দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ যাবত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উৎপাদিত একক কোন যুদ্ধবিমান হচ্ছে সাবেক সভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি মিগ-২১ জেট ফাইটার (ন্যাটো রির্পোটেড কোড নেমঃ ফিসব্যাট)।
মুলত সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৯ সাল থেকে ৮০ দশকের শেষ পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৫০০টি মিগ-২১ জেট ফাইটার তৈরি করে এবং এটি হচ্ছে তাদের এভিয়েশন ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এবং বহুল ব্যহহৃত একটি জেট ফাইটার। ১৯৬৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মিগ-২১ এর কনফার্ম এয়ার টু এয়ার কিলিং রেকর্ড প্রায় ১৫০ থেকে ২০০টি। সোভিয়েত নির্মিত মিগ-২১ জেট ফাইটারের সবচেয়ে সফল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় দীর্ঘ মেয়াদী ভিয়েতনাম যুদ্ধে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন বিমান বাহিনীর মোট প্রায় ১০০টি জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার ও বোম্বার ধ্বংস করে মিগ-২১ জেট ফাইটার। তাছাড়া আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের বিমান বাহিনীর মিগ-২১ প্রায় ডজন খানেক পাকিস্তানী হানাদার বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে বিরল রেকর্ডের সৃষ্টি করে। এদিকে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধেও ইসরায়েলী বিমানবাহিনীর ফরাসি মিরেজ ও মার্কিন যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে মিশরীয় আর সিরীয় বিমান বাহিনী ব্যাপকভাবে সভিয়েত নির্মিত মিগ-২১ ব্যবহার করেছিল। আরব পাইলটরা মিগ-২১ দিয়ে বেশ কিছু সফলতা অর্জন করলেও শেষ পর্যন্ত আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমাঙ্গুলো ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে। আবার ১৯৮০-৮৮ সালে চলা ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ইরানি এফ-১৪ টমক্যাটের বিরুদ্ধেও মিগ-২১ ব্যবহার করেছিল ইরাকের সাদ্দাম বিমান বাহিনী।
তবে বড় ধরনের এই তিনটি যুদ্ধ ছাড়াও ইথিওপিয়া-সোমালিয়া যুদ্ধ, যুগোস্লাভিয়া এবং অ্যাঙ্গোলার গৃহযুদ্ধসহ অনেকগুলো লড়াইয়ে মিগ-২১ তার চূড়ান্ত সফলতা প্রদর্শন করে। বর্তমানে চলমান সিরিয়া এবং লিবিয়ার গৃহযুদ্ধেও মিগ-২১ জেট ফাইটার ব্যবহার করে যাচ্ছে, যদিও বিমানগুলো মূলত ভূমিতে হামলার জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সভিয়েত ইউনিয়ন ১১ হাজারের অধিক মিগ-২১ জেট ফাইটার তৈরি করলেও আকাশ যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজারের কাছাকাছি মিগ-২১ আকাশ যুদ্ধে বা ম্যানপ্যাড মিসাইল কিংবা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা ভূপাতিত হয়েছে। তাছাড়া কারিগরি ত্রুটি এবং সমস্যার কারণে আরো হাজারের কাছাকাছি মিগ-২১ আকাশে উড্ডয়নরত অবস্থায় ধ্বংস হয় কিংবা ক্রাস ল্যাণ্ডিং করে।
সিরাজুর রহমান