সিরাজুর রহমানঃ ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে মানব ইতিহাসে্র অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং জঘন্যতম নিউক্লিয়ার অস্ত্রের প্রয়োগ করে বসে শুধুমাত্র নিজেকে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার দেশ হিসেবে প্রকাশ করার জন্য। অথচ হিরোসিমায় ফেলা লিটলবয় নামক এটম বোমার ধ্বংস ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৫ কিলোটন টিএনটি এবং নাগাসাকিতে ফেলা ফ্যাটম্যানের ধ্বংস ক্ষমতা ছিল ২২ কিলোটন টিএনটি। আর এই দুটি এটম বোমার আঘাতে জাপানের হিরোশিসা এবং নাগাসিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোট তিন লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
তাছাড়া শহর দুটি নিউক্লয়ার হামলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়ে যায়। যা হোক বর্তমান সময়ে ২০২০ সালে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ক্লাস সাবমেরিনে থাকা মাত্র একটি ট্রাইডান্ট-২ ডি-৫ (এসএলবিএম) মিসাইলে ৪৫৫ কিলোটন টিএনটি ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়ারহেড বহন করে এবং রাশিয়ার সাইলো বেসড আরএস-৩৬/২৮ ইন্টারকন্টিন্যানটাল ব্যালেস্টিক মিসাইল ৮০০ কিলোটন টিএনটি ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।
আর পুরো মাত্রায় কোল্ড ওয়ার চলাকালীন ১৯৬১ সালের ৩০শে অক্টোবর তৎকালীন সময়ে সভিয়েত ইউনিয়ন তাদের তৈরি অতি মাত্রায় ৫০ মেগাটন টিএনটি ধ্বংসাত্বক ক্ষমতার লেসরা তিন স্তরের হাইড্রোজেন বোম্বস পরীক্ষা করে সারা বিশ্বে এক ভীতিজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তবে বলাই বাহুল্য সুপার পাওয়ার দেশগুলোর এই সমস্ত অতি ভয়ঙ্কর ও প্রাণঘাতী নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার মিসাইল কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেশ কয়েকটি মেগা শহর মাটির সাথে মিশিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ঠ।
আর এ মুহুর্তে বিশ্বের নয়টি দেশের অস্ত্র ভাণ্ডারে আনুমানিক ১৬ হাজারের কাছাকাছি নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্রের বিশাল মজুত রয়েছে। যা দিয়ে হয়ত আমাদের এই পৃথিবীকে কয়েক শত বার পুরোপুরি ধ্বংস করে নরকে পরিণত করতে পারে। আবার তার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলোর কাছে হাজার হাজার টন রসায়নিক অস্ত্রের পাশাপাশি নিরব ঘাতক বায়োলজিক্যাল ওয়েপন্সের মজুত গড়ে তুলেছে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য।
তাই এভাবে ভবিষ্যতে আমাদের মানব সভত্যা ধ্বংসের জন্য সুপার পাওয়ার দেশগুলো আর কতই না ধ্বংসাত্বক নিউক্লিয়ার, থার্মোনিউক্লিয়া, বায়োলজিক্যাল, ক্যামিক্যাল অস্ত্র তৈরি করে রেখেছে যা কিনা বিশ্ব সমাজের একেবারেই ধারণার বাহিরে। হায়রে আমার উন্নত বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, এখন এই এক বিংশ শতাব্দী এসে সারা বিশ্ব আজ (প্রাকৃতিক হোক কিংবা মানব সৃষ্ট কারণে) প্রাণঘাতী ও অতি ভয়ানক এক অজানা করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) বায়োলজিক্যাল বিশ্বযুদ্ধের মোকাবেলা করে যাচ্ছে। যা কিনা ঝড়ের গতিতে সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে শুরু করে দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় চার মিলিয়ন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন।
আজ এই মরণব্যাধি ভাইরাস ব্যাপক মাত্রায় ইউরোপ এবং আমেরিকায় প্রভাব বিস্তার করলেও তা যে আগামীতে সারা এশিয়ায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে যে পড়বে না তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সকলকে এখনই সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে। এ মুহুর্তে আমাদের সম্মানিত সরকারের করোনা (কভিড-১৯) ভাইরাস বিরোধী এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার যাবতীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে নিজ ঘরে অবস্থান করি। তাই আসুন আমরা সবাই নিয়ম মানি এবং যেখানে সেখানে আড্ডাবাজি কিংবা অন্যের সমালোচনা না করে নিজেই নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করি ও সামাজিক প্রতিরক্ষা বলয় গড়ে তুলি।
আর হে, ব্যাপক মাত্রায় কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা যুদ্ধ বিগ্রহ হলেই অতি উৎসাহী হয়ে এই ইমাম মাহাদি আসছে ও দাজ্জালের আগমন অতি নিকটে ইত্যাদি গুজব এবং প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে কিংবা মনগড়া ধর্মীয় মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে সুমহান ইসলাম ধর্মের সম্মান ও মর্যাদা ধ্বংস করা থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত। ধন্যবাদ