বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-ইরান দ্বন্দ এবং পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে উভয় পক্ষের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। তবে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন বার বার ইরানে সামরিক আগ্রাসন বা বড় ধরণের হামলার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে গেলেও তাঁদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু যুদ্ধ করা নয়। বরং ইরানকে যুদ্ধভীতি, অর্থনৈতিক অবরোধ এবং তেল বিক্রয়ের উপর ব্যাপক মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে ফেলা এবং যতট সম্ভব চাপ প্রয়োগ করে ইরানকে আলোচনার টেবিলে এনে পরমাণু শক্তি অর্জনের পথ চিরততে বন্ধ করাই মুখ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এটা ঠিক যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-মার্কিন সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। তাছাড়া ট্রাম্প মুখে যাই বলুক না কেন, নিজ পকেটের অর্থ ব্যয় করে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে মোটেও ইচ্ছুক নয়। তবে প্রকাশ থাকে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বরং সৌদি আরব এবং তার সহযোগী কিছু দেশ অতি উৎসাহী হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে প্রবল উস্কানি, বিলিয়ন ডলারের আর্থিক বিনিময়ের মাধম্যে হলেও বার বার চাপ দিচ্ছে সীমিত পরিসরে হলেও ইরানে যেন আকাশ ভিত্তিক সামরিক আগ্রাসন চালানো হয়।
আসলে ১৯৯১ সালে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের অদূরদর্শী কুয়েত আক্রমণের ফলে যে ভয়াবহ যুদ্ধ (পার্সিয়ান ওয়ার) হয়েছিল তা ছিল বিশ্বের জন্য একটি শিক্ষানীয় বিষয়। একদিকে যুদ্ধকালীন সময়ে বিশ্ব মিডিয়া কিন্তু সাদ্দামের লেংটা বাহিনীকে অতি ভয়ঙ্কর বা অত্যন্ত শক্তিশালী বলে অপপ্রচার করতে থাকে। তাছাড় সাদ্দাম নিজেই অতি উৎসাহী হয়ে ইরাকের অস্ত্র ভাণ্ডারে অতি ভয়ানক রসায়নিক, জীবাণু এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র মজুদ রয়েছে বলে অপপ্রচার করে বেড়াতেন। অথচ যুদ্ধ শেষে দেখা গেল ইরাকের সামরিক বাহিনীর হাতে এমন কোন ভয়ঙ্কর বা প্রাণঘাতী যুদ্ধাস্ত্র আদৌ ছিলই না বরং মাস খানেকের মধ্যে কথিত তৎকালীন সময়ের বিশ্বের অন্যতম ৪র্থ সামরিক পরাশক্তি ইরাকের পরাজয় সুনিশ্চিত হয়ে যায়। আর তৎকালীন মার্কিন বুশ সরকার কিন্তু ঠিকই সাদ্দামের হোসেনের এই ভূল সমর কৌশল এবং অতিরঞ্জিত অপপ্রচারের বিষয়টি ধরে ফেলে এবং কৌশলে মহাজোট গঠন করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইরাককে ধ্বংস এবং কিছু বছর পর সাদ্দাম হোসেনকে হত্যার মাধ্যমে ইরাকে পুতুল সরকার বসিয়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নিয়ে নেয়।
আবার সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ইরাকের মতো ভূল সমর কৌশল বা অপপ্রচারের বা প্রপাগাণ্ডা চালানোর কৌশলকে সামনে রেখে ইরানের আরসিজি বিপ্লবী বাহিনী তার ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোপন অস্ত্র দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে থাকা নৌ-বহরকে একেবারেই ধ্বংস করে দেওয়ার যে হুমকির দিচ্ছে, তা দেখে আমার মন আঁতকে উঠেছে। কারণ আবার সেই সাদ্দাম হোসেনের মতো ভুল কৌশল এবং অপপ্রচারের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া, চীন কিম্বা অন্যের উস্কানিতে ভবিষ্যতে মার্কিন ট্রাম্প বাহিনীর মোকাবেলা করার অর্থই হচ্ছে স্বেচ্ছায় নিজের পরাজয় এবং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেয়া। আর মার্কিন প্রশাসন এবং পেন্টাগন খুব ভালো করেই জানে বর্তমান ইরানের সামরিক সক্ষমতা কতটুকু এবং ইরান শেষ পর্যন্ত কিবা করতে পারে।
এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, ১৯৯১ সালে ইরাককে প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্টের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করা হলেও এ যুদ্ধের সার্বিক খরচ বা ব্যয়ভারের ৭০% পর্যন্ত একাই বহন করে সৌদি সরকার। মনে করা হয় ১৯৯১ সালে ইরাক যুদ্ধে সৌদি আরব একাই ৩৩.০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। আর পরবর্তীতে ভয়ঙ্কর অস্ত্র থাকার অজুহাতে এবং ইরাকের তেল সম্পদ নিজ দখলে আনতে বা ইরাক দখলের জন্য বুশ প্রশাসন হয়ত ৫.০০ বিলিয়ন ডলার নিজে ব্যয় করে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়।
যদিও মধ্যপ্রাচ্যে কে কার শত্রু বা বন্ধু তা বোঝা বেশ কঠিন একটি বিষয়। তাই বর্তমানে মধ্যপ্রচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতে ইরানের এখন একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে নিজস্ব আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করা এবং সৌদি আরব, ইসরাইল ও তুরস্কের মতো উদীয়মান দেশগুলোকে যতটা সম্ভব কৌশলে ঘায়েল করা। ইরান চায় মধ্যপ্রাচ্যে একক আধিপত্য বজায় রাখতে এবং সেই উদ্দেশ্য সাধনে ইরান তার সহযোগী দেশ সিরিয়া, হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথী মিলিশিয়া এবং অন্যান্য সামরিক সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে এক ও অভিন্ন জোট গড়ে তুলতে অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে যাচ্ছে।
তবে ইরান তার এই অবাস্তব স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিলিয়ন ডলারের অর্থ, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র যোগান দিয়ে গেলেও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য এবং সামরিক উপস্থিতি বজায় থাকায় ইরানের সার্বিক নিরাপত্তা এখনো অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। ইরান চাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে একক আধিপত্য বিস্তার করে ভবিষ্যতে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে। যা কিনা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার দসররা কৌশলে করে যাচ্ছে। তাছাড়া মধ্যপ্রচ্যে অতি সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের নব্য উত্থান এবং প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে উঠে সিরিয়া এবং লিবিয়ায় বেশকিছু সফল সামরিক অভিযান পরিচালনার বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে লিপ্ত থাকা সবগুলো পক্ষের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদিকে আবার ইরানকে থামাতে বা স্থায়ীভাবে জব্দ করার জন্য মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি ও তার কিছু অনুসারী দেশ অতি উৎসাহী বলে মনে করা হয়। আর ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ইরান-মার্কিন যুদ্ধের শতভাগ খরচ (আনুমানিক ১০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত) বহন করতে গোপনে অনেক আগেই নিজেদের মধ্যে আপোষ রফা করে যে রাখেনি তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। যাই হোক এহেন লোভনীয় এবং অতি লাভজনক আর্থিক বিষয়টি না চাইতেই সামনে এসে যাওয়ায় ট্রাম্প সাহেব কোন অবস্থাতেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না। আবার সরাসরি ইরানে সামরিক আগ্রাসন চালনোর মতো বড় ধরণের ঝুঁকি নিতেও বেশ দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন। তাই কৌশলে ইরানের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে সৌদি জোটকে খুশি করার পাশাপাশি যে করে হোক ইরানকে আলোচনার টেবিলে এনে তার পরমাণু শক্তি অর্জনের পথ চিরতরে বন্ধ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক রকম বদ্ধপরিকর বলেই প্রতীয়মান হয়।
এখনে অবশ্য ইরানকে যতটা সম্ভব শক্তিহীন বা নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে ইসরাইলকে দীর্ঘ মেয়াদে সর্বোচ্চভাবে নিরাপদ এবং মধ্যপ্রাচ্যের একক অঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং এর ভয় দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা ও আমীর শাসিত নির্বোধ দেশগুলোর কাছে দীর্ঘ মেয়াদে লোভনীয় অস্ত্র ব্যবসা এবং বিলিয়ন ডলারের চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখতে সুকৌশলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কাজ করে যাচ্ছে বলে মনে করা হয়। তবে এখানে যুদ্ধ হোক বা না হোক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু ঠিকই সৌদি ও তার জোটের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত শত বিলিয়ন ডালারের চাঁদা আদায় করেই ছাড়বে।
এখন ইরানের সার্বিক অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা একটু পর্যালোচনা করা যাক। ইরান আসলে ইতোমধ্যেই মার্কিন প্রশাসনের শতাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়ে ভয়াবহ ধরণের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সরাসরি বিরুপ প্রভাব পড়েছে ইরানের প্রধান আয়ের উৎস তেল রপ্তানি খাতে। দেশটির মোট রপ্তানির ৫৬% পর্যন্ত তেল থেকে আসলেও ২০২০ এসে তা ৪০% এর নিচে নেমে গেছে। আর তারই ধারবাহিকতায় এক বছরে ইরানের তেল রপ্তানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০১৯ সালের সমাপ্তি বছরে ইরানের জিডিপি (মাইনাস) -৬% এ পৌছে যায় এবং দেশের অভ্যন্তরীন মূল্যস্ম্ফীতি প্রায় ৪০% এসে ঠেকে। ২০২০ এর নতুন বছরের এক হিসেব অনুযায়ী এক ডলারের বিপরীতে প্রায় ৪২,১১০ ইরানী রিয়াল গুনতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ জনগণকে। যা টাকার হিসেবে ১ টাকার বিপরীতে ৫০০ ইরানি রিয়াল ধার্য্য করা হয়। তাছাড়া দেশটির প্রায় ৪ হাজারের কাছাকাছি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং কল কারখানা ইতোমধ্যেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুপ প্রভাবে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে কিম্বা ব্যাবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। তাছাড়া ইরানে বৈদেশিক বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় বিশ্বের কোন দেশের সাথেই ভালো ভাবে বানিজ্য করার সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে হয় না।
আবার খেয়াল করুন, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন-ইরান দ্বন্দ এবং উত্তেজনার পেক্ষাপটে মার্কিন বিমান বাহিনী কাতারে বি-৫২ হেভি বোম্বার মোতায়েন করলেও খোদ কাতার সরকার এ বিষয়ে আগে থেকে জানতো কিনা বা বি-৫২ বোম্বার মোতায়েনে কাতার সরকারের আদৌ অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না সন্দেহ। আর এ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাস্তবে আসলে কতটুকু স্বাধীন এবং নিজস্ব সার্বভৌমত্ব ভোগ করে বা স্বাধীন তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।
অন্যদিকে ইরান তার সামরিক সক্ষমতা নিয়ে যে অতিরঞ্জিত তথ্য উপাত্ত প্রতি নিয়ত প্রচার করে যাচ্ছে, তা কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই আঁচ করতে পেরেছে। বিশেষ করে ইরানের গ্রাউণ্ড এন্ড নেভাল ফোর্সে বেশ শক্তিশালী বলে মনে করা হলেও বাস্তবে ইরানের বিমান বাহিনীর প্রকৃত সক্ষমতা অত্যন্ত বাজে অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে ইরান তার বিমান বাহিনী এবং আকাশ সক্ষমতা যতই উঁচু করে দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, ইরানের সামরিক দূর্বলতা এবং স্পর্শকাতর অক্ষমতা কিন্তু বিশ্বের নজর এড়িয়ে যাচ্ছেন না। বর্তমানে ইরানের বিমান বাহিনীতে প্রায় আট শতাধিক জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার, সামরিক এবং প্রশিক্ষণ বিমান থাকলেও তার ৭০% পর্যন্ত অতি পুরনো এবং সভিয়েত আমলের। তাছাড়া সত্তর দশকে রেজা শাহ এর আমলে শতাধিক ভালো মানের মার্কিন এফ-১৪, এফ-৪ এবং এফ-৫ জেট ফাইটার সংগ্রহ করলেও বর্তমানে তার ৬০% পর্যন্ত একেবারেই গ্রাউণ্ডডেড হয়ে পরে রয়েছে। আবার প্রযুক্তির বিচারে বর্তমান সময়ে এগুলো একেবারেই অচল বলা চলে।
আবার সাম্প্রতিক সময়ে ইরান তাঁদের নিজস্ব প্রযুক্তির অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রকাশ্যে আনে। বিশেষ করে কয়েক মাস আগে ইরানের আইরাসিজি বাহিনী তার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে মার্কিন ২০৩ মিলিয়ন ডলারের গর্বের গ্লোবাল হক ড্রোনকে আকাশেই ধ্বংস করে এক নতুন ইতিহাস রচনা করে। তবে ইরানের হাতে অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম থাকা স্বত্তেও ইরান কেন সিরিয়ায় মোতায়েন থাকা ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং রসদ ডিপোগুলো কিন্তু কোন অবস্থাতেই ইসরাইলের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করতে পারছে না। এখানে সিরিয়ায় আসাদ বাহিনী কার্যত তাঁদের হাতে থাকা সেই পুরনো সভিয়েত আমলের এস-১২৫ এবং এস-২০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করেই যতটা সম্ভব ইসরাইল এবং মার্কিন বিমান হামলা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে যতই হোক সিরিয়ার আসাদ সরকারকে রক্ষার উদ্দেশ্যে এ পর্যন্ত আনুমানিক ১০ হাজারের কাছাকাছি ইরানী সৈন্য, স্বেচ্ছাসেবক এবং সামরিক অফিসারের মৃত্যুর দায় ইরানের খোমেনী সরকার কোন অবস্থাতেই এড়াতে পারেন না।
তাছাড়া খেয়াল করার মতো একটি বিষয়, ইসরাইল প্রতি নিয়ত সিরিয়ায় আসাদ এবং ইরানের সামরিক ঘাঁটিতে নির্বিচারে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে গেলেও অত্যন্ত কৌশলেই সিরিয়ায় থাকা রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি এবং স্থাপনায় ছায়াও মারায় না বা সর্বোচ্চভাবে রাশিয়াকে এড়িয়ে চলে। অন্যদিকে সিরিয়ায় ইসরাইল যতই বিমান হামলা চালাক না কেন সিরিয়ায় মোতায়েন থাকা রাশিয়ার সুপার এডভান্স এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৩০০ বা এস-৪০০ কোন অবস্থাতেই তা ইন্টারসেপ্ট বা প্রতিরোধে এগিয়ে আসে না বা এ পর্যন্ত তা কোন যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে এমন কোন নজির আছে বলে মনে হয় না। তাই এখানে সিরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের নীতিতে রাশিয়া এবং ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী এবং গোপন সমাঝোতা বা চুক্তি যে নেই তা কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তাই কৌশলগত কারণে রাশিয়া মাঝে মধ্যে মুখে মুখে ইসরাইলের তীব্র প্রতিবাদ করলেও বাস্তবে বরাবরই সিরিয়ায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের ইস্যুতে রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে।
তাই ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট, ইসরাইল এবং তার জোট সম্মিলিতভাবে ইরানে সীমিত বা বড় ধরণের বিমান হামলা করে বসলে, বাস্তবে চরম প্রতিবাদ কিংবা তীব্র নিন্দা ব্যাতিত ইরানের পাশে আদৌ কেউ থাকবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। রাশিয়া এবং চীন মুখে মুখে প্রবল প্রতিবাদ এবং ইরানকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও তলে তলে মার্কিন বিরোধী উস্কানি এবং বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যবসা করা ছাড়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন প্রতিরোধে কিছুই করবে না তা অনেকটাই এক রকম নিশ্চিত বলা চলে।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, ৮২ নং ছোট চৌগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com