ঢা’বি প্রতিনিধিঃ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোগী সন্দেহে চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন ফুসফুসের সমস্যায় অসুস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ছাত্র সুমন চাকমা।
আজ সোমবার (৬ এপ্রিল ২০২০) সকাল সাড়ে আটটায় নিজ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার দাতকুপ্যা আগালাশিং পাড়ার সুপেন চাকমার সন্তান।
সুমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ২২তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন।
গত ২৬ মার্চ সুমন চাকমা তার ফেসবুকে দেয়া স্ট্যটাসে আশঙ্কা প্রকাশ করে লেখেন ‘আমার করোনা হয়নি অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যই আমাকে মারা যেতে হবে’। তার আশঙ্কাই যেন সত্যি হলো।
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) তাঁর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
জানা গেছে, ঢাবিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বছর দুয়েক আগে তিনি ফুসফুসে জটিল রোগে আক্রান্ত হন। এরপর তাকে ভারতে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
গত ১১ মার্চ তিনি পূনরায় অসুস্থবোধ করলে চিকিৎসার জন্য তার বন্ধুরা তাকে একে একে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ফুসফুসজনিত রোগের কারণে সামান্য শ্বাসজনিত সমস্যা থাকায় কোন প্রকার চেকআপ ছাড়াই করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ সন্দেহে কোন হাসপাতাল তাকে ভর্তি করেনি।
এরপর কোন উপায় না পেয়ে গত ১৮ মার্চ সুমনকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে তার অবস্থার অবনতি হয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে আজ সকাল সাড়ে আটটায় তার মৃত্যু হয়।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক শোক বার্তায় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক উল্লেখ করে বলেন, চিকিৎসার অভাবে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে হারানো কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। চিকিৎসার অভাবে সুমন চাকমার মৃত্যু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- দেশের মানুষ বর্তমানে কী ভয়ানক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একজন দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধার অকাল মৃত্যু পর্বতের চেয়েও ভারী এবং পীড়াদায়ক। এই ক্ষতি কোনভাবে পূরণ হবার নয় বলে নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন।
এছাড়া, সুমন চাকমার দীর্ঘদিনের চিকিৎসাকালে কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী যারা শারিরীক, মানসিক, আর্থিক ও নানাভাবে সহযোগিতা করে গেছেন তাদের প্রতি পিসিপি নেতৃবৃন্দ অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং এই দুর্দিনে শোকাহত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে সুমন চাকমার পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান জানান।