মানুষের জন্যই রাজনীতি, মানুষের জন্যই ধর্ম, ধর্মের জন্য বা রাজনীতির জন্য মানুষ নয়, এ সত্যটি যতদিন আমরা উপলব্ধি করতে না পারব, ততদিন সমাজ থেকে হানাহানি-নৈরাজ্য দূর হবে না। কীভাবে আমরা ভুলে যাই, এই বাংলাদেশ প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে লাখো প্রাণের এক নদী রক্ত আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জন করেছে নতুন এ মানচিত্র, অর্জন করেছে জাতীয় সঙ্গীত আর লাল-সবুজের পতাকা। যদি আমার স্বাধীনতা বিপন্ন হয়, তাহলে মানবাধিকার বলি, সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলি, সবই সুদূরপরাহত হয়ে যায়। দেশমাতৃকার অপরিশোধ্য ঋণের কথা কি আমরা ব্যক্তিগত-গোষ্ঠীগত হানাহানি, স্বার্থান্ধতা-ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতার ঊর্ধ্বে স্থান দিতে পারি না? দুর্নীতিতে বিশ্বসেরা হলে, তা যে পরোক্ষে জাতির মানবাধিকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে; সে বোধোদয় কবে হবে আমাদের?
সারা বিশ্ব এখন করোনা আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে সময় পার করছে। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে আত্রান্তদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মসজিদ মিশন। সম্প্রতি এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী এই আহ্বান জানান।
এসময় তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহান আল্লাহর তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ গজব ও ঈমানদারদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ আপোতিত হয়েছে। এই করোনা নিয়ে ভয়-ভীতি ও আতঙ্ক ছড়ানো ঠিক হবে না। এই সমস্ত রোগবালাই ও মুসিবতের মাধ্যমে মানুষের মাঝে মনুষত্ব ও মানবিকতা পুনরায় ফিরে আসে। সর্বোপরি আসমান জমিনের মহান মালিক, রাজাধিরাজ রাব্বুল আলামীনের প্রতি সাজদা করার মন তৈরি হয়।
তারা আরও জানান, সম্প্রতি করোনা নিয়ে যে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে তা থেকে বিরত থাকা দরকার। বিশেষ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মৃত্যুবরণ করছে তাদেরকে কাফন-দাফন ও জানাযায় অনিহা আদৌই কাম্য নয়।
শরীয় বিধান মতে কাফন-দাফন ও জানাযা সম্পন্ন করা আত্মীয়-স্বজন ও সংশ্লিষ্ট মুসলিমদের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব। মেহেরবানি করে এ দায়িত্ব কেউ অবহেলা করবেন না। এ ক্ষেত্রে কঠোর সর্তকতা ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সকল কাজ সম্পন্ন করাটাই শরীয়তের বিধান বলে হাদীস শরিফে বারবার উল্লেখ রয়েছে।
অপর আরেক বিবৃতিতে মসজিদ মিশনের নেতারা জানান, বিপদ মুসিবত ও পরীক্ষায় সচেতন এবং সতর্কতার পাশাপাশি সবর, ধৈর্য ধারণ করতে হবে। নামাজ, রোজা ও ইস্তিগফারের মধ্যে দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে হবে।
চিকিৎসকদের নৈতিকতা বা মানবিকতা যাচাইয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ দেশে আছে বলে মনে হয় না, যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রয়েছে। ফলে চিকিৎসা পেশা এক অনৈতিক অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। প্রতিনিয়তই যার বলি হচ্ছে রোগীরা এবং প্রতারিত হচ্ছে গোটা সমাজ। এর একটি স্থায়ী সমাধান জরুরি। যার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। প্রায়শই শোনা যায় চিকিৎসক দ্বারা রোগী লাঞ্ছিত কিংবা রোগীর লোকজন দ্বারা চিকিৎসক লাঞ্ছিত যা খুবই অনাকাক্সিক্ষত।
মানুষ তার সম্মান নিয়ে বাঁচবে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যা তার প্রাপ্য, তা পাওয়ার অধিকার থেকে সে বঞ্চিত হবে কেন? সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে এটুকুই তো তার দাবি, কিন্তু মানুষ কি তার প্রাপ্য পাচ্ছে তার পরিপার্শ্বের কাছে? সমাজের কাছে অথবা রাষ্ট্রের কাছে? উত্তর যদি হয় ‘না’, সঙ্গত কারণেই তখন প্রশ্ন আসে, কেন? কোন অপরাধে মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে কে? সাদা চোখে তাকিয়ে বললেও বলা যায়, মানুষের এ বঞ্চনার জন্য দায়ী মানুষই। মানুষের লোভ, হিংসা, স্বার্থান্ধতা, অসহিষ্ণুতাই বঞ্চিত করছে মানুষকে। আমার স্বার্থান্ধতার কারণে আজ যিনি বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন, আগামীকাল হয়তোবা তার ঈর্ষার কারণে বঞ্চিত হবো আমিও।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।