এভিয়েশন টেকনলোজি এণ্ড ডেভলপমেন্টে রেড জায়ান্ট চায়না এখনো পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া কিম্বা ফ্রান্সের মতো ব্যাপক মাত্রায় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা লাভ না করলেও তারা কিন্তু বেশ দ্রুতই মাল্টিরোল স্ট্রাইক এবং নজরদারি স্পাই (ইউএভি) বা ড্রোনের প্রধান রফতানিকারক দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীন কিন্তু একাই বিশ্বের ১৩টি দেশের কাছে মোট ১৮১টি তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন বা (ইউএভি) রপ্তানি করে। যেখানে কিনা ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে খুব সম্ভবত ১ হাজারের অধিক কমব্যাট এণ্ড স্পাই ড্রোনের ব্যাপক বানিজ্য হয়েছে। যদিও অবশ্য বিগত কয়েক বছরে চীনের তৈরি উচ্চ প্রযুক্তির বেশ কিছু নজরদারি কিংবা কমব্যাট ড্রোন কোন রকম পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই উড্ডয়নরত অবস্থায় নিজে নিজেই ধ্বংস বা ক্রাস হয়ে গেছে।
তবে বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক ড্রোন রপ্তানি বানিজ্যের সবচেয়ে বড় স্থানটি দখল করে রেখেছে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৯২টি ড্রোন রপ্তানি করেছিল। তাছাড়া চলতি ২০২০ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে ইরাকে অবস্থান করা ইরানের বিপ্লবী জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে তাদের উচ্চ প্রযুক্তির এমকিউ-৯ রিপার এট্যাক ড্রোনের মিসাইল হীটের মাধ্যমে হত্যা করে। এখানে মার্কিন রিপার ড্রোনটি অনেক দূর থেকেই একেবারে বেছে বেছে অসংখ্য গাড়ির মধ্য থেকে ঠিক সুনিদিষ্ট সোলাইমানীর গাড়িটিকে চিহ্নিত করে এবং মিসাইল হীট করে বসে। আর সোলাইমানিকে হত্যার এই গোপন মিশনটি অপারেশনটি সিআইএ তদারকি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও মার্কিন বিমান বাহিনীর পাইলটরা যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডায় থাকা ক্রিচ এয়ার ফোর্স ঘাঁটি থেকে এমকিউ-৯ কমব্যাট ড্রোনটি পরিচালনা করেছিল। এ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন এবং ড্রোন (ইউএভি) প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং মান নিয়ে প্রশ্নের কোন অবকাশ থাকে না।
তবে অবাক করার মতো একটি বিষয় হলো যে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী ছোট্ট দেশ ইসরাইল কিন্তু একাই এই এক দশকে ২৬৫টি ড্রোন বা (ইউভিএ) বিশ্ব অস্ত্র বাজারে বিক্রি করে এক নজির সৃষ্টি করে রেখেছে। আর ড্রোন প্রযুক্তির আঁতুড়ঘর হিসেবে কিন্তু ইসরাইলকেই বিবেচনা করা হয়। এদিকে আবার ভারত কিন্তু ইসরাইলের কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার এবং তার এ মুহুর্তে ৫০টি এর অধিক ইসরাইলী ড্রোন ব্যবহার করে। তাছাড়া ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ এণ্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি বেশ কিছু ড্রোন সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে এবং ইসরাইলের সহায়তায় নতুন প্রজন্মের (ইউএভি) ডেভলপমেন্টে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে সৌদি আরব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনুমানিক শতাধিক কমব্যাট ও স্পাই ড্রোন আমদানিতে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে প্রধান ক্রেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক সুপার পাওয়ার রাশিয়া আগে থেকে ড্রোন ইঞ্জিয়ারিং এণ্ড ডেভলপমেন্টে বিশেষ তেমন কোন নজর না দেওয়ায় এই সেক্টরে এখনো পর্যন্ত নিজের যোগ্য স্থান করে নিতে পারেনি। তবে অনেক দেরিতে হলেও রাশিয়া তার কৌশল পরিবর্তন করে কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট কিংবা স্পাই ড্রোন (ইউএভি) ইঞ্জিয়ারিং এণ্ড ডেভলপমেন্টে ব্যাপক বিনিয়োগ শুরু করে দিয়েছে। তবে শত প্রতিকূলতা এবং আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও ইরান কিন্তু হালকা আকারের সুসাইড ড্রোন ডেভলপমেন্টে বেশ বড় ধরণের সাফল্য অর্জন করছে বলেই প্রতিয়মান হয়। বিশেষ করে ২০১৯ সালের দিকে সৌদি আরবের তিন স্তর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কে ফাঁকি দিয়ে একেবারেই সরাসরি সৌদি আরমাকোর দুটি ওয়েল ফ্যাসালিটিতে সুসাইড ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইল হামলার মাধম্যে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে বসে। এই সুসাইড ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করে ইয়েমেনের হুথী বিদ্রোহীরা বিবৃতি দিলেও এটি ইরানের সরবরাহকৃ ড্রোন বলে মিডিয়াতে এক রকম প্রকাশ্যেই চিৎকার করতে থাকে সৌদি আরব এবং তার মার্কিন জোট। তাছাড়া মনে করা হয়, ইরানের প্রযুক্তিগত সহায়তা কিংবা গোপনে সরবরাহকৃ ড্রোন ও ব্যালেস্টিক মিসাইল ব্যাবহার করে ইয়েমেনের হুথী বিদ্রোহীরা প্রতি নিয়ত সৌদি আরবের একাধিক সামরিক স্থাপনা ও বিমান বন্দরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তছাড়া ২০১৯ সালে ইরানের সামরিক বাহিনীর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম খোরদার-৩ দিয়ে ইরানের আকাশ সীমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০৩ মিলিয়ন ডলারের স্টিলথ প্রযুক্তির ড্রোন গ্লোবাল হক আকাশেই শুট ডাউন বা ধ্বংস করলে সারা বিশ্বে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এদিকে আবার অতি সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং চীনের পাশাপাশি তুরস্ক কিন্তু কমব্যাট ড্রোন টেকনোলজি এবং ইঞ্জিয়ারিং এ তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে কোন রকম অতি প্রচারণা না চালিয়েই বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। বিশেষ করে তুরস্ক তার নিজস্ব প্রযুক্তির কমব্যাট ড্রোন আনকা-এস এবং বায়রাক্তার টিবি-২ ড্রোন ব্যবহার করে সিরিয়ায় থাকা রাশিয়ার উচ্চ প্রযুক্তির পান্তাসির এবং বাক-৩ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে এক নিমেষেই ধ্বংস করে এবং সিরিয়ার আসাদ বাহিনীর উপর ব্যাপক মাত্রায় আক্রমন চালিয়ে এক নতুন মাত্রায় শক্তির পরিচয় দিয়েছে। তবে সিরিয়ার ইবদিলে চলা এই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে আসাদ বাহিনী তার ম্যানপ্যাড রাশিয়ান এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যাবহার করে বেশ কিছু তুর্কী ড্রোন ও মিসাইল শুট ডাউন করে। তাছাড়া দামের কথা আসলে বলতে হয় যে, মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার এ্যাটাক ড্রোনের বাজার মূল্য আনুমানিক ২০-২২ মিলিয়ন ডলার, ইসরাইলের সুপার হিরোন ড্রোনের দাম ১৫ মিলিয়ন ডলারের, চাইনিজ সিএইচ-৫ রেইনবো ডোনের বাজার মূল্য আনুমানিক ৮-১০ মিলিয়ন ডলার এবং তুর্কীর ড্রোনের দাম ১০-১২ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment