চেক প্রত্যাখ্যান হলেই চেকদাতাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। চেক প্রত্যাখ্যানের জন্য মামলাকারীকেই আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি সত্যিকারের পাওনাদার।
চেক পাওয়ার বৈধ কারণও প্রমাণ করতে হবে। জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ভাতিজা ইমরান রশিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাড়ে চার কোটি টাকার চেক প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত এক মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ এই রায় দিয়েছেন।
যদি কোনো চুক্তির ভিত্তিতে চেক ইস্যু করা হয়ে থাকে, আর সেই চুক্তি যদি পূরণ না হয় তবে চেকদাতার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। অথবা ওই চেকের ভিত্তিতে পাওনা চেয়ে কোনো অভিযোগ করা যাবে না।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায় দিয়েছিলেন, বুধবার যার পূর্ণাঙ্গ কপি সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
আবুল কাহের শাহিন নামের এক ব্যক্তির করা আবেদন খারিজ করে এই রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী।
অন্য পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, তাতে এখন শুধু চেক প্রত্যাখ্যান হলেই শাস্তি দেওয়া যাবে না। চেক প্রত্যাখ্যানের মামলাকারীকেই আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি সত্যিকারের পাওনাদার।
চেক দেওয়ার বৈধ কারণ প্রমাণ করতে না পারলে চেকদাতাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।
জানা যায়, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ছোট ভাই কায়সার রশিদ চৌধুরীর সহধর্মিণী সামছি খানমের মৃত্যুর পর তাঁর মালিকানাধীন গুলশানের ৩০ কাঠা জমির উত্তরাধিকারী হন তাঁর তিন সন্তান ইমরান রশিদ চৌধুরী, পারভেজ রশিদ চৌধুরী ও জিনাত রশিদ চৌধুরী।
পরবর্তী সময়ে এই জমি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে বিক্রি করা হয়। জমিটি বিক্রির আগেই আবুল কাহের শাহিন নামের এক ব্যক্তি ইমরান রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জমিটি ১৫০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেবেন বলে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে জানান।
এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। ৯০ দিনের মধ্যে বাজারমূল্যে জমি বিক্রি করে দিতে পারলে কমিশন হিসেবে বিক্রয়মূল্যের শতকরা ১৩ ভাগ পাবেন বলে তাঁদের মধ্যে ২০১২ সালের ১৩ মার্চ চুক্তিটি হয়েছিল। এই চুক্তির পর ইমরান রশিদ চৌধুরী সাড়ে চার কোটি টাকার চারটি চেক দেন আবুল কাহেরকে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমি বিক্রি করে দিতে না পারায় ইমরান রশিদ চৌধুরী চেক চারটি ফেরত চান। কিন্তু কাহের চেক ফেরত দেননি। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই ইমরান রশিদ জমিটি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর তিনি ব্যাংকে জানিয়ে দেন যে ওই চারটি চেক যেন নগদায়ন করা না হয়। আবুল কাহের চেকগুলো ব্যাংকে জমা দিলে যথারীতি তা প্রত্যাখ্যান হয়।
আর এই অভিযোগে তিনি ইমরান রশিদের বিরুদ্ধে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সিলেটের আদালতে পৃথক চারটি মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালত ইমরান রশিদকে চার বছরের কারাদণ্ড (প্রতিটি মামলায় এক বছর করে কারাদণ্ড) এবং ৯ কোটি টাকা জরিমানা করে রায় দেন। আপিল করার পর ওই বছরের ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন।
পরের বছর আবুল কাহের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগ তাঁর আবেদন খারিজ করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন।