অবশেষে বাধ্যতামূলকভাবে বিমার আওতায় আনা হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রবাসী মারা গেলে কিংবা দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে বিমা থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন প্রবাসী ও তার পরিবার। আর এ ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার সময় তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিমার আওতায় আনা হচ্ছে। সেজন্য ‘প্রবাসী কর্মী বিমা নীতিমালা’ চূড়ান্ত করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস সারাবাংলাকে বলেন, প্রবাসী বিমা নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ১৪ অক্টোবর আইডিআরএ থেকে নীতিমালাটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ গেলে তাদের বিমার আওতায় আনা হবে। বিদেশে গিয়ে কোনো প্রবাসী মারা গেলে কিংবা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে প্রবাসী কিংবা তার পরিবারকে বিমা কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এদিকে, বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, প্রবীসা বিমা চালু হলে এটা প্রবাসীদের জন্য একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। এই বিমার মাধ্যমে প্রবাসীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি দেশের অর্থনীতিতে আরও গতিশীলতা আসবে।
শেখ কবির হোসেন বলেন, প্রবাসী বিমা চালু হলে বিমা কোম্পানিগুলোও লাভবান হবে। এর মাধ্যমে বিমা কোম্পানির প্রতি
সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। সবমিলিয়ে প্রবাসী বিমা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রবাসী বিমার উদ্দেশ্য
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে এককোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এসব প্রবাসী বিদেশে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হয়ে দেশে ফিরছেন। এসব প্রবাসী বিমার আওতায় না থাকায় তারা কোনো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। প্রবাসীদের বিমার আওতায় আনা হলে প্রবাসীরা বিদেশে কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত কিংবা নিহত হলে বিমা কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন।
বিমা গ্রাহকের বয়স ও বিমার মেয়াদ
বিমা গ্রহীতার বয়স ১৮ থেকে ৫৮ বছর হতে হবে। বিমার মেয়াদ হবে দুই বছর। তবে গ্রাহক ইচ্ছা করলে ২ বছর বিদেশ অবস্থানকালে নিজ অর্থায়নে আরও দুই বছরের জন্য নবায়ন করতে পারবেন।
বিমার পরিমাণ ও প্রিমিয়াম
বিদেশগামী কর্মীদের প্রয়োজনীয়তা ও আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে অ্যকচুয়ারির মাধ্যমে দু’টি জীবন বিমা পরিকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পরিকল্পটির বিমা অঙ্কের পরিমাণ ২ লাখ টাকা। এই বিমার প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে ৯৯০ টাকা। অন্যদিকে দ্বিতীয় পরিকল্পটির বিমার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা, এর প্রিমিয়াম দুই হাজার ৪৭৫ টাকা।
বিদেশগামী সব কর্মীদের জন্য প্রথম পরিকল্পটি বাধ্যতামূলক হলেও দ্বিতীয় পরিকল্পটি ঐচ্ছিক বলে বিবেচিত হবে। তবে উভয় বিমার ক্ষেত্রে মোট প্রিমিয়ামের ৫০০ টাকা দেবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। ফলে বিদেশগামী কর্মীকে ২ লাখ টাকার বিমায় প্রিমিয়াম দিতে হবে মাত্র ৪৯০ টাকা এবং ৫ লাখ টাকার বিমায় প্রিমিয়াম দিতে হবে ১ হাজার ৯৭৫ টাকা।
প্রবাসীদের মৃত্যু ও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিমা সুবিধা
বিমা চলাকালীন সময়ে যেকোনো কারণে বিমা গ্রাহক মৃত্যুবরণ করলে বিমা গ্রহীতার বৈধ উত্তরাধিকারীকে বিমা অঙ্কের শতভাগ অর্থ পরিশোধ করা হবে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে কোনো প্রবাসী দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে স্থায়ীভাবে পঙ্গু অথবা শারীরিকভাবে অক্ষম হলে ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যুসহ অন্যান্য ক্ষতি হলে নির্ধারিত বিমা অঙ্ক দেওয়া হবে।
আত্মহত্যা করলে কিংবা এইডস আক্রান্ত হলে বিমা সুবিধা পাবে না
আত্মহত্যা অথবা ইচ্ছা করে ক্ষতিসাধন করলে কিংবা এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে কোনো প্রবাসী মারা গেলে বিমা সুবিধা পাবে না। এছাড়াও বক্সিং কিংবা গাড়ি রেসিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দুর্ঘটনায় শিকার হলেও বিমার আওতায় আসবেন না প্রবাসী শ্রমিকরা।
দুর্ঘটনায় স্থায়ী পঙ্গু ও সম্পূর্ণ অক্ষম হলে
কোনো প্রবাসী তার কর্মক্ষেত্রে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারালে কিংবা কবজির ওপর থেকে দুই হাত কাটা গেলে অথবা গোড়ালির ওপর থেকে দুই পা কাটা গেলে বিমা অঙ্কের শতভাগ পরিশোধ করা হবে।
দুর্ঘটনাজনিত আংশিক অক্ষমতা
কোনো প্রবাসী বিদেশের কর্মক্ষেত্রে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেলে, কবজির ওপর থেকে এক হাত কাটা গেলে, গোড়ালির ওপর থেকে এক পা কাটা গেলে বিমার ৫০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হবে।
এছাড়াও বিমা মেয়াদের মধ্যে কোনো কর্মী আহত হলে এবং পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করলে তাকে মূল বিমা অঙ্কের শতভাগ পরিশোধ করা হবে। তবে বিমাগ্রহীতা দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী সম্পূর্ণ বা আংশিক অক্ষমতার জন্য কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকলে সেই পরিমাণ অর্থ বাদ দিতে হবে।