সাম্প্রতিক শিরোনাম

আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংশোধনঃ মোহাম্মদ হাসান

উন্নয়নশীল দেশ হলেও বাংলাদেশের সিস্টেম অন্য দেশের মত নয়। সরকারি বরাদ্দ নয় ছয়, গরীবের হক মারা, ঘুষ, চাঁদা, অন্যায় কাজ করোনা ভাইরাস বন্ধ করতে পারেনি। আর সে কারনে ত্রান কেউ পায় কেউ পায় না। এ অপকর্মগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে নিজের মাঝে আত্মশুদ্ধি জাগ্রত হলে। আইন করে দূর্নীতি বন্ধ করা যায় না। একটা ক্ষুদ্র ভাইরাস সব কিছু নিমেষে শেষ করে দিচ্ছে। এ থেকে বুঝা যায় মানুষ কত অসহায়। মিথ্যা বিত্ত বৈভব বড় তুচ্ছ।

পৃথিবীতে সব পদার্থের বস্তু ময়লা বা অপরিষ্কার হয়। মানবদেহে একটি গোশত টুকরা আছে, যার নাম ‘কলব’ বা আত্মা। বালেগ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জানা অজানা বিভিন্ন গোনাহে এটা অপরিষ্কার বা রোগাক্রান্ত হয়। আর পাপের দরুণ আত্মা রোগাক্রান্ত হলে সমস্ত শরীরটা অসুস্থ বোধ হয় এবং তা সুস্থ হলে শরীরটাও সুস্থ মনে হয়।

হাদিসের ভাষায় : ‘নিশ্চয় মানবদেহে এমন একটি গোশতের টুকরা আছে যেটা পরিশুদ্ধ হলে পুরো শরীর ঠিক হয়ে যায়। আর যখন তা ময়লা হয়ে যায় তখন সমস্ত শরীর দূষিত হয়ে যায়। জেনে রাখ! সেটা হচ্ছে কলব তথা আত্মা।’ [বুখারি ও মুসলিম]

মহান আল্লাহ তায়ালা কলবকে নির্মল করে সৃষ্টি করেছেন। আর সেই কলবকে সর্বরকম মলিনতা থেকে হেফাযত রাখতে আদেশ করছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে : ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্তুতি কোনো কাজে আসবে না, সেদিন উপকৃত হবে কেবলমাত্র সে, যে আল্লাহর নিকট আসবে বিশুদ্ধ কলব নিয়ে।’ [সুরা শুয়ারা, ২৬ : ৮৮-৮৯]

আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজন বিশুদ্ধ কলব। নতুবা রোগাক্রান্ত কলবই এক সময় রোগ বৃদ্ধি হয়ে মৃত্যু ঘটে কুফরি অবস্থায়। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, ‘যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তার অন্তর আরও বেশি কলুষিত হয় এবং অবশেষে মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ১২৫]

জেনে রাখা উচিত যে, শরীরের বাহ্যিক অসুস্থতা, যেমন জ্বর, সর্দি, কফসহ নানা ধরনের ব্যাধি হয়। তেমনি আত্মারও কিছু ব্যাধি আছে। যেমন শিরক, কুফর, অহংকার, আত্মাভিমান; দীনের ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শন, অকারণে কাউকে ঘৃণা করা, কারণ ছাড়াই কারও সাথে শত্রুতা পোষণ করা, হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যের ব্যাপারে কুধারণা করা, লৌকিকতা করা, গিবত করা ইত্যাদি।

আত্মসংশোধনকে আরবি ভাষায় ‘তাযকিয়াতুন নফস’ বলা হয়। আত্মশুদ্ধি এমন একটি শাস্ত্র যার দ্বারা আত্মাকে সংশোধন করা যায়, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আত্মসংশোধন ছাড়া কখনও একজন মানুষ ভালো মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।

আত্মসংশোধনের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আগে রোগ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। এখানে ব্যাপক সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য কিছু পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো-

১. ঈমানের পরিশুদ্ধি : আত্মশুদ্ধির চাবি হল ঈমানকে পরিশুদ্ধ করা। আল্লাহর তাওহিদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহর প্রতি বিশুদ্ধ ঈমান ব্যতীত আত্মশুদ্ধির সমস্ত প্রচেষ্টাই পন্ডশ্রম।

২. তাকওয়া : আল্লাহ পাকের ভয়ে যাবতীয় হারাম কার্যাবলি থেকে বিরত থাকা এবং ফরয-ওয়াজিবসমূহ যথাযথভাবে আদায় করার নাম তাকওয়া।

৩. তাওবা : আল্লাহর হুকুম অমান্য করে বা সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তি কর্তৃক চরম অনুশোচিত হয়ে আল্লাহর কাছে অপরাধ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বিনয়ের সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করার নাম হল তাওবা। আর তাওবার মাধ্যমেই কলবের রোগ দূরীভূত হয়।

৪. তাওয়াক্কুল : সর্বাবস্থায় কেবল আল্লাহর উপর নির্ভর হওয়াকে তাওয়াক্কুল বলে। তাওয়াক্কুল ছাড়া কলব সংশোধন সম্ভব নয়।

৫. যিকির : আল্লাহকে স্মরণ করার নাম যিকির। কলবের যত ময়লা আবর্জনা আছে তা থেকে পাক সাফ করার অন্যতম মাধ্যম যিকির।

৬. কুরআন তিলাওয়াত : কুরআন তিলওয়াত হল নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত। কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে একজন বান্দার সাথে আল্লাহ পাকের কথোপকন হয় এবং যিকিরের মর্যাদা লাভ করতে পারে। তার মানবিক গুণাবলি বৃদ্ধি পায়।

৭. সুন্নাহর অনুসরণ : সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় একজন বান্দা হওয়া যায়। যার দ্বারা আত্মশুদ্ধি অর্জন হতে পারে। মুসলমান হিসাবে সুন্নাহর অনুসরণ করা সকলের জন্য জরুরি।

৮. নফল আমল বেশি বেশি করা : আত্মশুদ্ধির আরেকটি বিশেষ পন্থা হল বেশি বেশি নফল আমল করা। এই নফলের দ্বারা একজন বান্দা আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি নৈকট্যও অর্জন করতে পারে।

৯. সবর করা : সবর অর্থ হল ধৈর্য বা অটলতা। একজন মানুষ বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে, ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, অত্যাচার-অবিচার সর্বাবস্থায় এক আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে মগ্ন থাকা এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের পথ অনুসরণ করবে।

১০. পশুবৃত্তিক চরিত্র পরিবর্তন : আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য গিবত করা, মিথ্যা বলা, অপবাদ দেওয়া, উপহাস করা, সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি জঘন্য পশুবৃত্তিক চরিত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা আত্মসংশোধনের অন্যতম পন্থা।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ফান্ড আওয়ামী ঘরানার দুই ইয়েলো...

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড" বা অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি...

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...