ্রমিক।
তাই ওখানকার উৎপাদন তো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। তারা তো কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। এছাড়া করোনার কারণে অনেক শ্রমিকই দেশে এসে আর বিদেশে ফেরার সুযোগ পায়নি। তাই সম মিলিয়ে রেমিটেন্সে করোনার প্রভাব আরো খারাপভাবে পড়বে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এছাড়া গত ফেব্রæয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছে ১৪৫ কোটি ডলার, যা আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ১৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ শুধু ফেব্রæয়ারিতেই রেমিটেন্স কমেছে ১৯ কোটি ডলার।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় চলতি মাসের ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসী আয়ের তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। চলতি মাস মার্চের ১৯ দিনে রেমিটেন্স এসেছে মাত্র ১০৬ কোটি ডলার, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মার্চ ও এপ্রিল শেষে রেমিটেন্সের হার আরো অনেক কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসা দশটি দেশের তালিকায় রয়েছে- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এ তালিকায় থাকা সবগুলো দেশেই করোনা ভাইরাস শনাক্তের হার অনেক বেশি। এর মধ্যে ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। এর বেশির ভাগ দেশের আংশিক ও পূর্ণাঙ্গভাবে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ। ফলে গত কয়েক মাসে এসব দেশ থেকে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন, তারা এখন আর এসব দেশে ফেরার সুযোগ পাচ্ছে না। আবার যারা সেসব দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ থাকায় সেখান থেকেও রেমিটেন্স পাঠানোর হার অনেক কমেছে। সবমিলিয়ে রেমিটেন্স প্রবাহ আরো নেতিবাচক অবস্থায় যেতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও ইতালির কয়েকজন প্রবাসী জানিয়েছেন,করোনা ভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরও গত ফেব্রæয়ারী মাস পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এরপর করোনার ব্যপক বিস্তৃতির কারনে গত প্রায় এক মাস তারা ঘরে অবস্থান করছেন। এ তিনটি দেশের অধিকাংশ প্রবাসীই বর্তমানে কর্মহীন রয়েছেন।