আজ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও টেলি কনফারেন্সের মাধম্যে চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে করভেট ক্লাস বানৌজা ‘সংগ্রাম’ যুদ্ধজাহাজের আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন বা কমিশনিং ঘোষণা করেন। মুলত চীনের তৈরি ৯০ মিটার দীর্ঘ ও ১১ মিটার প্রস্থের এই অত্যাধুনি নতুন যুদ্ধ জাহাজটিকে যতটা সম্ভব সর্বশেষ এডভান্স নেভাল ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে সাগরের বুকে চলতে সক্ষম।
করভেট ক্লাস বানৌজা ‘সংগ্রাম’ যুদ্ধজাহাজটি যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে শত্রু পক্ষের বিমান, জাহাজ এবং স্থাপনায় কার্যকর আঘাত হানতে সক্ষম। জাহাজটিকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, অত্যাধুনিক থ্রিডি রাডার, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম এবং রাডার জ্যামিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক নেভাল যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত করা হয়েছে। তাছাড়া জাহাজটিতে একটি হেলিকপ্টার অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য ল্যান্ডিং ডেক রয়েছে।
বানৌজা ‘সংগ্রাম’ জাহাজটি আগামী ৯ জুলাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের জন্য লেবাননের উদ্দেশে যাত্রা করবে। এটি হবে যুদ্ধজাহাজটির প্রথম সমুদ্র জয়ের যাত্রা। লেবাননের ভূ-মধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের সদস্য হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বিশ্বশান্তির দূত হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। নতুন বানৌজা ‘সংগ্রাম’ যুদ্ধজাহাজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সমুদ্রসীমা পেরিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আসলে ডিফেন্স ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার এবং আমাদের নৌবাহিনী। বিশেষ করে আমাদের নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন এবং উন্নত সাজ সরঞ্জাম সংগ্রহে আমাদের সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা মাফিক এবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হলো করভেট ক্লাস বানৌজা ‘সংগ্রাম’ যুদ্ধজাহাজ। তাছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনী পটুয়াখালী জেলার রাবনাবাদে বানৌজা শের-এ-বাংলা নামক একটি আধুনিক নৌঘাঁটি স্থাপন করছে। যা হবে কিনা দেশের সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি। আর এই আধুনিক নৌঘাঁটিতে বিমান উড্ডয়ন এবং সাবমেরিন ডক করার বিশেষ সুবিধা রাখা হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহি্নী ৯০টি যুদ্ধজাহাজ পরিচালনা করে। যার মধ্যে রয়েছে চারটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ফ্রিগেট, তিনটি টহল ফ্রিগেট, পাঁচটি কর্ভেট এবং ৪৬ টি অন্যান্য ফ্যাসালিটির ছোট আকারের জাহাজ।
এক বিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি কার্যকর নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের সুবিশাল গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ সময়ব্যাপী মোতায়েনযোগ্য এ জাহাজর মাধ্যমে সমুদ্র এলাকায় অনুপ্রবেশ ঠেকানো, চোরাচালান ও জলদস্যুতা রোধ, সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা, সমুদ্র অর্থনীতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হবে। তার পাশাপাশি সমুদ্রের তলদেশে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বরাদ্দকৃত ব্লকসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত থাকবে বানৌজা ‘সংগ্রাম’।
সিরাজুর রহমান