সাম্প্রতিক শিরোনাম

"নিশ্চুপ নীলাঙ্গনে একাকিনী"

আলিসা কার্সন, সাংকেতিক নাম নীলজাম (Blueberry), ২০০১ সালে জন্ম নেওয়া আম্রিকী এই মেয়ে দুনিয়ার কনিষ্ঠতম নভোচারী। যদিও কার্সন এখনো প্রশিক্ষণ পর্যায়েই আছে, কৌশলগতভাবে সে এখনই মহাশূন্য অভিযানের সনদপ্রাপ্ত একজন নভোচারী এবং সবকিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে হয়তো সে হবে মঙ্গলের বুকে পা রাখা প্রথম কিছু মানুষের একজন আর সেখানে বসতি স্থাপন করা প্রথম মানব।

সবাই সম্ভবত ধরে নিচ্ছে যে সে ১৯ বছরের আলোকপ্রাপ্তা একটা মেয়ে যে কিনা ৩২ বছর বয়সে মঙ্গল গবেষণায় যাবে। কিন্তু ঘটনাটা অতো সরল না। ১২ বছর বয়স থেকে আলিসা নাসা ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মহাশূন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে যুক্ত।

“একদিন আমি নভোচারী হবো, মঙ্গল গ্রহে যাবো! ফিরে এসে শিক্ষকতা করবো, হয়তো একদিন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হবো!”

এই হচ্ছে ছোট্ট মেয়েটির স্বপ্নের তালিকা। সে জানে হয়তো তার আর কখনোই ফেরা হবে না, জানে এই যাত্রার জন্য শল্যোপচারের মাধ্যমে তার শরীরের সামান্য অঙ্গ চিরকালের জন্য হারাতে হবে। পৃথিবী থেকে ৪ কোটি মাইল দূরে মঙ্গলের যে অংশটায় তাকে পাঠানো হবে সেখানে কখনো সূর্যালোক পড়েনা, চিররাত্রি আর বরফে ঢাকা একদেশ, মনুষ্যহীন একটা আস্ত গ্রহে।

কার্সন মোটামুটিভাবে ধরে নিয়েছে হয়তো ২ বছর থাকতে হতে পারে তাকে ঐ গ্রহে, বড়জোর ৩, তারপরই ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে সে, পরিবার, সন্তান! বাস্তব সত্য হলো তাকে মঙ্গলে পাঠানোর জোরদার পরিকল্পনা থাকলেও ফেরত আনার নির্ভরযোগ্য কোন পরিকল্পনা এখনো পর্যন্ত নাসার কাছে নাই।

মঙ্গলে প্রথম অভিবাসী পাঠানো বা সেটাকে আবাসিক গ্রহ হিসাবে গড়ে তোলা নাসা, বিজ্ঞান ও আমেরিকার স্বার্থের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, সে যাত্রায় অর্বুদ অর্থ বরাদ্ধ করতে কারোরই বাঁধবে না কিন্তু ৩ বছর পরে আলিসার কাজ শেষ হয়ে গ্যালে, তাকে ফেরত আনা মানে কোটি কোটি ডলারের এক যাত্রা, যা কোন বৈজ্ঞানিক ফলাফল বয়ে আনবে না, শুধুমাত্র একজন কর্মীকে ফেরত আনা যাবে, যার সেবার আর প্রয়োজন নাই।

নাসার উচিৎ ছিলো আগে তাকে পাঠানোর নয় বরঙ ফেরত কিভাবে আনবে সেটার অবয়ব পরিকল্পনা দাঁড় করানো, বাস্তবক্ষেত্রে সেরকম কোন কিছুই নেই। এখনো পর্যন্ত নাসার লক্ষ্য মঙ্গলে মানুষ প্রেরণ ও আবাসন তৈরীর দিকেই কেন্দ্রীভূত। আলিসার ঐ যাত্রার উদ্দেশ্য কিন্তু শুধু মঙ্গলের মাটি ও পানির নমুনা সংগ্রহ করাই নয়, বরং সেখানে মানুষ বসবাস করতে পারে কিনা, সেটা নিজেকে দিয়ে পরীক্ষা করা, অর্থাৎ শুধু মঙ্গলই নয়, সে নিজেও গবেষণার একটি উপাত্ত।

হয়তো ভাবছেন বিজ্ঞানের সেবায় যা কিছুই হোক পরোয়া নেই কিন্তু শুধু বিজ্ঞানের সেবাতেই কি? আলিসার প্রশিক্ষণের দায়ভার নিয়েছে পাসম প্রকল্প (Project PoSSUM) নামের একটি বেসরকারী সংস্থা, মহাশূন্য প্রমদ ভ্রমণের (Space Tourism) দ্বার উন্মোচনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে শূন্যবস্ত্র (Spacesuit) নির্মাতা একটি প্রতিষ্ঠান কার্সনের নামের সাথে নিজেদের জড়িয়ে কতোভাবে লাভবান হবে কে জানে? ইতিমধ্যেই একটি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মহাশূন্যে ব্যবহারোপযোগী কার্সনের নকসা করা একটা পেটরার (Suitcase) স্বত্ব নিয়েছে যা বাজারজাত করা হবে ২০৩০এর দিকে, কার্সনের যাত্রার ডামাডোলের মাঝে।

বাস্তব দুনিয়ার আয়ন ম্যান অর্থাৎ এলন মাষ্ক, যেই উন্মাদ কোটিপতির ব্যক্তিগত গাড়িটি মহাশূন্যে সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করছে এবং যিনি নিজেও মঙ্গল অভিযানে অত্যন্ত আগ্রহী একজন উদ্যোক্তা, আলিসা কার্সনের মঙ্গল অভিযাত্রা প্রস্তাব সম্মন্ধে বলেছেন যে “এটা বিপদজনক, যাতে খুব সম্ভব মানুষ মারা যাবে”।

কার্সন কি জেনে বুঝে মৃত্যুর ঝুঁকি নিচ্ছে? হ্যা, সম্পূর্ণভাবে! মানবতা এবং বিজ্ঞানের সেবায় কেউ মরতে চাইলেই তাকে তা করতে দেওয়া নৈতিক কি? সহজ এবং একমাত্র জবাব- না, কখনোই না!

কমান্ডার নীল আর্মস্ট্রং যখন চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রেখেছিলেন তখন তিনি জানতেন যে ১ দিন পার হবার আগেই তাঁরা ঈগলের ফিরতি উড্ডয়নে দুনিয়ায় ফেরত আসবেন। অথচ আলিসা কার্সনের সেরা সম্ভাবনা হচ্ছে যে তার গবেষণা এতোটাই সফল হবে যে মঙ্গল অভিবাসনের পরবর্তী যাত্রা অত্যন্ত দ্রুত শুরু হবে এবং তাতে চড়েই সে ফেরত আসতে পারবে।

যদিও কোন নিশ্চয়তা নেই যে পরবর্তী মঙ্গলযান ঠিক কতোদিন পর যাত্রা করবে বা ততোদিন মেয়েটা অনুর্বর, খাদ্য, আলো ও সাহায্যহীন একটা গ্রহে একলা বেঁচে থাকতে পারবে কিনা। বেশীরভাগ সম্ভাবনা এই যে কার্সনের মৃত্যু নাসার একটি পরিস্থিতি কামরা থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং ভবিষ্যতে মঙ্গলের অন্ধকার একটি অংশের নাম রাখা হবে এই ত্যাগী নভোচারীটির নামে।

লেখকঃ অর্য্য, ব্লগার, কলামিস্ট।

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। এর মাঝে একটি এজেন্সিও দিয়েছেন নাম...

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া...

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...