সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, আয়ারল্যান্ড: গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ছিলো আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত বাঙ্গালিদের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের সাবেক সভাপতি জনাব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও কমিউনিটি ব্যাক্তিত্ব এবং আবাইএর (ABAI) প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ মোস্তাফার সঞ্চালনায় আয়ারল্যান্ডে ভার্চুয়ালি অমর একুশ গ্রন্থমালা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গতবছর ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বারের মতো আয়ারল্যান্ডস্থ ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটির স্টোকস বিল্ডিং এ ( DCU STOKES BUILDING) অমর একুশে গ্রন্থ মেলার আয়োজন করা হলে স্থানটি বাঙ্গালির এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল। হয়ে উঠেছিল যেনো এক খন্ড বাংলাদেশ। কিন্তু এবার করোনা জনিত মহামারী ও সীমাবদ্ধতার জন্য বইমেলাটি সেভাবে উদযাপন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই বইপ্রেম ও একুশের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য এক ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় শুধুমাত্র সংস্কৃতিমনা ও বইপ্রেমী নয়, দেশটিতে বসবাসরত সকল শ্রেণীর লোকের অংশ গ্রহণ ঘটে। ফলে সভাটি ভার্চুয়াল জগতের এক অনন্য সভায় রূপ নেয়। অনলাইন স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ২১শে বইমেলার উপর অংকিত রংবেরঙের চিত্র ও আলপনা এবং একুশ ও দেশের গান, কবিতা আবৃত্তি ভার্চুয়াল এ সভাটিকে উৎসবে পরিনত করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোর’আন থেকে পাঠ করেন জনাব মিজানুর রহমান জাকির, বাইবেল থেকে পাঠ করেন ফ্র্যাংক, , গীতা থেকে পাঠ করেন সুপ্তা দাস এবং ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন দীলিপ বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধান জনাব মোস্তাফিজুর রহমান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। যাদের আন্তরিক সহযোগিতা, প্রচেষ্টা ও কায়িক পরিশ্রম ছাড়া আদৌ এ আয়োজন সম্ভব হতোনা তিনি তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি লোকের অংশ গ্রহণ তাকে অভিভূত করে তোলে। বই পড়ায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলার জন্য লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই তিনি আয়ারল্যান্ডে একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও বই মেলার উপর স্বরচিত প্রবন্ধ পাঠ করেন কবি ও লেখক সাজেদুল চৌধুরী রুবেল। একুশের ইতিহাস, ভাষার গুরুত্ব ও বইমেলার প্রয়োজনীয়তা সহ বাংলা ভাষার সম্প্রসারণে দিকনির্দেশনা মূলক তথ্য ও বক্তব্য ফুটে ওঠে বিশেষ এ প্রবন্ধটিতে।
অনুষ্ঠানে যারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন লিমরিক কাউন্টি কাউন্সিলর ডেপুটি মেয়র আজাদ তালুকদার, আয়ারল্যান্ডস্থ বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ডাঃ জিন্নুরাইন জাইগীরদার , সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব ইকবাল মাহমুদ, ডাঃ রফিকুল ইসলাম, ডাঃ আরমান সহ সর্ব জনাব শাহাদাত হোসেন, মাসুদ সিকদার, আখতার হোসেন, শাকিব খান, জামাল বশির ,আব্দুল হক, রবিঊল আলম, আইরিশ বাংলা টাইমসের সম্পাদক আব্দুর রহিম ভূইয়া, আইরিশ নোটিশ বোর্ডের মসিউর রহমান, ডাবলিন বাংলা বার্তার মানিক মনিরুজ্জামান, আইরিশ বাংলা পোস্টের আবুল কালাম আজাদ, এনটিভির জাহিদ মমিন চৌধুরী, হামিদুল নাসির, জহিরুল ইসলাম জহির, সাইফুল ইসলাম, জাকারিয়া প্রধান, জসিম উদ্দিন , শাহীন মিয়া , , রন্টি চৌধুরী, প্রভাষক আবদুস শহীদ, আবদুল জলিল প্রমুখ।
সংগীত পরিবেশন করে অনুষ্ঠানটিকে যারা প্রাণবন্ত করে রেখেছিলেন তারা হলেন ম্যানচেস্টার নিবাসী জনাব মীর গোলাম মুস্তাফা, অজিতাভ রায় অভি, জামাল বশির, ফাহিমা হ্যাপি ও দ্বৈত কণ্ঠে মাতা ইফফাত আরা এবং কন্যা নুদরাত।
কবিতা আবৃত্তি করে অডিয়েন্সকে আবেগময় করে তোলেন সর্ব জনাব দিলীপ বড়ুয়া, আব্দুল মান্নান মান, রুণা জলিল, সুস্মিতা, মশিউর রহমান, আরিফ আজিজ, মমতাজ কবির কলি এবং শায়লা শারমিন নিপা, ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার এবং এ,কে, আজাদ।
করোনায় লকডাউনের ফলে ঘরবন্দি মানুষের জনজীবন যখন অনেকটা বিপর্যস্ত ও স্থবির তখন এমন একটি সময়োপযোগী অনুষ্ঠান মানুষকে কিছুটা হলেও বিনোদনের স্বাদ দিতে পেরেছে বলে অনেকের বিশ্বাস। তা ছাড়া প্রবাসে মাতৃভাষা চর্চা ও এর সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তোলে ধরার জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই বলে বক্তারা জোরালো ভাবে তাদের বক্তব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন।
অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও কারিগরি সহযোগিতায় ছিলেন জনাব আনোয়ারুল হক ও জনাব কাজী কবির।