বাংলার সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ইতিহাসে প্রথম বারের মত এন্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল নিজেদের সমরাস্ত্রে যুক্ত করেছে।
প্রাথমিক ভাবে ইউক্রেন থেকে ১৪ টি লঞ্চার এবং অজানা সংখ্যক মিসাইল কেনা হচ্ছে যা খুব শীগ্রই সরবরাহ করা হবে। প্রথমে অনেকেই ধারনা করেছিল সম্ভবত চায়না থেকে বিজিবির জন্য এটিজিএম সিস্টেম কেনা হবে সেক্ষেত্রে অপশন হিসাবে র্যাট-৮ র্যাট-৯ অথবা র্যাট-১২ এর কথা ভাবা হয়েছিল।
ইউক্রেন থেকে এটিজিএম কেনা নিয়ে অনেকের মনেও প্রশ্ন ছিল কেন চীন থেকে কেনা হল না। কিন্তু এখানে একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যেহেতু বিজিবি একটি আধা-সামরিক বাহিনী তাই তাদের কে অস্ত্র প্রদানের ক্ষেত্রে সেই ধরনের অস্ত্র কেই প্রাধান্য দেয়া হয় যা একই সাথে দামে সহজলভ্য, রক্ষণশীল, এবং সেই সাথে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এবং সহজে স্থানান্তর যোগ্য যেহেতু বিজিবি কে সিমান্তে কাজ করতে হবে তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ধরনের অস্ত্র কে দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে হতে পারে আর তার জন্য CORSAR একদম উপযুক্ত একটি অস্ত্র ব্যবস্থা।
কি আছে এই আধুনিক এই অস্ত্র ব্যবস্থায়?
লেজার গাইডেড ব্যবহার করা এই মিসাইল সিস্টেম টি নিজের টার্গেট কে হিট করতে মুলত লেজার বীম টেক্নোলজি ব্যবহার করে। মিসাইল পডে যুক্ত থাকা টার্গেটিং সাইট এর মাধ্যমে টার্গেট এর একটি ছবি প্রস্তুত করা হয় যা মিসাইলে থাকা সেন্সর পাঠানো হয় অন্যদিকে মিসাইলে থাকা রোবটিক লেজার বীম সেই মেমরি তে থাকা সেই ইমেজের সাথে মিল থাকা টার্গেটের উপর লেজার বীম সেট করে তাই টার্গেট যেদিকেই মুভ করবে মিসাইল সেদিকেই দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম। এই টেক্নোলজি এতটাই ফাস্ট যে টার্গেট যত দ্রুতই মুভ করুক না কেন এই বীম তাকে নিক্ষুত ভাবে তার নিশানায় রেখে দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম।
এই টেক্নলজির ব্যবহার এর ক্ষেত্রে অন্য যে জিনিস টির সাহায্য দরকার তার হল টার্গেটিং সিস্টেম। এই মিসাইল এর টার্গেটিং সিস্টেম হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রীসের তৈরী থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা যা দিনে ২.৫ কিমি এবং রাতে ১.৭ কিমি পর্যন্ত দূরত্বে টার্গেট কে খুজে বের করে লক করতে সক্ষম। তা ছাড়া এতে অপশনাল হিসাবে নাইট ভিশন ক্যামেরা যুক্ত করা যায় যা রাতে এর কার্যকারীতা বাড়িয়ে দেয়।
সর্বশেষ এর মিসাইল সিস্টেম:
CORSAR এন্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল সিস্টেম মুলত দুই ধরনের মিসাইল ব্যবহার করে থাকে। এর ১০৫মি.মি. ক্যলিবার লঞ্চার এ এটি থার্মোবেটিক টেনডম ওয়াহেড এবং ফ্রাগমেন্টশন ব্লাস ওয়ারহেড ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এর টেনডম ওয়ারহেড যা মুলত এন্টি ট্যাংক রোলে ব্যবহার করা হয় তা ৫৫০মি.মি. পর্যন্ত ওয়েল্ড স্টীল আর্মর ভেদ করতে সক্ষম। এন্টি ট্যাংকে রোলে এই ওয়ারহেড কে দুইটি অংশে ভাগ করে তৈরি করা হয়েছে যার প্রথম অংশ টি ট্যাংকের কাছাকাছি এসেই ব্লাস হয় এবং ট্যাংকের এ থাকা হার্ড কিল প্রটেকশন সিস্টেম যেমন ERA অথবা ফ্রেগমেন্টেশন শেল কে প্রতিহত করে এবং ২য় বা মুল ওয়ারহেড টি ট্যাংকের মুল আর্মর কে আঘাত করে। অন্যদিকে এটির ব্লাস ফ্রেগমেন্ট শেল টি ৫০মি.মি. পর্যন্ত স্টীল অথবা সিমেন্ট এর দেয়াল ভেদ করতে সক্ষম যা মুলত বাংকার, স্থাপনা, লাইট ইউলিটি ভেহিকল, সামরিক ক্যাম্প সাইট, ইউটিলিটি হাই স্পিড বোট ধ্বংস করতে সক্ষম। উভয় ক্ষেত্রেই মিসাইলের ওজন ১৫.৫ কেজি এবং লঞ্চার সহ এর ওজন দাঁড়ায় ১৮ কেজির কিছু বেশি যা সহজেই একজন সৈনিক এর ক্ষেত্রে বহন সক্ষম। স্টান্ডার্ড লোডে একজন সৈনিক ২ টি মিসাইল আর একটি লঞ্চার সিস্টেম বহন করতে সক্ষম। লেজার গাইডেন্স ব্যবহার করায় এটি নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া ছোট হেলিকপ্টার কিংবা ড্রোন বিমান কেউ আঘাত হানতে পারে।
এই সিস্টেম টি প্রতি ৪-৫ সেকেন্ডে একটি মিসাইল ফায়ার করতে সক্ষম এবং টানা ১৩ রাউন্ড ফায়ার করতে সক্ষম। যেহেতু মিসাইল টি লেজার গাইডেন্স ব্যবহার করে তাই মিসাইল কে আলাদা ভাবে গাইড করার প্রয়োজন নেই। মিসাইল লঞ্চের পর অপারেটর দ্রুত স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম।
নিঃসন্দেহে এটি বিজিবির সক্ষমতা অনেকটা বাড়িয়ে দিবে। এছাড়াও বিজিবি তে খুব শীগ্রই দেশে তৈরি কিছু লাইট প্রেট্রল বোট যুক্ত হতে যাচ্ছে এর পাশাপাশি রাশিয়া থেকে হেলিকপ্টারও এই মাসেই যুক্ত হচ্ছে।