সিরাজুর রহমান: আগামী ২০৩০-৩৫ সাল হতে যাচ্ছে যুদ্ধবিমান ও বোম্বারের শেষ ডেড লাইন। কারণ এই এক দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইসরাইল, তুরস্ক, ফ্রান্স, ইউকে, ইরান, জার্মান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানসহ বেশ কিছু নিজস্ব প্রযুক্তি নির্ভর দেশগুলোর উচ্চ প্রযুক্তির রাডার এণ্ড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মিসাইল এতটাই আধুনিক এবং হাইপারসনিক গতি লাভ করবে যে, সে দেশের আকাশে বর্তমান যুগের প্রচলিত থাকা শত্রু পক্ষের জেট ফাইটার বা যুদ্ধবিমানের প্রবেশ করাটা এক কথায় অসম্ভব বা বৈমানিকের নিজ মৃত্যুকে বরণ করে নেয়ার মতো বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমানে আধুনিক এভিয়েশন প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে আরো আধুনিক এবং উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে কমব্যাট এণ্ড ননকমব্যাট ড্রোন বা আনম্যান এরিয়াল ভ্যাসেলস (ইউএভি)। যার আলামত কিনা এখনই শুরু হয়ে গেছে। যদিও বর্তমানে বিশ্বে সার্ভিসে থাকা কমব্যাট ড্রোনের মিসাইল ও অস্ত্র বহণ ক্ষমতা মাত্র ৫০ কেজি থেকে ১,৭০০ কেজি পর্যন্ত দেখা যায়। তবে তা ২০৩০ এর পর কমব্যাট ড্রোনের অস্ত্র বহণ ক্ষমতা খুব দ্রুত তা ৩ হাজার কেজিতে পৌছে যেতে পারে। আকার ও উড্ডয়ন সক্ষমতা হয়ে যাবে হয়ত দ্বিগুণ। তার সাথে ড্রোনের এক নাগাড়ে আকাশে উড্ডয়ন সক্ষমতা ২০-৩০ ঘন্টা থেকে বেড়ে ৬০ ঘন্টাতে চলে গেলেও তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
যে দেশগুলো ড্রোন তৈরি করতে পারবে না তারা বিলিয়ন ডলার ব্যায় করবে কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন আমদানিতে। এক কথায় ২০৩০ সালের দিকে প্রতি বছর বিশ্বে ড্রোন (ইউএভি) এর বানিজ্য হবে কমপক্ষে ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ড্রোন চালক বিহীন হওয়ায় এবং দীর্ঘ সময়ে আকাশে উড্ডয়ন করার ক্ষমতা থাকায় ও সর্বোপরি বৈমানিকের জীবনের ঝুঁকি ০% এ নেমে আসায় তখন হয়ত যুদ্ধবিমানের স্থান দখল করে বিশ্বের দেশগুলোর বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে শত শত উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন মোতায়েন করা থাকবে। হয়ত সে সময়ে ড্রোনগুলোকে সার্বক্ষণিক কোন গোপন স্থান থেকে পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের দরকার হবে না। এমনো কিছু ইউএভি সিস্টেম আসতে যাচ্ছে, তা হয়ত শত্রু পক্ষের সীমানয় প্রবেশ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী কি করতে হবে সে সিদ্ধান্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেই নিতে সক্ষম হবে।
এদিকে আবার যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে অধিকাংশ মিসাইলের গতি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ থেকে ১০ ম্যাক হাইপারসনিক। বিশেষ করে সিরিয়া এবং লিবিয়ায় মিসাইল ও ড্রোনের ব্যাপক ব্যাবহার প্রযুক্তি নির্ভর দেশগুলোকে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আবার নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করেছে। সিরিয়া এবং লিবিয়ায় রাশিয়ার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন থাকার জন্য সেখানে তূরস্কের এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান ব্যাবহার করাটা ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কমব্যাট ড্রোন ব্যাবহার করে সে ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ করে ফেলেছে যুদ্ধরত দেশটি।
তাছাড়া চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তাদের মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারের এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ব্যাবহার করে রাডারকে ফাঁকি দিয়ে সবার নজর এড়িয়ে যেভাবে ইরাকে অবস্থানরত ইরানের চীফ কমণ্ডার কাশেমী সোলায়মানীকে একেবারে নিখুঁতভাবে এজিএম-১১৪ হেলফায়ার মিসাইলের আঘাতে হত্যা করে। যদিও এটি ছিল একটি একেবারেই অন্যায় হত্যাকাণ্ড। যা হয়ত এফ-১৬ বা অন্য কোন যুদ্ধবিমানের সাহায্যে করা সম্ভব হত কিনা সন্দেহ আছে।
তাছাড়া সিরিয়ায় থাকা রাশিয়ার বেশ কিছু পান্তাসির এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে একেবারে স্বল্প মূল্যের তুর্কী বায়রাক্তার টিবি-২, আনকা-এস ড্রোনের মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস করে এক নতুন ইতিহাস গড়ে। যদিও সিরিয়ার আসাদ বাহিনী রাশিয়ার ম্যানপ্যাড মিসাইলের আঘাতে বেশ কিছু তুর্কী ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। অনেকটাই দেরিতে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউকে, ইসরাইল, চীন এবং তুরস্কের পাশাপাশি রাশিয়া ড্রোন (ইউএভি) প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে।