সাম্প্রতিক শিরোনাম

চীনের নব্য সামরিক উত্থান এবং সক্ষমতা

সিরাজুর রহমানঃ চীনের কাছে বর্তমানে মোট ৩২০০টি বা তার কাছাকাছি সামরিক পরিবহণ, যুদ্ধবিমান, বোম্বার, ড্রোন ও হেলিকপ্টার থাকলেও কিন্তু এখনো পর্যন্ত হাজার খানেক ষাট ও সত্তর দশকের ৩88টি জে-৭, ১৪০টি জে-৮ এবং ১০০টি জেএইচ-৬ লাইট গ্রাউন্ড এট্যাক এয়ারক্রাফট দিয়ে ভর্তি। যদিও চীনের বিমান বাহিনীতে নতুন প্রজন্মের ৫০টি জে-২০ স্টিলথ জেট ফাইটার, ২৪টি রাশিয়ান এসইউ-৩৫, ১২৮টি জে-১৬, ২০৫টি জে-১১, ৭৫টি এসইউ-২৭, ৭৩টি এসইউ-৩০ এবং ৩২৩টি জে-১০ এক্টিভ যুদ্ধিমান রয়েছে। আবার চীনের নেভাল ফোর্সের এক্টিভ এয়ার ক্রাফট রয়েছে প্রায় ৪০০টি। যার মধ্যে ২৪টি জে-১০, ৩০টি জে-৭, ৪৮টি জে-৮ ২১টি ক্যারিয়ার বেসড জে-১৫, ৩৩টি এইচ-৬, ১২৪টি জেএইচ-৭ যুদ্ধবিমান ও বোম্বারসহ ছোট বড় মিলিয়ে বিভিন্ন ধরণের আরো ৩ শতাধিক পরিবহণ এবং ৬ শতাধিক হেলিকপ্টার রয়েছে চীনের গ্রাউণ্ড, এয়ার এণ্ড নেভাল ফোর্সের নিয়ন্ত্রণে।

তবে উপরের পরিসংখ্যান থেকে এটা পরিস্কার যে, চীনের অস্ত্র ভাণ্ডারে হাজার হাজার যুদ্ধবিমান ও বোম্বার থাকলেও তার একটি বড় অংশ ষাট, সত্তর এবং আশির দশকের বিমান দিয়ে ঠাসা। আর বর্তমান যুগে এসব পুরাতন আমলের বিমান দিয়ে মার্কিন নৌ বহরকে প্রতিহত করার চিন্তা করাটা কেবল ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মধ্যেই করা সম্ভব। প্রকাশ থাকে যে, চীনের এই বিশাল বহরের যুদ্ধবিমান ও বোম্বার ভারতের বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ শক্তিশালী মনে করা হলেও তা কিন্তু এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌ বহরের এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ারের ব্যাটল গ্রুপ এবং জাপান, অস্ট্রলিয়ার মতো আধুনিক যুদ্ধবিমান সমৃদ্ধ দেশের বিরুদ্ধে মোটেও যথেষ্ঠ নয়।

এদিকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমোবর্ধমান চীন ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকী ও আগ্রাসী নীতির মোকাবেলায় জাপানের আবে সরকার ২০২০-২১ অর্থ বছরে সামরিক বাজেট রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৫০.৩০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে। আর এই বাজেটের একটি বড় অংশ মার্কিন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশনের ১০৫টি এফ-৩৫ লাইটনিং-২ স্টিলথ জেট ফাইটার ক্রয়ের বিশেষ ফাণ্ড হিসেবে বরাদ্দ রাখা হবে। তাছাড়া ২০১৮ সালের শেষের দিকে জাপানের আবে সরকার তাদের পাঁচ বছর মেয়াদী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা অনুমোদন করে। যাতে জাপানের সেলফ ডিফেন্স নেভাল ফোর্সের দুটি ‘ইজুমো’এবং ‘কাজা’ক্লাস হেলিকপ্টার ক্যারিয়ারকে ব্যাপক আধুনিকায়ন করে ২৭,০০০ টন ওজনের লাইট এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ারে রুপান্তরের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। যা কিনা ভবিষ্যতে ৪২টি এফ-৩৫বি সিরিজের স্টিলথ জেট ফাইটার অপারেট করবে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৫ বছর পর জাপান আবারো নতুন করে মহাসাগরের বুকে নিজস্ব কোন এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার ভাসাতে যাচ্ছে। যা চীনের জন্য ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না।

তাছাড়া এমনিতেই দক্ষিণ চীন সাগর সংলগ্ন দেশগুলোর সাথে চরম মাত্রায় সামরিক উত্তেজনা এবং বিবাদে জড়িয়ে চীন কিন্তু নিজেকে অত্র অঞ্চলে একেবারেই বন্ধুহীন করে ফেলেছে। আসলে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে একমাত্র উত্তর কোরিয়া ও মিয়ানমারের মতো কিছু জঘন্য দেশ ব্যাতিত আর কোন কৌশলগত অংশীদার চীনের অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না।

এদিকে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরের শতভাগ মালিকানা চীন নিজে দাবি করে গেলেও আজ অব্ধি অত্র অঞ্চলের কোন দেশই তা মেনে নেয়নি। চীনের প্রবল আপত্তি ও বাধা সত্ত্বেও মার্কিন নৌবাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরে চীনকে পাত্তা না দিয়েই নিজের ইচ্ছে মতো জোটভুক্ত দেশগুলোর সাথে নিয়মিত নৌ মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে এবং আকাশে নজরদারি বিমান উড্ডয়ন অব্যাহত রেখেছে। যা চীনের হুমকী ও চোখ রাঙ্গানিকে একটি বড় মাপের ফাঁকা বুলিতে পরিণত করেছে।

