সিরাজুর রহমানঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বর্তমানে বিশ্বের বুকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিমানবাহী রনতরী বা সুপার এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর কাছে। আর মার্কিন নৌবাহিনীর হাতে এক্টিভ থাকা সুবিশাল আকারের এক লক্ষ টন ওজনের সুপার এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ারের সংখ্যা মোট ১২টি এবংতাদের এমন বিমানবাহী রনতরীর সংখ্যা যেকোনো দেশের চেয়ে নুন্যতম ১০ গুণ বেশি।
তাছাড়া বর্তমানে সার্ভিসে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব কটি এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার নিউক্লিয়ার পাওয়ারড চালিত এবং তিনটি জোরাল্ড আর ফোর্ড ক্লাসের ২টি এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার নির্মানাধীন রয়েছে। যা খুব সম্ভবত আগামী ২০২৭ এবং ২০৩৪ সালের দিকে সার্ভিসে আসতে পারে। আর একটি আশ্চর্যের বিষয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০শে মার্চ ১৯২২ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত মোট ৮০টি ছোট, মাঝারী এবং বিশাল আকারের কনভেনশনাল এণ্ড নিউক্লিয়ারড পাওয়ারড এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করে যার মধ্যে অবশ্য ১১টি নির্মানাধীন অবস্থায় পরিত্যাক্ত হয়ে যায় এবং ২টি তৈরির পূর্বেই বাতিল হয়ে যায় এবং সার্ভিস লাইফ টাইম শেষ হয়ে যাওয়ায় মার্কিন নৌবাহিনী আনুমানিক মোট ৫৫টি ক্যারিয়ার অবসরে পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্টের বাহিরে একমাত্র দেশ হিসেবে ফ্রান্স একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সুপার এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার ‘চালর্স দ্যা গল’ ব্যাবহার করে। তাছাড়া বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন রাশিয়ার ১টি, চীনের ২টি, ভারতের ১টি, ইতালীর ২টি, স্পেনের ১টি, থাইল্যাণ্ডের ১টি, ব্রাজিলের ১টি এবং যুক্তরাজ্যের ২টি মাঝারী আকারের এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে এবং তাদের নৌ বহরে সার্ভিসে থাকা শতভাগই ক্যারিয়ার কিন্তু কনভেনশনাল ডিজেল ফুয়েল চালিত এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার।
তবে যুক্তরাজ্য বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫৬টি ছোট এবং মাঝারী আকারের এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করে। যার মধ্যে বর্তমানে ২টি কুইন এলিজাবেথ ক্লাস ক্যারিয়ার সার্ভিসে রয়েছে, ৪১টি অবসরে পাঠিয়েছে এবং ১৩টি ক্যারিয়ার নির্মানাধীন অবস্থায় পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। এদিকে ৪৪ হাজার টন ওজনের ভারতের ১টি নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি কনভেনশনাল পাওয়ারড ‘ভিকারনাথ’ নামক হেভী এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার নির্মানাধীন রয়েছে এবং যা আগামী ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সার্ভিসে চলে আসতে পারে। তাছাড়া চীনের ৮৫ হাজার টন ওজনের আরো ১টি কনভেনশনাল পাওয়ারড নতুন এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার নির্মাধীন রয়েছে। যা চলতি ২০২০ সালের শেষের দিকে সাগরে ভাসানো হতে পারে এবং আগামী ২০২৩ সালের দিকে পিপলস লিবারেশন চাইনিজ নেভাল ফ্লীটে অন্তভুক্ত করা হতে পারে।
১৯২১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জাপান মোট ২৬টি ছোট এবং মাঝারী আকারের এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মোট ১৬টি ক্যারিয়ার মার্কিন নৌবাহিনীর হামলায় ধ্বংস হয়ে ডুবে যায়, ৪টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে অবসরে পাঠিয়ে দেয় এবং ৪টি নির্মানাধীন অবস্থায় পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। তবে জাপানের আবে সরকার বর্তমানে ২টি ইমুজো ক্লাস ডেস্ট্রয়ারকে হাইলী মডিফাইড করে মাঝারী আকারের এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ারে রুপান্তরের ডেভলপমেন্ট অব্যাহত রেখেছে। যাতে ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়কৃত এফ-৩৫বি সিরিজের ভার্টিক্যাল ল্যাণ্ডিং এণ্ড সর্ট টেকঅফ ক্যাপাবিলিটির এডভান্স স্টিলথ জেট ফাইটার মোতায়েন করবে।
তবে রাশিয়ার নৌবাহিনীতে সক্রিয় থাকা একমাত্র ডিজেল চালিত এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার হচ্ছে কুজনেটস্কভ ক্লাস ক্যারিয়ার। যা ১৯৯১ সাল থেকে রাশিয়া ব্যাবহার করে যাচ্ছে। যদিও এটিকে কদাচিৎ সাগরে চলাচল করতে দেখা যায় এবং মাত্র ছয় মাস চলার পর ক্যারিয়ারটিকে আবার মেরামত করতে ডকে ফিরিয়ে আনা হয়। আর রাশিয়ার এই ক্যারিয়ারটিকে রিপিয়ার এণ্ড মেইন্টেনেন্স করতে এর মোতায়েন থাকা অবস্থার সময়ের চেয়েও অধিক সময় লেগে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিয়ারটি ডকে মেরামত চলাকালীন অবস্থায় আগুন লেগে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা আবারো সাগরের বুকে অপারেশনাল সার্ভিস লাইফে ফিরে আসাটা একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে রাশিয়া কিন্তু মার্কিন নৌবহরের সাথে টেক্কা দিতে প্রজেক্ট ১১৪৩০ই এবং ২৩০০০ই এর আওতায় তাদের ভবিষ্যত প্রথম কোন দুটি নিউক্লিয়ারড পাওয়ারড সুপার এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টন ওজনের এই নতুন প্রজন্মের সুপার ক্যারিয়ার ৯০টি পর্যন্ত যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার বহণ করতে পারবে এবং সব ঠিক থাকলে আগামী ২০৩০ সালের দিকে এই দুটি সুপার এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার সার্ভিসে আনতে পারে রাশিয়া।