ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অদূর ভবিষ্যতে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি ও পশ্চিমা বিশ্বকে মোকাবেলায় রাশিয়া এবার তার অত্যন্ত ভয়ংকর অস্ত্র আরএস-২৮ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল নিউক ওয়ারহেডসহ কমব্যাট টু রেডি মুডে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় মোতায়েন করেছে। যদিও ঠিক কতটি ইউনিট এই জাতীয় নিউক মিসাইল মোতায়েন করা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এদিকে দেশটির স্ট্যাটিজিক ফোর্সেস ইউনিটকে সর্বোচ্চ পারমাণবিক যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মনে করা হয় যে, ১৯৬৩ সালে কিউবা মিসাইল সংকটের পর বর্তমানে সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার ওয়ারের এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর লাগতার ড্রোন হামলা ও পশ্চিমা বিশ্বের পক্সি ওয়ারের মোকাবিলায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তর ও সরকারের তরফে এখন আগাম নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলার ঘোষণা দেয়া হয়। যা এখন কিনা সারা বিশ্বে এক নজিরবিহীন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এদিকে আরএস-২৮ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক (সারমাত) মিসাইল মোতায়েন করা নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এরপর রাশিয়ার শত্রুরা মস্কোকে হুমকি দেওয়ার আগে অন্তত ‘দুইবার চিন্তা’ করবে।
যদিও আমেরিকার প্রতিরক্ষ দপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিন্তু ভিন্ন কিছু কথা বলছে। তাদের মতে, রাশিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র ও (আইসিবিএম) মিসাইলের সক্ষমতা নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করছে। এমনকি রাশিয়ার তরফে আরএস-২৮ আইসিবিএম মিসাইলের ওয়ারহেডের সংখ্যা ১৫টি জানানো হলেও আমেরিকার মনে করে তা ১০টির উর্ধ্বে নয় এবং এর ১৮ হাজার রেঞ্জ নিয়েও প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে রাশিয়া। বিশেষ করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা রাশিয়ার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রুখে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সারা বিশ্বের নজর ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেই বার বার আগাম নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলার বিষয়টি প্রচার করছে।
বর্তমানে রাশিয়ার স্ট্র্যাটিজিক রকেট ফোর্সেস ইউনিটের হাতে থাকা সভিয়েত আমলের পুরনো কথিত ১৬ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের আরএস-৩৬ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) এর রিপ্লেস হিসেবে আর এস-২৮ সারমাত (শয়তান-২) মিসাইল পর্যায়ক্রমে সার্ভিসে আনতে বদ্ধপরিকর রাশিয়া। রাশিয়া ২০০৯ সাল থেকে এই মিসাইল নিয়ে গবেষণা ও ডেভলপমেন্ট শুরু করে। তাদের ভাষায় এটি একটি অপরাজেয় অস্ত্র এবং এটিকে প্রতিহত করা এক কথায় অসম্ভব বলা চলে।
রাশিয়ার সামরিক প্রযুক্তিবিদদের ভাষ্যমতে, ১০ টন ওজনের ওয়ারহেড সমৃদ্ধ আরএস-২৮ সারমাত এমআইআরভি ওয়ারহেড দিয়ে বিশ্বের যে কোন স্থানেই কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভয়াবহ পারমাণবিক হামলা করা সম্ভব। তবে রাশিয়ার এহেন কৌশলগত নিউক এ্যাটাকের আগাম ঘোষণাকে আমলে নিয়ে এক রকম নিরবেই আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স কিন্তু সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে তাদের অস্ত্র ভান্ডারে থাকা নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র ইতোমধ্যেই গোপন কোন সামরিক বেসে, হেভি স্ট্যাটিজিক বোম্বার বা মহাসাগরের বুকে নিউক সাবমেরিনে মোতায়েন সম্পন্ন করে রেখেছে। তাই রাশিয়া নিউক্লিয়ার অস্ত্র অন্য কোন দেশের উপর হামলা চালিয়ে বসলে তাতে গেম অভার হয়ে যাবে তা আশা করার কোন সুযোগ থাকে না। আর নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে অন্যান্য দেশ মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রাশিয়ার জন্য কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।
তবে হতাশাজনক হলেও সত্য যে, সারা বিশ্বের মাত্র ৯টি দেশের হাতে প্রায় ১৩ হাজারের কাছাকাছি বিপুল পরিমাণ প্রাণঘাতী নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র রয়েছে। আর তা দিয়ে কিনা আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে কমপক্ষে কয়েশ বার ধ্বংস করা যাবে। অথচ মানুষের তৈরি যে প্রযুক্তি মানব কল্যানে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল আজ কিনা তা দিয়ে মানব জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার রণ হুংকার দেয়া হচ্ছে। যা থেকে ফিরে আসার আপাতত কোন পথ খোলা রয়েছে বলে মনে হয় না।
সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com