‘আশ্বিন’ হচ্ছে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এক নতুন মাত্রার সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। আর ২০০ কিলোমিটার রেঞ্জের এই উচ্চ প্রযুক্তির ‘আশ্বিন’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নে কাজ করছে ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। ‘আশ্বিন’ হল এডভান্স এয়ার ডিফেন্স ইন্টারসেপ্টর মিসাইল সিস্টেম (এএডি)। যা ভারতের বিএমডি বা ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম হিসেবে কাজ করে। কার্যত ১.২ টন ওজনের নতুন এই অশ্বিন সারফেস টু এয়ার মিসাইলটি লম্বায় ৭.৫ মিটার এবং জ্বালানী হিসেবে উচ্চ মাত্রার সলিড ফুয়েল ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এর মেইটেন্যান্স এন্ড অপেরেটিং সিস্টেম অনেক সহজ। অত্যাধুনিক এই ‘অশ্বিন’ সিস্টেমে থাকছে হাই টেক কম্পিউটার, নেভিগিয়েশন সিস্টেম এবং ইলেক্ট্রো ম্যাকানিক্যাল এ্যাক্টিভেটর। অর্থ্যাৎ আশ্বিন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটি একাধারে বিমান ও ব্যালিস্টিক মিসাইলকে তো ধ্বংস করবেই সাথে এর কাছে কোনো স্টেলথ বিমান ই স্টেলথ থাকবে না। ক্রুজ মিসাইল থেকে শুরু করে যেকোনো স্টেলথ বিমান ই এর থেকে নিরাপদ নয়। আশ্বিন মিসাইলের গতি ৫ থেকে ৭ ম্যাক। অর্থাৎ ‘আশ্বিন’ ডিফেন্স সিস্টেমের মিসাইলের গতিবেগ হাইপারসনিক। রেঞ্জ সর্বোচ্চ ২০০কিমি। যদিও এর প্রকৃত রেঞ্জ এখনো প্রকাশ করা হয়নি এবং সার্ভিসে থাকা ভারতের আকাশ স্যামের থেকে অনেক বেশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয়েছে এটিকে। ৫ থেকে ৭ ম্যাক গতি সম্পন্ন ‘আশ্বিন’ স্যামের প্রকৃত ম্যানুয়েভারেবিলিটির প্রায় ২৫ থেকে ৩০জি। যেখানে সাধারণত একটি অত্যাধুনিক জেট ফাইটারের ম্যানুয়েভারেবিলিটি সর্বোচ্চ ১০ থেক ১২জি পর্যন্ত হয়ে থাকে। নতুন এই আশ্বিন স্যামে থাকছে এক্টিভ রেডার হোমিং এবং ইন্টার্নাল নেভিগেশান সিস্টেম। যাতে টার্গেটের দিকে মিসাইল লঞ্চ হলে তা নিজে নিজেই গাইডেন্স পাবে। যা ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক নব যুগের সূচনা করেছে। সার্ভিসে থাকা আকাশ মিসাইলে থাকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হাই এক্সপ্লুসিভ ওয়ারহেড। যেটি থাকছে না ‘আশ্বিন’ সিস্টেমে। বদলে থাকবে “নেটিক কিল” পদ্ধতি। অর্থাৎ ব্যাপক গতীতে আঘাত হানার মাধ্যমে বায়ু মণ্ডলের উপরেই ধ্বংস করে ফেলা হবে সুনিদিষ্ট টার্গেটকে। মুলত এই পদ্ধতিতেই বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধুনিক সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম যেমন এস-৪০০ বা থাডকে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। আকাশ স্যামে কোনো ক্যানিস্টার ছিল না। ফলে অনেক বেশি গ্রাউন্ড সিগনেচর হতো এবং তা শত্রুপক্ষের আক্রমণের যথেষ্ঠ অনুকূল ছিল। কিন্তু ‘আশ্বিন’ স্যাম কে প্রাহার ক্ষেপণাস্ত্রের ক্যানিস্টার ব্যাবহার করা হয়েছে। আশ্বিন ডিফেন্স সিস্টেমে এক লঞ্চারে ৬টি মিসাইল থাকে ও একটি ব্যেটারিতে ৩০টি মিসাইল রেডি টু লঞ্চ মুডে থাকে এবং রি-লোডের জন্য আলাদা মিসাইল রেডি করা থাকে। এটিকে এস-৪০০ বা ৩০০ এর মত ভূমি থেকে সরাসরি ৯০ ডিগ্রী কোনে উৎক্ষপন করা হয় এবং পরে মিসাইলটি তার সুনিদিষ্ট টার্গেটের দিকে বেকে যায় এবং রেডার সিস্টেম হিসাবে এতে ১৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জের (এলআরটিআর) সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে, যাতে শত্রুর যে কোন ধরণের এ্যারিয়াল সিস্টেমকে কার্যকরভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সিরাজুর রহমান