সাম্প্রতিক শিরোনাম

চীনের নব্য সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থান এবং এশিয়ার অনিশ্চিত ভবিষ্যত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অনেকটাই আগে থেকে ৭ই জুলাই ১৯৩৭ সাল থেকে ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত (৮ বছর, ১ মাস, ৩ সপ্তাহ এবং ৫ দিন ব্যাপী) এক অতি মাত্রায় ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হয় তৎকালীন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দুই শক্তিধর দেশ চীন ও জাপান। অত্যন্ত প্রাণঘাতী এই দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধে জাপান ও চীনের উভয় পক্ষের আনুমানিক মোট ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ সাধারণ ও নিরীহ মানুষ ছিলেন। যাদের সাথে যুদ্ধের আদৌ কোন সম্পর্ক ছিলা কিনা সন্দেহ রয়েছে। তাছাড়া এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে পরবর্তী সময়ে আরো প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লক্ষাধিক মানুষ চরম খাদ্যাভাবে এবং অনাহারে মৃত্যুবরণ করেন। যার সঠিক কোন পরিসংখ্যান বা হিসাব আজো জানা সম্ভব হয়নি।

বিগত দুই শতাব্দীর মধ্যে ঘটে যাওয়া বৃহত্তর এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ছিল এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের এই দ্বিতীয় সিনো-জাপান ওয়ার। এই ব্যাপক মাত্রায় প্রাণহানী ও এবং অত্যন্ত ধ্বংসাত্বক যুদ্ধের ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে দেশ দুটি শিক্ষা না নিয়ে এক বিংশ শতাব্দীতে এসে আবারো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিকে বাধাগ্রস্থ করে এতদ অঞ্চলে ভয়ঙ্কর সামরিক পেশিশক্তি প্রদর্শন, চরম উত্তেজনা এবং নিরবে ভবিষ্যত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে উভয় পক্ষই। যদিও এক্ষেত্রে চীন আগ্রাসী সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করলেও জাপানের এক্ষেত্রে ভূমিকা অনেকটাই রক্ষণাত্বক বা ডিফেন্সিভ। আর উভয় পক্ষের শুভাকাঙ্ক্ষী, পরামর্শক বা বন্ধু সেজে অস্ত্র ব্যাবসার পাশাপাশি তলে তলে আগুনে ঘী ঢালার কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দুই যুদ্ধবাজ সামরিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

তবে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ আগের সবকটি যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয় ও ধ্বংসের জন্য জাপান সরাসরি দায়ী থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ চীন সাগর এবং এতদ অঞ্চলে বিরামহীন সামরিক উত্তেজনা ও অস্থিতশীল যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য চীনের নব্য সামরিক উত্থান ও অন্য দেশগুলোকে ভীতি বা সামরিক পেশিশক্তি প্রদর্শন নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের উদীয়মান সামরিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন মনে করে যে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে চীন এমন এক উচ্চ সক্ষমতার সামরিক বাহিনী তৈরি করে ফেলবে, যাদের কেউ আর কোন দিন পরাজিত করতে পারবে না। আর চীনের এই নতুন মহা পরিকল্পনাকে অত্যন্ত সমীহর চোখে দেখছে বিশ্বের অন্যান্য সুপার পাওয়ার দেশগুলো।

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে চীনের শি জিং পিং কমিউনিস্ট সরকার স্পষ্টভাবে চীন নিয়ন্ত্রিত একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেন যে, উদীয়মান বিশ্ব পরাশক্তি চীনের এই নব্য সামরিক ও প্রযুক্তিগত উত্থান ও উন্নয়ন অন্য কোন দেশ কিংবা কাউকে আক্রমণ করার জন্য নয়। তবে শি জিং পিং কিন্তু এও জানিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে যে কোন পরিস্থিতিতে চীন তার প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে এবং যে কোন রণাঙ্গনে শত্রুকে পরাস্ত করে জয়ী হবে, এমন চৌকস ও উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে কাজ করে যাবে চীন। আর চীনের প্রেসিডেন্টের এহেন কৌশলগত রণ হুঙ্কারে অত্যন্ত বিব্রত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জাপান, ভারতসহ দক্ষিণ চীন সাগর এবং এশিয়া প্যাসিফিক সংলগ্ন একাধিক দেশ। আর এহেন পরিস্থিতে এতদ অঞ্চলের প্রায় অধিকাংশ দেশই তাদের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করাসহ এক রকম নিরবেই ভবিষ্যতে প্রবল যুদ্ধের আশাঙ্খায় ইতোমধ্যেই যে যার অর্থনৈতিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে সামরিক ও যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে বলেই প্রতিয়মান হয়।

তবে যাই হোক না কেন, বিগত তিন দশকে চীনের সামরিক বাহিনী নিত্য নতুন মারণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম তৈরি করতে শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে গেলেও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও দক্ষতার বিবেচনায় চীন কিন্তু এখনো পর্যন্ত রাশিয়া, ইউরোপ কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে চীন কিন্তু ঠিকই তার প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে অতি দ্রুত সুপার পাওয়ার দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে সামরিক উন্নয়ন ও উচ্চ মাত্রায় প্রযুক্তিগত ব্যবধান কমিয়ে আনছে। আর এই বিশাল ব্যবধান দূর করতেই এবার কাজ শুরু করেছে চাইনিজ কমিউনিস্ট সরকার এবং দেশটির ডিফেন্স রিলেটেড রিসার্চ সেন্টার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবগুলো। বর্তমানে সামরিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপক গবেষণায় দেশটি শত বিলিয়ন ডলার ব্যায় করে যাচ্ছে। যা কিনা সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়কারী কোন দেশ।

একুশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই চীনের শি জিং পিং সরকার তার দেশের সামরিক বাহিনীকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিগত এক দশকে সামিরক বাজেট বৃদ্ধ করেছে প্রায় আট গুণ। যেখানে বিশ্বের বুকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়কারী দেশ হিসেবে চীনের ২০১৪ সালে সামরিক বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৩১ বিলিয়ন ডলার এবং তা ২০১৮ সালের শেষে এসে ১.১১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। আবার ২০১৯ সালে চীনের সামরিক বাজেট ৭.৫% বৃদ্ধি পেয়ে তা ১৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌছে যায়। তাছাড়া চীন চলতি ২০২০ সালে তাদের সামরিক বাজেট ৬.৬% বৃদ্ধি করে ২০০.৪১ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে। যদিও চীনের প্রকৃত সামরিক বাজেট কত বা প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দেশটি প্রতি বছর কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে তার সার্বিক তথ্য উপাত্ত নিরপেক্ষ কোন মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রমান করার সুযোগ নেই বললেই চলে। যদিও চীনের একাধিক ওয়েব সাইট এবং বৈশ্বিক পর্যায়ের নিউজ পোর্টাগুলো বিভিন্ন সময়ে চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট ও সামরিক সক্ষমতা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে থাকে।

আবার বিশ্বের এক নম্বর সামরিক সুপার পাওয়ার দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলতি ২০২০ সালের সামগ্রিক সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৭১৭ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা বৈশ্বিক মোট সামরিক ব্যয়ের প্রায় ৪০% বলা চলে। তাছাড়া ঠিক একই সময়ে বিশ্বের আরেক সুপার পাওয়ার রাশিয়ার সামরিক বাজেট ছিল ৭০ বিলিয়ন ডলার। আর দক্ষিণ এশিয়ার চীনের অন্যতন বৈরি প্রতিদ্বন্দ্বী ও উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশ ভারতের ২০২০-২১ অর্থ বছরে সামরিক বাজেট বিরাদ্দ করা হয় ৭৩.৬৫ বিলিয়ন ডলার এবং জাপানের সামরিক বাজেট ২০১৯ সালের তুলনায় ৮.৩% বৃদ্ধি করে ২০২০ সালের জন্য ৫১.৯০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে। যদিও গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার কিংবা সুইডেন ভিত্তিক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পীস রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের বৈশ্বিক সামরিক বাজেট সংক্রান্ত প্রদত্ত তথ্য উপাত্তে যথেষ্ঠ ভিন্নতা ও গড়মিল লক্ষ্য করা যায়।(পর্ব-১)


সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের ও সুইস পর্যবেক্ষক দল।দুপুর একটার দিকে উপজেলার কয়েকটি ভোট...

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার উদ্দেশ্যই ট্রেনে আগুন দেয়া হয় বলে জানায় ডিবি। বিএনপি...