তাছাড়া ১৯৬২ সালের চীন ভারত যুদ্ধের পর চীন কিন্তু কোন ধরণের সক্রিয় যুদ্ধে নিজেকে জড়ায়নি। বিশেষ করে বিগত চার দশকে চীনের অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তির আকার ও সক্ষমতা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেলেও বাস্তব যুদ্ধে চীনের অভিজ্ঞতা এবং অংশ গ্রহণ একেবারেই শুন্যের কোঠয় বলা চলে। তাই চীনের এসব একেবারেই অভিজ্ঞতা বিহীন এবং নন-ব্যাটল প্রুভ জেট ফাইটার ও বোম্বার হঠাত করে বাস্তব যুদ্ধে কতটা সক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অতি মাত্রায় যুদ্ধপ্রিয় দেশের মোকাবেলা করাটা যে একেবারে ছেলে খেলা নয় তা কিন্তু চীনের শি জিং পিং সরকার খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করে।

তাই দীর্ঘ সময়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে বিরত থাকায় জটিল আকারের যুদ্ধ পরিচালনা এবং ব্যাবস্থাপনায় চীন অনেকটাই অনভিজ্ঞ হবে আর এটাই কিন্তু স্বাভাবিক। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও জটিল যুদ্ধ ব্যাবস্থাপনায় উচ্চ মাত্রায় অভিজ্ঞতা না থাকায় তা কিন্তু ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চীনের জন্য একটি হুমকী হিসেবে থেকেই যাচ্ছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে যে কোন একটি দেশের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানীনে অত্র অঞ্চলে অধিকাংশ দেশই এক যোগে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণ করে বসতে পারে এবং সর্বোপরি যুদ্ধবাজ মার্কিন নেভাল এণ্ড এয়ার ফ্লীটকে মোকাবেলা করতে হতে পারে চীনকে।

চীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি ব্যাপকভাবে উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন বৃহৎ আকারের যুদ্ধ বিমান, ফ্রিগেট, কমব্যাট এন্ড ইন্টালিজেন্স ড্রোন, সাবমেরিন, এন্টিশীপ এ্যন্ড সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, লং এন্ড মিডিয়াম রেঞ্জের ক্রুজ ও ব্যালেস্টিক মিসাইল ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। এ মুহুর্তে চীনের নেভাল ফোর্স এবং লং রেঞ্জের মিসাইল ক্যাপাবিলিটি বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এক হিসেব মতে চীনের স্ট্যাটিজিক মিসাইল ফোর্সের নিয়ন্ত্রণে এ মুহুর্তে আনুমানিক ২,৮৮০টি এর কাছাকাছি বিভিন্ন পাল্লার কৌশলগত ক্ষেপনাস্ত্র মজুত রয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়।

চীনের অস্ত্র ভাণ্ডারে গুয়াম কিলার এবং ক্যারিয়ার কিলার খ্যাত বিপুল পরিমাণ ৫,০০০-৬,০০০ কিলোমিটার পাল্লার ডংফেং-২১ডি এবং ডংফেং-২৬ নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল লং রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল থাকার বিষয়টি চীন বার বার প্রচার করলেও বাস্তব যুদ্ধে তা ব্যাবহার করাটা মোটেও সহজ কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। তবে চীনের অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা হাজারের অধিক কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন যে কোন দেশের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। জিজে-১১ স্টিলথ কমব্যাট ড্রোন, সিএইচ-৪, সিএইচ-৫ এবং ইউয়িং লুং-২ ইত্যাদি ক্যাটাগরির হাজারের উপর ড্রোন এক্টিভ রয়েছে।

দক্ষিণ চীন সাগর এবং এশিয়া কিংবা ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকী এবং উত্তেজনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। কারণ চীনের সাম্প্রতিক সামরিক উত্থানে অত্র অঞ্চলের দেশগুলো যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া মতো দেশগুলো ২০১৮-১৯ সালে প্রায় ৮০-১০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অস্ত্র সরবরাহের নতুন অর্ডার পেয়েছে। আর মার্কিনীদের এভাবে অস্ত্র ব্যাবসার বড় ধরণের সুযোগ করে দিচ্ছে চীন ও উত্তর কোরিয়ার অহেতুক সামরিক পেশি শক্তি প্রদর্শন ও লাফালাফি। এটা ট্রাম্প প্রসাশনের জন্য একটি বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে।

এদিকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে চীন সাধারণত তাদের সামরিক বাজেটের সঠিক তথ্য প্রকাশ না করলেও, ২০১৯ সালে তাদের নিজস্ব সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট আনুমানিক ৩২১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নির্ধারণ করে। এদিকে ভারতের ২০১৯ সালের সামরিক বাজেট বরাদ্দ ছিলো ৫৬.০০ বিলিয়ন ডলার যা ২০২০ সালে ৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌছে যেতে পারে। আবার ইন্টারন্যাশনাল পীস রিসার্চ ইনিস্টিউটের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ভারতের সামরিক বাজেট ছিল ৭১.১০ বিলিয়ন ডলার। আবার প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে চীন সামগ্রিকভাবে ২৬১.০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে। যা কিনা ২০১৮ সাল অপেক্ষা ৫.১০% বেশি। তাছাড়া দেশটি সামরিক গবেষণা এবং উন্নয়ন খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয় করে। চীন তার মোট জিডিপির ১.৯% সরাসরি ব্যয় করে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাত গবেষণা, উন্নয়ন ও পরিচালনায়।

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...